একটা সময় মানুষের মহাকাশ ভ্রমণের চিন্তাকে নিছকই অবাস্তব কল্পনা বলে মনে করা হতো। সময়ের প্রয়োজনে শতাব্দীর পর শতাব্দী একদল অনুসন্ধিৎসু ও দুঃসাহ...

চন্দ্র বিজয়ের ৪১ বছর চাঁদের বুকে মানুষ

9:47:00 PM Mainuddin 0 Comments

একটা সময় মানুষের মহাকাশ ভ্রমণের চিন্তাকে নিছকই অবাস্তব কল্পনা বলে মনে করা হতো। সময়ের প্রয়োজনে শতাব্দীর পর শতাব্দী একদল অনুসন্ধিৎসু ও দুঃসাহসী মানুষের নিরলস প্রচেষ্টার ফলে মানুষ জয় করেছে অজেয়কে মানুষের পদচারণা আজ দুর্গম গিরি, সমুদ্র, পর্বত অতিক্রম করে মহাকাশের সুবিশাল ক্ষেত্রেও পেঁৗছে গেছে। মানুষ ছুটে চলছে গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে। সব অজেয়কে জয় করে এঁকে দিচ্ছে মানব সভ্যতার পাদটীকা, উত্তোলন করেছে বিজয় পতাকা। সেই ধারাবাহিকতায় মানুষ জয় করেছে মহাকাশ। চাঁদের বুকে এঁকে দিয়েছে মানুষের পদচিহ্ন।


যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি জনগণকে কথা দিয়েছিলেন ১৯৬০ এর দশকের মধ্যে তার দেশ চন্দ্র বিজয় করবে। মহাকাশ গবেষণায় তখন রাশিয়ানরা আমেরিকানদের তুলনায় অনেক এগিয়ে। তারপরও কেনেডির এই ঘোষণা দুই দেশের স্নায়ুযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করে। নাসা শুরু করে একের পর এক পরীক্ষা। তারই ধারাবাহিকতায় অ্যাপোলো-১০ নামক একটি মহাকাশযান প্রেরণ করা হয় ১৯৬৯ সালের ২৬ মে। কিন্তু এটি সফল হতে পারেনি।


দমে যায়নি নাসা। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই আবারো অ্যাপেলো-১১ নামক আরেকটি মহাকাশযান চাঁদের উদ্দেশ্যে কেনেডি স্পেস সেন্টার যাত্রা শুরু করে। কে জানত এই অ্যাপোলো-১১ ইতিহাস হতে যাচ্ছে? এই অভিযাত্রায় সঙ্গী হন ৩ নভোচারী। তারা হলেন কমান্ডার নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স এবং এডউইন অলড্রিন।


অ্যাপোলো-১১ এর দুটি অংশ ছিল। একটি কমান্ড মডিউল, যার নাম রাখা হয়েছিল কলাম্বিয়া। এই নামটি জুল ভার্নের বিখ্যাত কল্পকাহিনী 'ফ্রম দি আর্থ টু দি মুন' থেকে নেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে লুনার মডিউল, যার নাম ছিল ঈগল। কমান্ড মডিউল কলম্বিয়ার পাইলট ছিলেন মাইকেল কলিন্স এবং লুনার মডিউল ঈগলের পাইলট ছিলেন এডউইন অলড্রিন।


১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই কমান্ডার নীল আর্মস্ট্রংয়ের নেতৃত্বে লুনার মডিউল পাইলট এডউইন অলড্রিন এবং কমান্ড মডিউল পাইলট মাইকেল কলিন্স যখন চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। তখন স্থানীয় সময় ঠিক সকাল ৯টা বেজে ৩২ মিনিট। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের চারপাশে তখন হাজার হাজার উৎসাহী মানুষের ভিড়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই রকেট পৃথিবীর কক্ষপথে পেঁৗছে গেল। ততক্ষণে কেটেছে মাত্র ১২ মিনিট। এরপরই শুরু হলো মূল অভিযান, চাঁদের অভিমুখে যাত্রা। চারদিকে নিকষ কালো অন্ধকার ভেদ করে রকেট ছুটে চলল চাঁদের দিকে। এমন এক পথে তারা চলেছেন, যে যেতে যেতে হাঁপিয়ে উঠলে বিশ্রামের কোনো সুযোগ নেই। কারণ বাইরে তখন বিশাল শূন্যতা। বেঁচে থাকার জন্য এক ফোঁটা বাতাসও নেই। রকেট ছেড়ে বেরুতে গেলেই নিশ্চিত মৃত্যু।


দীর্ঘ যাত্রা শেষে ১৯ জুলাই অ্যাপোলো-১১ চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করল। এই চন্দ্রযানের দুটি অংশ ছিল। প্রথম অংশ কমান্ড মডিউল, যা চাঁদের কক্ষপথে ছিল কিন্তু চাঁদের মাটিতে নামেনি। অপর অংশ লুনার মডিউল, যা চাঁদের মাটিতে নেমেছিল।


২০ জুলাই লুনার মডিউল ঈগল কলম্বিয়া থেকে পৃথক হয়ে নীল আর্মস্ট্রং এবং এডুইন অলড্রিনকে নিয়ে চাঁদের দিকে রওনা করে। কমান্ড মডিউল কলম্বিয়ায় থেকে যান মাইকেল কলিন্স। ঈগলের নেভিগেশন ও গাইডেন্স কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে ঈগলকে চাঁদে অবতরণ করানর দায়িত্বে ছিল। অবতরণ করার কিছুক্ষণ আগে অ্যাপোলো-১১ অধিনায়ক আর্মস্ট্রং ঈগলের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখেন কম্পিউটার তাদের এক বিশাল মৃত আগ্নেয়গিরির দিকে নিয়ে যাচ্ছে যার চারদিকে বড় বড় শিলাখণ্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।


অবস্থা বেগতিক দেখে আর্মস্ট্রং কম্পিউটার থেকে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে ঈগলকে ম্যানুয়ালি চালাতে শুরু করেন। আস্তে আস্তে এগুতে থাকে স্বপ্ন সফল করার চূড়ান্ত প্রান্তে।


১৯৬৯ সালের ঠিক আজকের দিন। ২০ জুলাই। মানব সভ্যতার ইতিহাসে চিরস্মরণীয় একটি দিন। গোটা বিশ্ব সেদিন ভীষণ এক উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করছিল একটা বিশেষ মুহূর্তের। মানব জাতির ইতিহাসে সেটি একটি চিরস্মরণীয় মুহূর্ত। অবশেষে উপস্থিত হলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আমেরিকার স্থানীয় সময় রাত ১০টা ৫৬ মিনিটে ঈগল থেকে প্রথমে চাঁদের বুকে পা রাখেন মিশন অধিনায়ক নীল আর্মস্ট্রং। চাঁদে নেমেই আর্মস্ট্রং তো অবাক। চারদিকের সারি সারি পাথর আর বড় বড় গর্ত । চাঁদের বুক থেকে আর্মস্ট্রং বিভিন্ন রকম শিলা সংগ্রহ করলেন, অসংখ্য ছবি তুললেন, স্থাপন করলেন আমেরিকার পতাকা। আর্মস্ট্রং চাঁদে নামার সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর অলড্রিনও নেমে আসেন। তিনিও ছবি তোলা, শিলা লা। অলড্রিনই প্রথম ঈগলে প্রবেশ করেন, তাকে অনুসরণ করেন আর্মস্ট্রং। তবে ঈগলে ওঠার আগে দু'জনেই দুই ব্যাগে করে নিয়ে নেন সাড়ে একুশ কেজি ধুলো-বালি পাথর ইত্যাদি। তবে তারা চাঁদ থেকে শুধু নিয়েই আসেননি, দিয়েও এসেছেন। তার মধ্যে রয়েছে কিছু বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আমেরিকার পতাকা, পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের মানচিত্র, একটি সিলিকন মেসেজ ডিস্ক যার মধ্যে রেকর্ড করা আছে পৃথিবীর ৭৩টি দেশের প্রধানসহ আমেরিকার কয়েক প্রেসিডেন্টের বাণী।


মর্ত্যের মানুষ আর্মস্ট্রং প্রথমবারের মতো চাঁদের মাটিতে পা রেখে বলেছিলেন_


'এটা (চাঁদে পা রাখা) একজন মানুষের জন্য ছোট্ট একটা পদক্ষেপ হলেও মানব সভ্যতার জন্য অনেক বড় একটা পদক্ষেপ।'

0 comments: