পৃথিবীর বিপর্যয়ের জন্য সূর্যই দায়ী!!!
মেরু অঞ্চলে দিন দিন বরফ গলে যাচ্ছে। কার্বন ডাই-অক্সাইডের প্রকোপে ওজোন স্তর ক্ষয়ে যাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা সূর্য নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে আরো আগেই এর ভেতরে ঘটে যাওয়া ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের কথা বলেছেন। প্রচণ্ড এনার্জি সৃষ্টিকারী এই বিস্ফোরণকে বলে 'সোলার ফ্লেয়ার'। বিস্ফোরণ চলাকালে সূর্যের অভ্যন্তরে প্রতিনিয়ত তৈরি হতে থাকে ম্যাগনেটিক এনার্জি। আর ম্যাগনেটিক এনার্জি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সূর্যের অভ্যন্তরে তৈরি হয় 'সানস্পট'। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, ম্যাগনেটিক এনার্জির সঙ্গে ইলেক্ট্রন, প্রোটনের (চার্জড পার্টিকল বা তড়িৎযুক্ত কণা) মতো যেসব কণা নির্গত হয়, এগুলো পৃথিবীতে ভূমিকম্প, হ্যারিকেন, টর্নেডো বা অগ্ন্যুৎপাতের মতো নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের জন্য দায়ী।
শুধু তাই নয়, রয়েছে আল্ট্রাভায়োলেট এবং এক্স-রের মতো ক্ষতিকর লাইট রেডিয়েশন, যাকে বলা হয় 'সোলার উইন্ড'। কেবল প্রাকৃতিক বিপর্যয় নয়। এর প্রভাব পড়ে জীবজগত এবং মানুষের ওপরও। এ সময় যে অদৃশ্য কম্পন সৃষ্টি হয় তা মানুষের নানা রকম শারীরিক এবং মানসিক সমস্যার জন্য দায়ী বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এক্ষেত্রে অবশ্য পৃথিবীর ভাগ্য ভালো মানতে হবে। কেননা পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড বেশিরভাগ ক্ষতিকর কণাকেই পথভ্রষ্ট করে দেয়। ফলে অপূরণীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা পায় প্রাণী ও প্রকৃতি। পৃথিবীর আবহাওয়ার মতোই সোলার উইন্ডের প্রকৃতি হঠাৎ পাল্টে যায়। জিওফিজিস্টরা একে বলেন, জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম। অনেকে অবশ্য একে ইলেক্ট্রো ম্যাগনেটিক পলিউশনও বলে থাকেন। মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য হলেও এই ঝড় আমাদের ব্রেন ওয়েভ এবং শরীরের হরমোন লেভেলের ওপর প্রভাব সৃষ্টি করে। হরমোন লেভেলের পরিবর্তনের ফলে পুরুষের মধ্যে অনেকেই খিটখিটে ও উদ্যত হয়ে ওঠে। অনেকের মধ্যে আবার আগের চেয়ে বেশি সৃজনশীলতা তৈরি হয়। এই পরিবর্তন কেবল গুটিকয়েক মানুষের মধ্যেই হয়, এমনটি নয়। সানস্পট তৈরি হওয়ার সময় এই জিওম্যাগনেটিক স্টর্মের প্রভাবে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ লাগা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভেদ পর্যন্ত সৃষ্টি হয়। এছাড়াও এই সময় দুর্ঘটনা, অসুখ-বিসুখ, অপরাধ, খুন ইত্যাদিও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যায়। পাশাপাশি এর ফলে অক্সিডেশন অথবা কেমিক্যাল রি-অ্যাকশনের জন্য পেট্রোলিয়াম পাইপলাইনের ক্ষতি, স্যাটেলাইট, ভূপৃষ্ঠের যোগাযোগ ব্যবস্থায় গোলমাল, জাহাজ, এয়ারক্র্যাফটের নেভিগেশনাল সিস্টেমে সমস্যা দেখা দেয়। সূর্যের এই জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম থামানোর ক্ষমতা বিজ্ঞানীদের নেই। তবে এই ঝড়ের আগাম পূর্বাভাস দেওয়ার ক্ষমতা বিজ্ঞানীদের রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্টর্ম সম্পর্কে আগে থেকে সাবধান হয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সূর্যের উপর নিয়ন্ত্রণ আনা আমাদের জন্য এক প্রকার অসম্ভবই। তবুও বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাবধানতা অবলম্বন না করলে হয়তো পৃথিবীর এই বিপর্যয় চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে পৌঁছবে।
0 comments: