কিছু দেশাত্মবোধক গান এর তালিকা
জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা”
আমার সোনার বাংলাআমি তোমায় ভালোবাসি।
চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস
আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে
ঘ্রাণে পাগল করে–
(মরি হায়, হায় রে)
ও মা, অঘ্রাণে তোর ভরা খেতে,
(আমি) কি দেখেছি মধুর হাসি।।
কী শোভা, কী ছায়া গো,
কী স্নেহ, কী মায়া গো–
কী আঁচল বিছায়েছ
বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।।
মা তোর মুখের বাণী
আমার কানে লাগে
সুধার মতো–
(মরি হায়, হায় রে)
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে
আমি নয়ন জলে ভাসি।।
একাত্তরের মুক্তিসেনার যুদ্ধ
তবু মা তোর ধুলোর গন্ধে সংগ্রামের সে স্পর্শ পাই।।
মূহুর্তে তোর গায়ের সবুজ বুড়ে হলেও সূর্য লাল
তিরিশ লক্ষ প্রাণের দামে রক্তে ভেজে তোর কপাল
নির্যাতিতা ফিরছে ঘরে নিখোঁজ তাহার বাপ ও ভাই।।
মাগো যদি জন্ম নিতাম একাত্তরের আগে গো
সন্তানের সে ঋণ শোধাতাম আত্মাহুতির আগে গো
শহীদ হব তোরই বুকে এমন কপাল আমার নাই।।
মা মাগো মা
এই বাংলায় রবীন্দ্রনাথ করেছে বিশ্বজয়এই বাংলায় নজরুল লেখে বিদ্রোহী ডালাময়এই বাংলায় বিদ্যাসাগর যুগের সূচনা
সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’ ইতিহাস রচনা।
এই বাংলায় সালাম রফিক বরকত তোরই ছেলে
ভাষার জন্য বারুদের মুখে এগোয় হেসে খেলে।
সূর্য্য-সন্তানেরা তোরই রত্নগর্ভা তূড়ি
মা মাগো মা…তুই দুঃখ, তুই সুখ,
তুই ধন্য, তুই হাসি, শ্রেষ্ঠতমা প্রিয়মুখ।।
মাগো তোর ছেলে জহির বানালো ‘জীবন থেকে নেয়া’
আলতাফ-গফফর করে গান সময় পালটে দেয়া
তোর মেয়ে ইলা মিত্র রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে
হাতে তুলে নেয় মারণাস্ত্র মুক্তি চেতনা নিয়ে।
‘স্বৈরাচারী, তার দেশ ছাড়ি’ বুকে লেখে নূর হোসেন
রবি শংকর তার বাদনে তোর কথা ভেবে কাঁদে।।
জীবনানন্দ আর সুকান্ত তোর প্রেমে কত লেখে
লতিফের গাওয়া একুশের গান মনে দাগ গেছে রেখে
দুইশ বছর পরাধীনতার ব্যারিকেড ভাঙে যারা
তোরই গর্ভের তোরই স্নেহের সূর্য্য-সন্তানেরা।
রণাঙ্গনে হানাদারকে হটায় মুক্তিসেনা
ব্যারিকেড আর কাঁটাতার তাকে রুখতে তো পারবে না।।
ষোলই ডিসেম্বর
ষোলই ডিসেম্বরতুমি গর্ব আমার, আমার অহঙ্কারসালাম তোমায়, তোমায় নমস্কার।।
সেদিন যখন জ্বলে ওঠে বাঙালী
নিয়ে আপন পরিচয়
মানব দানব তোমার কাছে
প্রাণ ভিক্ষা চায়
তখন আমার মায়ের আঁচল উড়ে আকাশে
এমন ক্ষণ আমি পাই নাগো আর।।
ইতিহাসের যত রুদ্ধ পাতা
পেরিয়ে তোমায় পেলাম
প্রতি পাতায় রক্তে লেখা
শত শহীদের নাম
এলে তুমি আলো হয়ে মোছাতে অন্ধকার
এমন আলো বাধা মানে নাগো আর।।
মোদের গরব মোদের আশা
মোদের গরব, মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা।(মাগো) তোমার কোলে, তোমার বোলে, কতই শান্তি ভালোবাসা।।কি যাদু বাংলা গানে, গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে,
গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা।।
বিদ্যাপতি, চণ্ডী, গোবিন্, হেম, মধু, বঙ্কিম, নবীন-
ঐ ফুলেরই মধুর রসে বাঁধলো সুখে মধুর বাসা।।
বাজিয়ে রবি তোমার বীণে, আনলো মালা জগৎ জিনে।
তোমার চরণ-তীর্থে (মাগো) আজি জগৎ করে যাওয়া-আসা।।
ঐ ভাষাতেই নিতাই গোরা, আনল দেশে ভক্তি-ধারা,
আছে কৈ এমন ভাষা এমন দুঃখ-শ্রান্তি-নাশা।।
ঐ ভাষাতেই প্রথম বোলে, ডাকনু মায়ে ‘মা, মা’ বলে;
ঐ ভাষাতেই বলবো হরি, সাঙ্গ হলে কাঁদা হাসা।।
এই বাংলার মাটিতে
এই বাংলার মাটিতে(মাগো) জন্ম আমায় দিও।এই আকাশ, নদী, পাহাড়
আমার বড় প্রিয়।।
কোথায় বলো এতো স্বপন
হাওয়াতে ভাসে।
কোথায় বলো এতো বকুল
বসন্তে হাসে।
শরৎ আকাশ কোথায় বলো
এমন রমণীয়।।
বার মাসে তের পাবণ
বলো কোথায় আছে।
মেঘের খটা দেখে এমন
ময়ূর কোথায় নাচে।
কোথায় বলো এতো মায়া
ধানের ক্ষেতে দোলে।
কোথায় বলো হাসে শিশু
সুখে মায়ের কোলে।
কোথায় বলো পল্লী বধূ
এমন কোমনীয়।।
হায় রে আমার মন
হায় রে আমার মন মাতানো দেশ,হায় রে আমার সোনা ফলা মাটি।রূপ দেখে তোর কেন আমার নয়ন ভরে না
তোরে এতো ভালোবাসি তবু পরান ভরে না।।
যখন তোর ওই গাঁয়ের ঘরে
ঘুঘু ডাকা নিঝুম কোনো দুপুরে।
হংস মিথুন ভেসে বেড়ায়
শাপলা ফোটা তলতলে ওই পুকুরে।
নয়ন পাখি দিশা হারায়
প্রজাপতির পাখায় হারায়
তাদের কথা মনে ধরে না।।
যখন তোর ওই আকাশ নীলে
পাল তুলে যায়, সাত সাগরের পশরা।
নদীর বুকে হাতছানি দেয়,
লক্ষ ছেলে, মানিক-জ্বালা ইশারা।
হায় রে আমার বুকের মাঝে,
হাজার তারের বীণা বাজে
অবাক চোখে, পলক পড়ে না।।
বাংলাদেশের শিশু মোরা
বাংলাদেশের শিশু মোরা বাংলা ভালোবাসিদেশের ডাকে মরতে পারি, দেশের ডাকে আসি।
সেই তো আমার বাংলাদেশ, আমাদেরই বাংলাদেশ।।
দেশটাকে ভাই গড়তে হলে করতে হবে আগে,
শিক্ষা শুধু জীবন গড়ে, শিক্ষাতে প্রাণ যাবে।
তাই তো রে ভাই সবাই মিলে পাঠশালাতে আসি।।
সত্য ন্যায়ের গড়তে জীবন শিক্ষাই হোক হাতিয়ার
ধন্য সেই জন এই ভুবনে শিক্ষা আছে যার।
সবার প্রাণে বাজবে এ গান যদি দেশকে ভালোবাসি।।
কেউবা বলে ধানের দেশ
কেউবা বলে ধানের দেশকেউবা বলে গানের দেশ
আমরা বলি প্রাণের দেশ…বাংলাদেশ।
লক্ষ কোটি প্রাণের দেশ…বাংলাদেশ।।
বাংলাদেশকে ভালোবেসে
আমাদেরই ভাই-বোনেরা
প্রাণ দিয়েছে হেসে হেসে
সেই লক্ষ জীবন দানের দেশ…বাংলাদেশ।।
সেই শহীদের স্মৃতি ঘেরা
আমাদেরই দেশটা হবে
সকল দেশের চেয়ে সেরা
সেই নতুন আহবানের দেশ…বাংলাদেশ।।
জন্ম আমার বাংলাদেশে
জন্ম আমার বাংলাদেশেএই তো আমার গর্ব।মরতে যদি হয় আমাকে
দেশের জন্য মরব।।
একাত্তরে প্রাণ দিয়েছে
আমার মা-বোন-ভাই,
রক্তেরই দাম দিতে মোরা
শপথ নিলাম তাই।
আসুক না আজ শত বাধা
জান দিয়ে ভাই লড়ব।।
এই দেশেরই শ্যামল সুধায়
জুড়ায় আমার প্রাণ,
উদাস করে দেয় আমাকে
রাখালীয়ার গান।
শপথ নিলাম সবাই মিলে
সোনারই দেশ গড়ব।।
বঙ্গ আমার জননী
বঙ্গ আমার জননী আমারভাতৃ আমার, আমার দেশ
কেন গো মা তোর শুষ্ক নয়ন?
কেন গো মা তোর রুক্ষ কেশ?
কেন গো মা তোর ধূলায় আসন?
কেন গো মা তোর মলিন বেশ?
শত কোটি সন্তান যার
ডাকে উপচে আমার দেশ।
কিসের দুঃখ, কিসের দৈন্য,
কিসের লজ্জা, কিসের ক্লেশ?
শত কোটি মিলিত কন্ঠে
ডাকে যখন আমার দেশ।।
উদিল যেখানে বৌদ্ধ আত্মা
মুক্ত করিতে মোক্ষ দ্বার,
আজিও জুড়িয়া অর্ধ জগৎ
ভক্তি প্রণতঃ চরণে যার।
অশোক যাহার কীর্তি ছায়িল
গান্ধার হতে জলধি শেষ
তুই কিনা মা গো তাদের জননী?
তুই কিনা মা গো তাদের দেশ।।
যদিও মা তোর দিব্য আলোকে
ঘিরে আছে আজ আঁধার ঘোর
কেটে যাবে মেঘ নবীন গরিমা
মাতিবে আবার ললাটে তোর।
আমরা ঘুচাবো মা তোর কালিমা
মানুষ আমরা, নহি তো মেষ
দেবী আমার, সাধনা আমার
স্বর্গ আমার, আমার দেশ।।
রাঙা মাটির রঙে
রাঙা মাটির রঙে চোখ জুড়ালোসাম্পান মাঝির গানে মন ভরালোরুপের মধু সুরের যাদু কোন সে দেশে
মায়াবতী মধুমতি বাংলাদেশে।।
ও সেই রোদের আলো শিশির ছুঁয়ে
এ কোন খুশির কথা যায় শুনিয়ে
একটু দোলা দিয়ে এই বাতাসে
মগ্ন করে রাখে কার আবেশে
রুপের মধু সুরের যাদু কোন সে দেশে
মায়াবতী মধুমতি বাংলাদেশে।।
ও সেই ফুলের হাসি মাঠের বুকে
সবুজ আশায় কেন পরান মাখে
একটু অনুরাগে লাল পলাশে
অন্ধ করে রাখে কার পরশে
রুপের মধু সুরের যাদু কোন সে দেশে
মায়াবতী মধুমতি বাংলাদেশে।।
বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ
বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ,বাংলার খ্রীষ্টান, বাংলার মুসলমান,
আমরা সবাই বাঙালী ।।
তিতুমীর, ঈসা খাঁ, সিরাজ
সন্তান এই বাংলাদেশের।
ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, নেতাজী
সন্তান এই বাংলাদেশের।
এই বাংলার কথা বলতে গিয়ে
বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে দিল কার সে কন্ঠস্বর,
মুজিবর, সে যে মুজিবর,
‘জয় বাংলা’ বল রে ভাই।।
ছয়টি ছেলে বাংলাভাষার চরণে দিল প্রাণ,
তাঁরা বলে গেল ভাষাই ধর্ম,
ভাষাই মোদের মান।
মাইকেল, বিশ্বকবি, নজরুল
সন্তান এই বাংলাদেশের।
কায়কোবাদ, বিবেকানন্দ, অরবিন্দ
সন্তান এই বাংলাদেশের।
এই বাংলার কথা বলতে গিয়ে
বিশ্বটাকে কাঁপিয়ে দিল কার সে কন্ঠস্বর,
মুজিবর, সে যে মুজিবর,
‘জয় বাংলা’ বল রে ভাই।।
আমায় গেঁথে দাওনা
আমায় গেঁথে দাওনা মাগোএকটা পলাশ ফুলের মালা
আমি জনম জনম রাখব ধরে
ভাই হারানোর জ্বালা।।
আসি বলে আমায় ফেলে
সেই যে গেল ভাই
তিন ভুবনের কোথায় গেলে
ভাইয়ের দেখা পাই
দেবো তারই সমাধিতে আমি
তোমার হাতের মালা।।
তারই শোকে কোকিল ডাকে
ফোটে বনের ফুল
ফুল পাবনের মধুর তিথি
কেঁদে হয় আকুল
আজও তারই স্মরণ করে সবাই
সাজাই ফুলের ডালা।।
রক্ত দিয়ে নাম
রক্ত দিয়ে নাম লিখেছিবাংলাদেশের নাম।
মুক্তি ছাড়া তুচ্ছ মোদের
এই জীবনের দাম।।
সংকটে আর সংঘাতে
আমরা চলি সব একসাথে।
জীবন মরণ করে সব
লড়ছি অবিরাম।।
রক্ত যখন দিয়েছি আরও রক্ত দেব,
রক্তের প্রতিশোধ মোরা নেবই নেব,
ঘরে ঘরে আজ দূর্গ গড়েছি
বাংলার সন্তান,
সইবো না মোরা, সইবো না আর
জীবনের অপমান।।
জীবন জয়ের গৌরবে,
নতুন দিনের সৌরভে
মুক্ত স্বাধীন জীবন গড়া
মোদের মনস্কাম।।
মুক্তির মন্দির সোপানতলে
মুক্তির মন্দির সোপানতলেকত প্রাণ হলো বলিদান,
লেখা আছে অশ্রুজলে।।
কত বিপ্লবী বন্ধুর রক্তে রাঙা,
বন্দীশালার ওই শিকল ভাঙ্গা
তাঁরা কি ফিরিবে আজ সুপ্রভাতে
যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে।।
যাঁরা স্বর্গগত তাঁরা এখনও জানেন
স্বর্গের চেয়ে প্রিয় জন্মভূমি
এসো স্বদেশ ব্রতের মহা দীক্ষা লভি
সেই মৃত্যুঞ্জয়ীদের চরণ চুমি।
যাঁরা জীর্ণ জাতির বুকে জাগালো আশা,
মৌল মলিন মুখে জোগালো ভাষা
আজি রক্ত কমলে গাঁথা মাল্যখানি
বিজয় লক্ষ্মী দেবে তাঁদেরই গলে।।
জন্ম আমার ধন্য হলো
জন্ম আমার ধন্য হলো মাগোএমন করে আকুল হয়ে
আমায় তুমি ডাকো।।
তোমার কথায় হাসতে পারি
তোমার কথায় কাঁদতে পারি
মরতে পারি তোমার বুকে
বুকে যদি রাখো মাগো।।
তোমার কথায় কথা বলি
পাখির গানের মতো
তোমার দেখায় বিশ্ব দেখি
বর্ণ কত শত।
তুমি আমার—খেলার পুতুল
আমার পাশে থাক মাগো।।
তোমার প্রেমে তোমার গন্ধে
পরান ভরে রাখি
এইতো আমার জীবন-মরণ
এমনি যেন থাকি।
বুকে তোমার—ঘুমিয়ে গেলে
জাগিয়ে দিও নাকো মাগো।।
ও ভাই খাঁটি
ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটিআমার দেশের মাটি।।
এই দেশেরই মাটি জলে,
এই দেশেরই ফুলে-ফলে,
তৃষ্ণা মিটাই, মিটাই ক্ষুধা
পিয়ে এরই দুধের বাটি।।
এই মাটি এই কাদা মেখে,
এই দেশেরই আচার দেখে,
সভ্য হলো নিখিল ভুবন, দিব্য পরিপাটি।।
এই দেশেরই ধুলায় পড়ি
মানিক যায়রে গড়াগড়ি
বিশ্বে সবার ঘুম ভাঙানো
এই দেশেরই জীবন কাঠি।।
সবকটা জানালা খুলে
সবকটা জানালা খুলে দাওনাআমি গাইব গাইব বিজয়েরই গান
ওরা আসবে চুপি চুপি যারা এই দেশটাকে
ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ।।
চোখ থেকে মুছে ফেল অশ্রুটুকু
এমন খুশির দিনে কাঁদতে নেই
হারানো স্মৃতি বেদনাতে
একাকার করে মন ডাক দিলে
ওরা আসবে চুপি চুপি যারা এই দেশটাকে
কেউ যেন ভুল করে গেয়নাক
মন ভাঙা গান।।
আজ আমি সারানিশি থাকব জেগে
ঘরের আলো সব আঁধার করে।
তৈরি রাখব আতর গোলাপ
এদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে
ওরা আসবে চুপি চুপি যারা এই দেশটাকে
কেউ যেন ভুল করে গেয়নাক
মন ভাঙা গান।।
আমি বাংলায় গান গাই
আমি বাংলায় গান গাই,আমি বাংলার গান গাই,আমি আমার আমিকে চিরদিন
এই বাংলায় খুঁজে পাই।
আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন,
আমি বাংলায় বাঁধি সুর,
আমি এই বাংলার মায়াভরা পথে
হেঁটেছি এতটা দূর।
বাংলা আমার জীবনানন্দ,
বাংলা আমার সুখ,
আমি একবার দেখি বারবার দেখি
দেখি বাংলার মুখ।।
আমি বাংলায় কথা কই,
আমি বাংলার কথা কই,
আমি বাংলায় ভাসি, বাংলায় হাসি,
বাংলায় জেগে রই।
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে,
করি বাংলায় হাহাকার,
আমি সব দেখে-শুনে ক্ষেপে গিয়ে করি
বাংলায় চিৎকার।
বাংলা আমার দৃপ্ত শ্লোগান,
ক্ষিপ্ত তীর-ধনুক,
আমি একবার দেখি, বারবার দেখি
দেখি বাংলার মুখ।।
আমি বাংলায় ভালোবাসি,
আমি বাংলাকে ভালোবাসি,
আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর
মানুষের কাছে আসি।
আমি যা কিছু মহান
বরণ করেছি বিনিদ্র শ্রদ্ধায়
মিশে তের নদী সাত সাগরের জল
গঙ্গায় পদ্মায়।
বাংলা আমার তৃষ্ণার জল,
দৃপ্ত শেষ চুমুক।
আমি একবার দেখি, বারবার দেখি,
দেখি বাংলার মুখ।।
মাগো তোমার কোলে
মাগো তোমার কোলে জন্মেপেয়েছি সুখের আলো
তাইতো তোমায় জীবন দিয়েও
তাই বেসেছি ভালো।।
তোমার বুকের সুধায় আমি
স্বপ্ন দেখি মুগ্ধ চোখে
শিশির কণা পাত্র ছুঁয়ে
প্রাণের পরশ পেলো।।
এখানে পদ্মা মেঘনা যমুনা
ফল্গু ধারা বয়ে চলে যায়
কুলু কুলু ঢেউ কলরোলে নাচে
বাংলা মায়ের কোলে।।
চল চল চল
চল চল চলঊর্দ্ধ গগনে বাজে মাদলনিম্নে উতলা ধরণী তল
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
চলরে চলরে চল।।
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা টুটিব তিমির রাত
বাঁধার বিন্ধ্যা চল।।
নব নবীনের গাহিয়া গান
সজীব করিব মহাশশ্মান
আমরা দানিব নতুন প্রাণ
বাহুতে নবীন বল।।
চলরে নওজোয়ান, শোনরে পাতিয়া কান
মৃত্যু তোরণ দুয়ারে দুয়ারে জীবনের আহ্বান
ভাঙ্গরে ভাঙ্গ আগল
চলরে চলরে চল।।
ধনধান্য পুষ্প ভরা
ধনধান্য পুষ্প ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে যে স্মৃতি দিয়ে ঘেরা
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি
সে যে আমার জন্মভূমি, সে যে আমার জন্মভূমি।।
পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখি কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে
তারা ফুলের ওপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে।।
ভায়ের মায়ের এত স্নেহ কোথায় গেলে পাবে কেহ
ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি
আমার এই দেশেতে জন্ম যেন এই দেশেতে মরি।।
এই পদ্মা, এই মেঘনা
এই পদ্মা, এই মেঘনা,এই যমুনা সুরমা নদী তটে।
আমার রাখাল মন, গান গেয়ে যায়
এই আমার দেশ, এই আমার প্রেম
আনন্দ বেদনায়, মিলন বিরহ সংকটে।।
এই মধুমতি ধানসিঁড়ি নদীর তীরে
নিজেকে হারিয়ে যেন পাই ফিরে ফিরে
এক নীল ঢেউ কবিতার প্রচ্ছদ পটে।।
এই পদ্মা, এই মেঘনা,
এই হাজারো নদীর অববাহিকায়।
এখানে রমণীগুলো নদীর মতন
নদী ও রমণীগুলো শুধু কথা কয়।।
এই অবারিত সবুজের প্রান্ত ছুঁয়ে
নির্ভয় নীলাকাশ রয়েছে নুয়ে
যেন হৃদয়ের ভালোবাসা হৃদয়ে ফুটে।।
মাঝি নাও ছাইরা দে
মাঝি নাও ছাইরা দেও মাঝি পাল উড়াইয়া দেগা-রে মাঝি গা কোন গান।।
একদিন তোর নাও মাঝি
ভাসবে না রে নীল নদীতে রে
সেদিন তোর গান মাঝি
শুনবে না কেউ গাইবে না বলে-
ও মাঝি রে, ও কলের নৌকা কাইরা নিবে সুর।।
যন্ত্রের নাও ধোঁয়া ছাইরা
আঁধার করল নীল আকাশটারে, ও মাঝি রে-
সেদিন তোর নাও মাঝি
শূণ্য হয়ে থাকবে রে পরে-
ও মাঝি রে-
ও চল রে মাঝি যাইরে বহু দূর।।
প্রথম বাংলাদেশ
প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ,জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ,
বাংলাদেশ, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।।
আমার আঙিনায় ছড়ানো বিছানো,
সোনা সোনা ধুলিকণা,
মাটির মমতায় ঘাস ফসলে,
সবুজের আল্পনা,
আমার তাতেই হয়েছে
স্বপ্নের বীজবোনা।।
অরূপ জোছনায়, সাজানো রাঙানো
ঝিলিমিলি চাঁদ তলে
নিবিড় মমরায়, পিউ পাপিয়া
হৃদয়ের দ্বার খোলে,
আমি তাতেই রেখেছি
স্বপ্নের দ্বীপ জ্বেলে।।
সূর্যদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমি
সূর্যদয়ে তুমি, সূর্যাস্তেও তুমিও আমার বাংলাদেশ, প্রিয় জন্মভূমি।।
জলসিঁড়ি নদীর তীরে,
তোর খুশির কাঁকন যেন বাজে
ও—কাশবনে ফুলে ফুলে,
তোর মধুর বাসর যেন সাজে
তোর একতারা হায়,
করে বাউল আমায় সুরে সুরে।।
আঁকাবাঁকা মেঠো পথে
তোর রাখাল হৃদয় যেন হাসে
ও—পদ্ম পাতা, দীঘির ঝিলে
তোর সোনার স্বপন যেন ভাসে
তোর এই আঙিনায়
ধরে রাখিস আমায় চিরতরে।।
একতারা তুই দেশের কথা
একতারা তুই দেশের কথাবলরে এবার বল
আমাকে তুই বাউল করে, সঙ্গে নিয়ে চল
জীবন মরণ মাঝে, তোর সুর যেন বাজে।।
একটি কথা আমি শুধু বলে যেতে চাই
বাংলা আমার সুখে-দুখে হয় যেন গো ঠাই রে।।
একটি গান আমি শুধু গেয়ে যেতে চাই,
বাংলা আমার, আমি যে তার
আর তো চাওয়া নাই রে।।
প্রাণের প্রিয় তুমি, মোর সাধের জন্মভূমি
তোমায় বরণ করে
যেন যেতে পারি মরে।।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো, একুশে ফেব্রুয়ারীআমি কি ভুলিতে পারি।।
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু
গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী।।
আমার সোনার দেশের
রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী।।
জাগো নাগিনীরা জাগো জাগো
জাগো কাল বোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ
কাপুক বসুন্ধরা।।
ব্যারিকেড বেয়নেট বেড়াজাল
ব্যারিকেড বেয়নেট বেড়াজালপাকে পাকে তড়পায় সমকালমারীভয় সংশয় ত্রাসে
অতিকায় অজগর গ্রাসে
মানুষের কলিজা
ছেঁড়ে খোঁড়ে খাবলায়
খাবলায় নরপাল।
ঘুম নয় এই খাঁটি ক্রান্তি
ভাঙো ভাই খোঁয়ারির ক্লান্তি
হালখাতা বৈশাখে
শিস দেয় সৈনিক হরিয়াল।।
দুর্বার বন্যার তোড়জোড়
মুখরিত করে এই রাঙা ভোর
নায়ে ঠেলা মারো হেঁই এইবার
তোলো পাল তোলো পাল ধরো হাল।।
কড়া হাতে ধরে আছি কবিতার
হাতিয়ার কলমের তলোয়ার
সংগ্রামী ব্যালাডে
ডাক দেয় কমরেড কবিয়াল।।
পূর্ব দিগন্তে সূর্য
পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে
রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল
জোয়ার এসেছে জন-সমুদ্রে
রক্ত লাল, রক্ত লাল, রক্ত লাল।।
বাঁধন ছেঁড়ার হয়েছে কাল,
হয়েছে কাল, হয়েছে কাল।।
শোষণের দিন শেষ হয়ে আসে
অত্যাচারীরা কাঁপে আজ ত্রাসে
রক্তে আগুন প্রতিরোধ গড়ে
নয়া বাংলার নয়া শ্মশান, নয়া শ্মশান।
আর দেরি নয় উড়াও নিশান
রক্তে বাজুক প্রলয় বিষাণ
বিদ্যুৎ গতি হউক অভিযান
ছিঁড়ে ফেলো সব শত্রু জাল, শত্রু জাল।
আমি এক বাংলার
আমি এক বাংলার মুক্তি সেনামৃত্যুর পথ চলিতে
কভু করি না ভয় করি না।
মৃত্যুর পায়ে দলে চলি হাসিতে।
দুঃসহ জীবনের রাহু মুক্তি
প্রাণে মেখে সূর্যের নবশক্তি
বজ্র শপথে নেমেছি যুদ্ধে
বাঙালির জয় হবে নিশ্চয়
চলেছে এ দুর্জয় মুক্তির পথে।
বাংলার তরে আমি সঁপেছি এ মন
নেই জ্বালা হাহাকার নেই হুতাশন।
রক্তে রাঙা আজ বিপ্লবী মন
ক্ষমা নেই বাংলার গণদুশমন
বজ্রের তূর্যের মন্ত্রে
মারবো এবার মরবো না আর
চলেছি যে শত্রুকে পায়ে দলিতে।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে
বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
দুঃসহ এ বেদনার কণ্টক পথ বেয়ে
শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
যুগের নিষ্ঠুর বন্ধন হতে
মুক্তির এ বারতা আনলে যারা
আমরা তোমাদের ভুলব না।
কৃষাণ-কৃষাণীর গানে গানে
পদ্মা-মেঘনার কলতানে
বাউলের একতারাতে
আনন্দ ঝংকারে
তোমাদের নাম ঝংকৃত হবে।
নতুন স্বদেশ গড়ার পথে
তোমরা চিরদিন দিশারী রবে।
আমরা তোমাদের ভুলব না।।
ছোটদের বড়দের সকলের
ছোটদের বড়দের সকলের
গরিবের নিঃস্বের ফকিরের
আমার এ দেশ সব মানুষের, সব মানুষের।।
নেই ভেদাভেদ হেথা চাষা আর চামারে,
নেই ভেদাভেদ হেথা কুলি আর কামারে।
হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, দেশ মাতা এক সকলের।
লাঙলের সাথে আজ চাকা ঘুরে এক তালে
এক হয়ে মিশে গেছি আমারা সে যে কোন প্রাণে।
মসজিদ, মন্দির, গীর্জার আবাহনে।
বাণী শুনি একই সুরের।
চাষাদের মজুরের ফকিরের
ফকিরের নিঃস্বের গরিবের
আমার এ দেশ, সব মানুষের, সব মানুষের।
বড়দের ছোটদের সকলের
আমার এ দেশ সব মানুষের।
তারা এ দেশের
তারা এ দেশের সবুজ ধানের শীষে
চিরদিন আছে মিশে।।
উদাসী মাঝির গানে
বাউলের ভীরু প্রাণে
দোয়েল শ্যামার শিসে
চিরদিন আছে মিশে।।
গুরু গুরু মেঘে কাদের কন্ঠ শুনি
রক্তে তখন নেচে ওঠে কত ফাল্গুনী
সকল পথের বাঁকে
তারা আমাদের ডাকে
দিগন্তে দিশে দিশে
চিরদিন আছে মিশে।।
উদাসী মাঝির গানে
তারা আমাদের টানে
দোয়েল শ্যামার শিসে
চিরদিন আছে মিশে।।
তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর
তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর,
পাড়ি দিব রে
আমরা ক’জন নবীন মাঝি
হাল ধরেছি রে।।
জীবন কাটি যুদ্ধ করি
প্রাণের মায়া সাঙ্গ করি
জীবনের সাধ নাহি পাই।।
ঘর-বাড়ির ঠিকানা নাই
দিন-রাত্রি জানা নাই
চলার ঠিকানা সঠিক নাই।।
জানি শুধু চলতে হবে
এ তরী বাইতে হবে
আমি যে সাগর মাঝি রে।
জীবনের রঙে মনকে টানে না
ফুলের ঐ গন্ধ কেমন জানি না
জ্যোৎস্নার দৃশ্য চোখে পড়ে না
তারাও তো ভুলে কভু ডাকে না।।
বৈশাখেরই রুদ্র ঝড়ে
আকাশ যখন ভেঙে পড়ে
ছেঁড়া পাল আরও ছেঁড়ে যায়।।
হাতছানি দেয় বিদ্যুৎ আমায়
হঠাৎ কে যে শঙ্খ শোনায়
দেখি ঐ ভোরের পাখি গায়।।
তবু তরী বাইতে হবে
খেয়া পারে নিতে হবে
যতই ঝড় উঠুক সাগরে।
তীরহারা এই ঢেউয়ের
সাগর পারি দিব রে।।
জনতার সংগ্রাম চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই।।
হতমানে অপমানে নয়, সুকগ সম্মানে
বাঁচবার অধিকার কাড়তে
দাস্যের নির্মোক কাড়তে
অগিণিত মানুষের প্রাণপণ যুদ্ধ
চলবেই চলবেই,
জনতার সংগ্রাম চলবেই।।
প্রতারণা প্রলোভন প্রলেপে
হোক না আঁধার নিশ্চিদ্র
আমরা তো সময়ের সারথী
নিশিদিন কাটাবো বিনিদ্র।
দিয়েছি তো শাস্তি আরও দেবো স্বস্তি
দিয়েছি তো সম্ভ্রম আরো দেবো অস্থি
প্রয়োজন হলে দেবো এক নদী রক্ত।
হোক না পথের বাধা প্রস্তর শক্ত
অবিরাম যাত্রার চির সংঘর্ষে
একদিন সে পাহাড় টলবেই
চলবেই চলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।।
হতে পারি পথভ্রম আরও বিধ্বস্ত
ধিকৃত নয় তবু চিত্তে
আশায় তো সুস্থির লক্ষ্যের যাত্রী
চলবার আবেগেই তৃপ্ত।
আমাদের পথরেখা দুস্তর দুর্গম
সাথে তবু অগণিত সঙ্গী
বেদনার কোটি কোটি অংশী
আমাদের চোখে চোখে লেলিহান অগ্নি
সকল বিরোধ বিধ্বংসী।
এই কালো রাত্রির সুকঠিন অর্গল
কোনদিন আমরা যে ভাঙবোই
মুক্ত প্রাণের সাড়া জানবোই।
আমাদের শপথের প্রদীপ্ত স্বাক্ষরে
নুতন অগ্নিশিখা জ্বলবেই
জনতার সংগ্রাম চলবেই
আমাদের সংগ্রাম চলবেই।
সোনা সোনা সোনা
সোনা সোনা সোনা
লোকে বলে সোনা
সোনা নয় তত খাঁটি
বলো যত খাঁটি
তার চেয়ে খাঁটি বাংলাদেশের মাটি রে
আমার জন্মভূমির মাটি।।
ধন জন মন যত ধন দুনিয়াতে
হয় কি তুলনা বাংলার কারো সাথে
কত মার ধন মানিক রতন
কত জ্ঞানী গুণী কত মহাজন
এনেছি আলোর সূর্য এখানে
আঁধারের পথ পাতি রে
আমার বাংলাদেশের মাটি
আমার জন্মভূমির মাটি।।
এই মাটির তলে ঘুমায়েছে অবিরাম
রফিক, শফিক, বরকত কত নাম
কত তিতুমীর, কত ঈশা খান
দিয়েছে জীবন, দেয় নি তো মান।।
রক্তশয্যা পাতিয়া এখানে
ঘুমায়েছে পরিপাটি রে
আমার বাংলাদেশের মাটি
আমার জন্মভূমির মাটি।
মোরা একটি ফুলকে
মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি সুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।।
যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা
যার নদী জলে ফুলে ফুলে মোর স্বপ্ন আঁকা।
যে নদীর নীল অম্বরে মোর মেলছে পাখা
সারাটি জীবন সে মাটির গানে অস্ত্র ধরি।।
নতুন একটি কবিতা লিখতে যুদ্ধ করি―
মোরা নতুন একটি গানের জন্য যুদ্ধ করি
মোরা একখানা ভালো ছবির জন্য যুদ্ধ করি
মোরা সারা বিশ্বের শান্তি বাঁচাতে আজকে লড়ি।।
যে নারীর মধু প্রেমেতে আমার রক্ত দোলে
যে শিশুর কান্না হাসিতে আমার বিশ্ব ভোলে
যে গৃহ কপোত সুখ স্বর্গের দুয়ার খুঁজে
সেই শান্তির শিবির বাঁচাতে শপথ করি।।
মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি সুখের হাসির জন্য আজি অস্ত্র ধরি।।
[গানটি লিখেছেন গোবিন্দ হালদার এবং গেয়েছেন আপেল মাহমুদ]
নোঙর তোল তোল
নোঙর তোল তোল সময় যে হোল হোল
হাওয়ার বুকে নৌকা এবার
জোয়ারে ভাসিয়ে দাও
শক্ত মুঠির বাঁধনে বজরা বাঁধিয়া নাও
সম্মুখে এবার দৃষ্টি তোমার পেছনের কথা ভোল
দূর দিগন্তে সূর্য রথে
দৃষ্টি রেখেছে স্থির
সবুজ আশার স্বপ্নেরা আজ
নয়নে করেছে ভিড়
হৃদয়ে তোমার মুক্তি আলো
আলোর দুয়ার খোলো।
শোনো, একটি মুজিবরের থেকে
শোনো, একটি মুজিবরের থেকেলক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি, প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণি।
বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ।।
সেই সবুজের বুক চেরা মেঠো পথে,
আবার এসে ফিরে যাবো আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো।
শিল্পে কাব্যে কোথায় আছে হায় রে
এমন সোনার দেশ।
বিশ্বকবির সোনার বাংলা, নজরুলের বাংলাদেশ,
জীবনানন্দের রূপসী বাংলা
রূপের যে তার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ।
‘জয় বাংলা’ বলতে মনরে আমার এখন কেন ভাবো,
আমার হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাবো,
অন্ধকারে পুবাকাশে উঠবে আবার দিনমণি।।
বিচারপতি তোমার বিচার
বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা
আজ জেগেছে এই জনতা, এই জনতা।।
তোমার গুলির, তোমার ফাঁসির,
তোমার কারাগারের পেষণ শুধবে তারা
ও জনতা এই জনতা এই জনতা।।
তোমার সভায় আমীর যারা,
ফাঁসির কাঠে ঝুলবে তারা।।
তোমার রাজা মহারাজা,
করজোরে মাগবে বিচার।।
ঠিক যেন তা এই জনতা।
তারা নতুন প্রাতে প্রাণ পেয়েছে, প্রাণ পেয়েছে।
তারা ক্ষুদিরামের রক্তে ভিজে প্রাণ পেয়েছে।।
তারা জালিয়ানের রক্তস্নানে প্রাণ পেয়েছে।
তারা ফাঁসির কাঠে জীবন দিয়ে
প্রাণ পেয়েছে, প্রাণ পেয়েছে।।
তারা গুলির ঘায়ে কলজে ছিঁড়ে প্রাণ পেয়েছে,
প্রাণ পেয়েছে এই জনতা।
নিঃস্ব যারা সর্বহারা তোমার বিচারে।
সেই নিপীড়িত জনগণের পায়ের ধারে।।
ক্ষমা তোমায় চাইতে হবে
নামিয়ে মাথা হে বিধাতা।।
রক্ত দিয়ে শুধতে হবে।
নামিয়ে মাথা হে বিধাতা।।
ঠিক যেন তা এই জনতা।
বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা
আজ জেগেছে এই জনতা, এই জনতা।।
সালাম সালাম হাজার সালাম
সালাম সালাম হাজার সালাম
সকল শহীদ স্মরণে,
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাদের স্মৃতির চরণে।।
মায়ের ভাষায় কথা বলাতে
স্বাধীন আশায় পথ চলাতে
হাসিমুখে যারা দিয়ে গেল প্রাণ
সেই স্মৃতি নিয়ে গেয়ে যাই গান
তাদের বিজয় মরণে,
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাদের স্মৃতির চরণে।।
ভাইয়ের বুকের রক্তে আজি
রক্ত মশাল জ্বলে দিকে দিকে
সংগ্রামী আজ মহাজনতা
কন্ঠে তাদের নব বারতা
শহীদ ভাইয়ের স্মরণে,
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাদের স্মৃতির চরণে।।
বাংলাদেশের লাখো বাঙালি
জয়ের নেশায় আনে ফুলের ডালি
আলোর দেয়ালি ঘরে ঘরে জ্বালি
ঘুচিয়ে মনের আঁধার কালি।
শহীদ স্মৃতি বরণে,
আমার হৃদয় রেখে যেতে চাই
তাদের স্মৃতির চরণে।।
জয় বাংলা বাংলার জয়
জয় বাংলা বাংলার জয়।।
হবে হবে হবে, হবে নিশ্চয়
কোটি প্রাণ এক সাথে জেগেছে অন্ধরাতে
নতুন সূর্য ওঠার এই তো সময়।।
বাংলার প্রতি ঘর ভরে দিতে
চাই মোরা অন্নে।।
আমাদের রক্তে টগবগ দুলছে
মুক্তির রিক্ত তারুণ্যে।।
নেই ― ভয়
হস্ত হউক রক্তের প্রখ্যাত ক্ষয়।
আমি করি না করি না করি না ভয়।
অশোকের ছায় যেন রাখালের বাঁশরী
হয়ে গেছে একেবারে স্তব্ধ।।
চারিদিকে শুনি আজ নিদারুণ হাহাকার
আর ঐ কান্নার শব্দ।।
শাসনের নামে চলে শোষণের
সুকঠিন যন্ত্র।।
শব্দের হুঙ্কারে শৃঙ্খল ভাঙতে
সংগ্রামী জনতা অতন্দ্র।
আর ― নয়।
তিলেতিলে মানুষের এই পরাজয়।।
আমি করি না করি না করি না ভয়।
জয় বাংলা বাংলার জয়।।
0 comments: