গাড়ির চালকদের ঘুম ঠেকাবে স্বয়ংক্রিয় ভাবে এক যন্ত্র
সোজা মহাসড়ক। বেশ ফাঁকা রাস্তা। এমন সময়ই ঘুম এসে ভিড় করে গাড়ি চালকের চোখের পাতায়। নগরীর যানজটের মধ্যে নিশ্চিন্তে আরাম করে মোটামুটি একই গতিতে গাড়ি চালানোর কোনো সুযোগ হয় না কখনো। ফলে হয়তো ঘুম আসে না। কিন্তু যখন দূরের পথ। সোজা মহাসড়ক। বেশ ফাঁকা রাস্তা। এমন সময়ই ঘুম এসে ভিড় করে গাড়ি চালকের চোখের পাতায়।
তবে বিজ্ঞানীরা এবার এমন ব্যবস্থা করতে যাচ্ছেন, চালকের চোখের পাতা জুড়িয়ে এলে সঙ্গে সঙ্গেই জোরেশোরে সংকেত দিয়ে উঠবে গাড়িতে থাকা যন্ত্র। জার্মানির ফ্রাউনহফার ইনস্টিটিউটের ডিজিটাল মিডিয়া প্রযুক্তি শাখার গবেষকরা জানালেন এমন খবর। মানুষের চোখের পাতার নড়াচড়ার প্রতি তীক্ষ্ন দৃষ্টি রাখবে এমন একটি যন্ত্র তারা উদ্ভাবন করেছেন। ফলে গাড়িচালকের চোখের পাতা ঘুমে আচ্ছন্ন হতে গেলেই এটিতে সতর্ক সংকেত বেজে উঠবে।
এই যন্ত্রটি উদ্ভাবনের পরই নিয়ে আসা হয়েছে স্টুটগার্টের এক মেলায়। চোখের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি প্রদর্শন করা হচ্ছে সেই মেলায়। তবে ঠিক এখনই গাড়ির চালকরা ব্যবহার করতে পারছেন না দুর্ঘটনা রোধে সহায়ক এই যন্ত্রটি। বরং প্রতীক্ষা করতে হবে আরও তিন মাস। আপাতত পরীক্ষামূলকভাবে একটি গাড়িতে চালু করে এর কর্মদক্ষতা যাচাই করবেন গবেষকরা। পরীক্ষামূলক ব্যবহার সফল হলে আগামী বছরের শুরুতেই গাড়ি নির্মাতাদের কাছে এটি বিক্রির জন্য বাজারে নামানো হতে পারে, এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করলেন ইনস্টিটিউটের মুখপাত্র পেটার হুজার।
তিনি বলেন, এতদিন পর্যন্ত এমন কাজের জন্য যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হতো তার দশভাগের একভাগ খরচ হবে এই নতুন আইট্র্যাকারে। এছাড়া এটি যে কোনো মডেলের গাড়িতেই স্থাপন করা যাবে। শুধু তাই নয়, আগের প্রচলিত ব্যবস্থায় প্রত্যেক চালকের জন্য আলাদাভাবে অনেক সময় ব্যয় করে প্রস্তুতি নিতে হতো নির্দিষ্ট ক্যামেরা সদৃশ যন্ত্র সঠিকভাবে স্থাপন ও চালু করতে। কিন্তু এটির জন্য চালকভেদে ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে স্থাপনের প্রয়োজন পড়ছে না। প্রয়োজন হচ্ছে না কোনো ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটারের। তিনি জানান, চালকের সহায়ক ব্যবস্থা হিসেবে এতে থাকছে চার থেকে ছয়টি ক্যামেরা। যেগুলো চালকের চোখের পাতার অবস্থান এবং দৃষ্টি রেখার ওপর নজর রাখবে। এমনকি চালক ডান কিংবা বাম দিকে দৃষ্টিপাত করলেও এটি সমানভাবে কাজ করতে পারে। যন্ত্রটি সেকেন্ডে ২০০টি পর্যন্ত ছবি ধারণ এবং বিশ্লেষণ করে এমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এতটা ভালোভাবে কাজ করলেও যন্ত্রটির আকার কিন্তু বড় নয়। এটির আকার একটি দেয়াশলাই এর বাক্সের অর্ধেক। গবেষকরা আরও জানালেন, এটি যে শুধু গাড়িচালকের কাজে লাগবে তা নয়, বরং চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে চোখে অস্ত্রোপচারের সময়ও এটি ব্যবহার করা যাবে, চোখের পাতার প্রতিটি নড়াচড়ার দিকে নজর রাখার জন্য। এমনকি বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপনের ঠিক কোন অংশের দিকে একজন ভোক্তা বেশি সময় ধরে দৃষ্টি ফেলছে সেটিও নির্ণয় করা সম্ভব হবে এই যন্ত্র দিয়ে। ফলে ভোক্তার দৃষ্টি বিবেচনা করে বিজ্ঞাপনের মান এবং পণ্যের চাহিদার বিষয়গুলো পরিষ্কারভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
0 comments: