ইরিয়ান জায়া পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন এবং বুনো অঞ্চলগুলোর একটি। এটিকে আদিবাসী বুনোদের দ্বীপ, বৃক্ষচারীদের দ্বীপ, নরখাদকের দ্বীপ প্রভৃতি নামে ...

মানুষখেকোদের দেশ এর ইতিহাস

11:33:00 AM Mainuddin 0 Comments

http://bbchumanplanet.files.wordpress.com/2010/04/toby-tuppence-and-the-bushmen-lores-toby.jpg?w=340&h=510


ইরিয়ান জায়া পৃথিবীর সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন এবং বুনো অঞ্চলগুলোর একটি। এটিকে আদিবাসী বুনোদের দ্বীপ, বৃক্ষচারীদের দ্বীপ, নরখাদকের দ্বীপ প্রভৃতি নামে ডাকা হয়। এ দ্বীপে এক সময় উপজাতিরা চুরি বা হত্যার প্রতিশোধ নিতে প্রতিপক্ষদের ধরে খেয়ে ফেলত। যারা মানুষের মাংস খেত তারা বিশ্বাস করত শত্রুকে খেয়ে ফেললে তার শক্তি নিজেদের ভেতরে সঞ্চারিত হয়। আর ওই সময় বারো মাসই জাতিগত সংঘর্ষ লেগে থাকত। তবে এখন এ ধরনের দ্বন্দ্ব আইন দ্বারা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। ১৯৬০ সালে ইন্দোনেশিয়া এই দুর্গম দ্বীপটির পশ্চিমাংশ দখল করে নেয়। এই দ্বীপের নাম দেওয়া হয় ইরিয়ান জায়া। যার অর্থ 'বিজয়ী উষ্ণ ভূমি।'
http://www.bd-pratidin.com/admin/news_images/265/image_265_47480.jpg
স্বাধীনতার সময় ওলন্দাজরা নিউগিনি দ্বীপের পশ্চিমাংশে তাদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে। অঞ্চলটি সুকর্ণ এবং সুহার্তোর আমলে ইরিয়ান জায়া এবং ২০০০ সাল থেকে পাপুয়া নামে পরিচিত হয়। ইরিয়ান জায়াকে ইন্দোনেশিয়ার অংশে পরিণত করার ব্যাপারে ইন্দোনেশিয়া ও ওলন্দাজদের মধ্যে আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং ১৯৬১ সালে ইন্দোনেশীয় ও ওলন্দাজ সেনারা সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৬২ সালের আগস্টে দুই পক্ষ একটি চুক্তিতে আসে এবং ১৯৬৩ সালের ১ মে থেকে ইন্দোনেশিয়া ইরিয়ান জায়ার প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করে, ১৯৬৯ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ইন্দোনেশিয়া একটি ভোটের আয়োজন করে যাতে পাপুয়ার স্থানীয় কাউন্সিলগুলোর প্রতিনিধিরা ইন্দোনেশিয়ার অংশ হওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করে। এর পরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটি প্রস্তাবের মাধ্যমে অঞ্চলটি ইন্দোনেশিয়ার কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে পাপুয়াতে ইন্দোনেশিয়ার প্রশাসনবিরোধী ছোট আকারের গেরিলা কর্মকাণ্ড শুরু হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে পাপুয়াতে স্বাধীনতার দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠেছে। বিশ্বজুড়েই তার অদ্ভুত সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যময় বসতির জন্য বিখ্যাত হয়ে ওঠেছে এই দ্বীপটি। পাপুয়া নামের চেয়ে ইরিয়ান জায়া নামেই এটি বেশি পরিচিত। এটি এমনই একটি দ্বীপ যেখানে গেলে মনে হবে অতি প্রাচীন প্রস্তর যুগ যেন এখনো থেমে আছে এখানে। হারিয়ে যাওয়া আদি পৃথিবীর মতো এ দ্বীপের অদিবাসীরা মূলত বৃক্ষচারী। বিশাল উঁচুতে গাছের মাথায় ঘর বেঁধে বসবাস করে এরা। এখানকার প্রাচীন অধিবাসীদের নরমাংস ভক্ষণের কথা কিংবদন্তিতুল্য। তবে এখনকার সময়েও হরহামেশাই ওদের বিরুদ্ধে মানুষ খাওয়ার অভিযোগ উঠছে।
http://www.bd-pratidin.com/admin/news_images/263/image_263_47183.jpg
মানুষ খাওয়ার ব্যাপারটি নিউগিনির অসংখ্য উপজাতির মধ্যে প্রচলিত ছিল। এদের এই রীতি পৃথিবীর সর্বত্র স্বীকৃত ছিল। কিন্তু ইন্দোনেশীয় সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর মানুষ খাওয়ার প্রথা সরকারিভাবেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।


ইরিয়ান জায়াতে বেশকিছু উপজাতির বাস। এর মধ্যে অন্যতম হলো_ ইয়ালি উপজাতি। আগে যখন মিশনারিরা উড়োজাহাজ নিয়ে এদের গ্রামে আসত, তারা সবাই ভয়ে পালাত। কুসংস্কারে বিশ্বাসী গ্রামবাসীরা এদেরকে পোষা শুয়োর জবাই করে দিত। ভাবত তাহলে আর আকাশ থেকে উড়ে আসা শত্রু কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। উড়োজাহাজের শব্দ শুনলেই এখানকার লোকজন তাদের ছেলেমেয়ে নিয়ে গহিন অরণ্যে পালিয়ে যেত। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে ইরিয়ান জায়ায় অভিযাত্রী, মিশনারি, সৈনিক, শিক্ষক, প্রসপেক্টরদের এত বেশি আনাগোনা বেড়ে গেছে যে, এখানকার অধিবাসীরা আগের মতো এখন আর উড়োজাহাজের শব্দে আঁতকে ওঠে না। ষাটের দশকের প্রথম দিকেও ইয়ালি উপজাতিরা তাদের বন্দীদের ধরে ধরে পুড়িয়ে খেয়েছে। সত্তর দশকেও শোনা গেছে, এক খ্রিস্টান ধর্মযাজকসহ তার ডজনখানেক সহকারীকে খেয়ে উদর পূর্তি করেছে ইয়ালিদেরই কিছু জাতভাই। তবে নিউগিনির কাছ থেকে ইন্দোনেশিয়া ২৬তম প্রদেশ হিসেবে এ দ্বীপটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে এ ধরনের লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের কথা আর শোনা যায়নি। নিউগিনির লোকেরা ছিল দক্ষিণ সাগরের মেলানেশিয়ান কালচারের মানুষ। এদের অর্থনীতি মূলত গড়ে উঠেছে শুয়োর পালনকে কেন্দ্র করে। এদের ঐতিহ্যগত ইতিহাস রয়েছে নরভক্ষণ এবং খুলি শিকারের এশীয়বাসীর সঙ্গে তাদের জীবনাচরণের কোনোই মিল নেই। এক সময় ইরিয়ান জায়ার পূর্বাংশ শাসন করত অস্ট্রেলিয়া এবং জাতিসংঘ। ১৯৭৫ সালে এ অংশটি পাপুয়া নিউগিনি নামে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। প্রকৃতিগত দিক থেকে ইরিয়ান জায়া আগে যেমন ছিল এখনো তেমনই আছে। বিশাল রেইন ফরেস্ট, বড় বড় ফার্ন গাছের রাজত্ব, জলাভূমি ১৬ হাজার ফুট উঁচু, মেঘে ঢাকা পর্বত। পরিবেশবাদীরা ইরিয়ান জায়াকে বলেন এশিয়ান প্যাসিফিকের সর্বশেষ বুনো ভূমি। ইরিয়ান জায়ায় লোকসংখ্যা কম। ২০ লাখও হবে ০িকনা সন্দেহ। এই পরিমাণ লোক ক্যালিফোর্নিয়ার মতো সুবিশাল এলাকা নিয়ে বাস করে, যেখানে কমপক্ষে তিন কোটি লোকের বাস।
http://s3.amazonaws.com/weknowwhatyoudidlastnight/photos/44453/Cannibal_Island_normal.jpg
ইরিয়ান জায়ায় অসংখ্য উপজাতি রয়েছে। এদের একত্রে পাপুয়ান বলা হয়। এখানকার বেশিরভাগ পাপুয়ানই শিকার করে পেট চালায়। তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বাস করে পাহাড়ে।


'৭০ সালের আগ পর্যন্ত পাপুয়ান পুরুষদের প্রধান কাজই ছিল প্রতিহিংসামূলক জাতিগত যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়া।


ইন্দোনেশিয়ার প্রভুত্ব ইরিয়ান জায়ার মানুষ সহজে মেনে নিতে চায়নি। তারা ইন্দোনেশিয়ান সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুললে '৭০ এবং ৮০-র দশকে ইন্দোনেশিয়ান আর্মি তাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে কমপক্ষে এক হাজার ইরিয়ানিজকে মেরে ফেলে। তবে পাপুয়া নিউগিনির সীমান্তের কাছে অর্গানিসাসি পাপুয়া মারদেকা বা ফ্রি পাপুয়া মুভমেন্ট নামে একটি ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলা দল এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কিছু সদস্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে তীর-ধনুক। আন্দোলনকারীদের মধ্যে অনেকেই আছে সাবেক ছাত্র, সরকারি কর্মকর্তা বা চাকরিচ্যুত সেনাবাহিনীর সদস্য। স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলনরত বেশিরভাগ সমর্থক পালিয়ে পাপুয়া নিউগিনিতে চলে গেছে, নতুবা আন্দোলনকারীদের প্রতি নিজেদের সহানুভূতি বজায় রেখে চলেছে। ইন্দোনেশিয়ার কাছে ইরিয়ান জায়া একটি বিশাল সম্পদ বলে বিবেচিত হওয়ার কারণে এ প্রদেশটিকে ওরা হারাতে নারাজ। ইরিয়ান জায়ায় নানা প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে। গোটা অঞ্চলের ৮৫ ভাগ জুড়ে রয়েছে রেইন ফরেস্ট, যেখান থেকে পাওয়া যাচ্ছে মূল্যবান কাঠ। পাহাড়ে সোনা এবং তামার বড়সড় ভাণ্ডারের সন্ধান মিলেছে। নিম্নভূমিতে মিলেছে তেলের সন্ধান। ইন্দোনেশিয়ার সরকারের কাছে ইরিয়ান জায়া মানুষ বসবাসের প্রকাণ্ড এক অঞ্চল বলেও বিবেচিত। দেশের অর্ধেকেরও বেশি লোকের বাস ছিল জাভা দ্বীপে।


এক সময়ের অচেনা, অজানা ইরিয়ান জায়া এখন বিদেশি পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক দ্বীপটি দেখার জন্য ভিড় জমান। পর্যটকদের মধ্যে ইউরোপিয়ানদের সংখ্যাই বেশি। কেউ যাচ্ছে উপজাতিদের জীবনযাত্রার সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করতে, আবার কেউ যাচ্ছে বেলিয়েম ভ্যালিতে বেড়াতে। কারও কারও আকর্ষণ আবার আসমাট কোস্ট্রে নৌকা চালানোয়। পর্যটকদের জন্য সরবরাহকৃত ব্রশিউরে লেখা থাকে, 'প্রস্তর যুগের মানুষদের দর্শন করতে আসুন।'


এরই মধ্যে ওখানকার কেন্দ্রীয় সরকার ইরিয়ান জায়ায় বসবাসের জন্য দুই লাখেরও বেশি লোক পাঠিয়ে দিয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে আদিম মানুষদের এই রহস্যঘেরা এলাকায়। সভ্যতার বিবর্তনে এখানে দ্রুত গড়ে উঠেছে শহর, রাস্তা, স্কুল এবং বিমানবন্দর। প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি অভিবাসী নিজ ইচ্ছায় ইরিয়ান জায়ায় আবাস গড়ে তুলেছেন। এখানকার নিম্নভূমির বনাঞ্চলে ব্রিটিশ এবং আমেরিকানরা বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং তেলের সন্ধানে ঘুরছে। অস্ট্রেলিয়ানরা করোয়াই অঞ্চল চষে ফেলছে সোনার সন্ধানে।


অবশ্য ইরিয়ান জায়ার উপজাতিদের দেখলে মনে হয় না তারা সভ্যতার ছোঁয়া পাচ্ছে। ইরিয়ান জায়ার উপজাতিদের মধ্যে রয়েছে ইয়ালি, আসমাট, করোয়াই ইত্যাদি উপজাতি। এরা সবাই ন্যাংটা থাকে, সবারই বাস গাছের ডালে বানানো কুঁড়েঘরে। বিশাল সব গাছের মাথায় ঘর বানিয়ে থাকে ইরিয়ান জায়ার বুনো উপজাতিরা। করোয়াই উপজাতির কথাই ধরা যাক, এরা হলো বৃক্ষনিবাসী আরেক উপজাতি কোম্বাইদের প্রতিবেশী। ৬০০ বর্গমাইলের মহাঅরণ্যে কমপক্ষে ৩ হাজার করোয়াইর বাস। এরা ইরিয়ান জায়ার আড়াইশ' উপজাতির একটি। কোম্বাইদের সঙ্গে নানাদিক থেকে মিল আছে করোয়াইদের, শুধু ভাষাটা ভিন্ন। এ দুই উপজাতির সংস্কৃতিই এখন বিপন্নের পথে। এরা যে অঞ্চলে বাস করে সেখানে মূল্যবান খনিজ বা দামি গাছ নেই বলেই হয়তো ইন্দোনেশিয়ান সরকার এদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল দীর্ঘদিন। কোম্বাই এবং করোয়াই উভয় উপজাতি তাদের গাছের চূড়ার বাড়িতে উঠে মই বেয়ে, আগুন জ্বালায় কাঠের সঙ্গে বেতের ফিতে বা দড়ি ঘষে। এদের খাদ্যের প্রধান উৎস হলো সাগুপামের গাছে। এ গাছের কোমল তন্তু বা আঁশ গুঁড়িয়ে মণ্ড বানায়। ওই মণ্ড পানিতে ভিজিয়ে পিঠা তৈরি করে। করোয়াইদের প্রধান একটি উৎসব হয় এই সাগু গাছ নিয়ে। উৎসবের কর্মকাণ্ড শুরু হয় কয়েক মাস আগ থেকেই, উৎসবের দিনক্ষণ ঠিক করা হয় চাঁদ দেখে। প্রথমে এরা জঙ্গলের নির্দিষ্ট একটি অংশ পরিষ্কার করে একটি পবিত্র খুঁটির পাশে একটি লং হাউস তৈরি করে। তারপর সাগুপামের গাছ সাবধানে কেটে ফেলে রাখে পচার জন্য। পচা গাছে গোবরে পোকা ঢোকে, ডিম পাড়ে। মাস দুই পর করোয়াইরা ওই পচা অংশ কেটে নেয় আগুনে পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য। আমন্ত্রিত অতিথিরা আসার পর নাচ-গান আর গল্পের মধ্যে শুরু হয় ভোজনপর্ব। অনুষ্ঠান চলতে থাকে নানা আয়োজনে। কখনো কখনো সারা রাত চলে অনুষ্ঠান। আসমাট নামে ইরিয়ান জায়ার আরেকটি উপজাতি আছে। এরা তাদের ভোজন উৎসব করে গোবরে পোকার শুককীট দিয়ে। এই আসমাট জাতি এক সময় কেবল যুদ্ধই করে বেড়াত। আর যুদ্ধ করার আগে তারা নানা উৎসবের আয়োজন করত। সেই উৎসবে ওরা শত্রুপক্ষের লোকদের পুড়িয়ে খেত। নরখাদক হিসেবে আসমাটদের কুখ্যাতি রয়েছে। কিন্তু ইন্দোনেশিয়ান সরকার আসমাটদের এসব অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়, পুড়িয়ে দেয় উৎসবে ব্যবহৃত সব জিনিসপত্র। এরা ক্যাথলিক মিশনারিদের আর্থিক সাহায্যে এখনো দু-একটি উৎসব করার সুযোগ পায়। তবে যুদ্ধে যাওয়ার অবকাশ তাদের এখন নেই। ইন্দোনেশীয় সরকার অবশ্য চেষ্টা করছে অসভ্য এই উপজাতিগুলোকে সভ্য করে তোলার জন্য। সরকার যে এ ব্যাপারে অনেকটা সফল তা বোঝা যায়, ইরিয়ান জায়ার একটি গ্রাম আঙুরুতে গেলে। এখানে অর্ধনগ্ন উপজাতি মেয়েরা ভোর বেলায় ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বাজারে আসে সওদা করতে। তারা মিষ্টি আলু, শিম এবং আখের দরদাম করে, জিনিস কেনে কাগুজে নোট দিয়ে, কড়ি দিয়ে নয়।


তবে একটা সময়, যখন মিশনারিরা প্রথম এ অঞ্চলে আসে তখন ইরিয়ান জায়ার উপজাতিরা ব্যবসায়িক লেনদেন করত কড়ি দিয়েই। এখন পাহাড়ের ধারের লোকজন বাগানের আগাছা পরিষ্কার করে ইস্পাতের কাঁচি দিয়ে, প্রাগৈতিহাসিক পাথরের কুড়াল ফেলে দিয়েছে তারা। ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসার জন্য (এটি এ দেশের সবচেয়ে বড় হন্তারক রোগ) গির্জার ক্লিনিকেও যায়। এ থেকেই বোঝা যায়, প্রস্তর যুগের মানুষ বলে কথিত এক সময়ের নরমাংসভোজী এসব উপজাতি ক্রমশ সভ্য হয়ে উঠছে, আধুনিকতার ছোঁয়া তাদের মনে অবশেষে লাগতে শুরু করেছে এবং তারা ১৫০ ফুট উঁচু গেছোবাড়িতে বাস করলেও ইদানীং নগরায়নের সুযোগ-সুবিধার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। সভ্যতার ছোঁয়া লাগতে শুরু করলেও আধুনিকতা থেকে পিছিয়ে থাকা এই দ্বীপ আর এখানকার বৃক্ষচারী-নরখাদকদের দেখলে প্রাচীন মানুষ আর মানব সভ্যতার বিবর্তন সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।


সূত্র বাংলাদেশ প্রতিদিন

0 comments: