দেখছেন,মেয়েটা কেমন জাহান্নামী?জোর করে প্রেমিকরে বিয়ে করে ফেলছে
মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠতেই ঘুম জড়ানো চোখে স্ক্রিনে তাকাতেই অপরিচিত নাম্বার মেজাজ চরম খারাপ গেল । রাত দুপুরে ঘুমের তেরটা বাজানো আজাইরা পাবলিকের ১৪গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে রিসিভ করে হ্যালো বলতেই মুমু বেশ উত্তেজিত কন্ঠে বলল, ‘ঐ, গন্ডারের মত ঘুমিয়ে আছিস। আর এদিকে লঙ্কাকান্ড হয়ে গেছে। ১০মিনিটের মধ্যে বাসার সামনে যদি না আসিস কালকে তোর খবর আছে কইলাম! বললাম, ‘লঙ্কাকান্ড কেন ভূমিকম্পে যদি বাসার ছাদও ভেঙে পড়ে আমি বিছানা ছাড়ছিনা।’ প্রায় মাঝরাতে আমাকে দেখার শখ জাগে মুমুর। যখনি দেখার ইচ্ছা হয় নতুন নাম্বার ঢুকিয়ে একেকসময় একেক বাহনা করে কল করে। আর আমাকে কাঁচা ঘুম থেকে উঠে গিয়ে ওদের বাসার সামনের ল্যাম্পপোষ্টের নিচে কয়েক রাউন্ড চক্কর লাগাতে হয়! কপালে যাই থাকুক কাল দেখা যাবে! লাইন কেটে দিয়ে মোবাইলের সুইচ অফ করে দিলাম ঘুম!
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা শেষ করে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি মুমু রিক্সা থেকে নামছে। আমাকে দেখেই আবার রিক্সায় চড়ে বসে বলল, ‘আমার লক্ষী জানুটাকে, সোনা মানিকটাকে অনেক অনেক ফ্রেশ দেখাচ্ছে। বেশ ভাল ঘুম হয়েছে তাই না টিয়া পাখি? রিক্সায় উঠে আস কলিজার টুকরাটা আমার!’ ৩বছরের প্রেমে এই প্রথম মুমুর মুখ থেকে এমন কুসুম কুসুম ভালবাসা টাইপের ডায়লগ শুনে খুশির বদলে আতংকিত হবার পাশাপাশি লজ্জাও পাচ্ছিলাম রিক্সাওয়ালার মুচকি হাসি দেখে! লক্ষণ মোটেই ভাল না। সুবোধ বালকের মত রিক্সায় উঠে বসে বললাম, ‘যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেব। তবুও কোন সিনক্রিয়েট করোনা প্লিজ।’ মুমু মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘এতদিন ছিলি আমার জানপাখি। আজকের পর হবি তোতাপাখি। দেখ, আমার বাপ তোর মত অগোছালো, হাজার বিশেক টাকা বেতনে চাকরিওয়ালা ছেলের কাছে আমার মত সুন্দরী, স্মার্ট মেয়েকে বিয়ে দেবে না । যা শাস্তি দেব তাই মেনে নিবি বলেছিস ! শাস্তি হিসেবে আজকেই আমাকে বিয়ে করতে হবে! রিক্সাওয়ালা ভাই কাজী অফিস চিনেন?’ ব্যাটা রিক্সাওয়ালা ‘আফা চিনি না মানে! আমিও রতনের মা’রে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করছি। এইতো একদম কাছেই’ বলেই রিক্সা চালাতে শুরু করে দিল। ভাবলাম মুমু মজা করছে। কিন্তু কাজী অফিসের সামনে নেমে রিক্সাওয়ালাকে ৩০টাকার ভাড়া ৩০০ টাকা দিয়ে বলল, ‘ভাই, দোয়া কইরেন।’ তারপর আমার হাত ধরে সোজা কাজী অফিসের ভেতর।
কাজী অফিস থেকে যখন বের হলাম তখন দুপুর ১টা। জীবিত থেকে বিবাহিত হবার ঘোর না কাটতেই মুমু আমার মোবাইল নিয়ে সিমটা বের করে দুই টুকরো করে নতুন একটা সিম ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, ‘ এই নাম্বারে যদি কোন মেয়ে কল করে তাহলে তোর কপালে শনির দশা আছে । রাস্তা - ঘাটে সুন্দরী কোন মেয়ের দিকে ভুলেও তাকাবি তো তোর খাওয়া বন্ধ করে দেব। এখন থেকে সব ধরনের আজাইরা আড্ডা বন্ধ। অফিস শেষে সোজা বাসায় আসবি। এদিক সেদিক হবে খবর করে ছাড়ব কইয়া রাখলাম। হ্যাবলার মত বউ নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকবি? বাসায় যাবিনা?’ অবাক হয়ে বললাম, ‘কোন বাসায় ?’ কৃত্রিম রাগের ভান করে বলল, ‘ কস কি কিরে মমিন ! কোন বাসা মানে? তোর কি ঘর জামাই থাকার ইচ্ছা ছিল নাকি?’ বুঝলাম, ও পুরো প্ল্যান করেই ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে। কিন্তু বাসায় গিয়ে আম্মুকে কি বলব? নিরুপায় হয়ে বাসার উদ্ধ্যেশ্যে রিক্সায় উঠলাম। বাসার দুরত্ব যতই ঘনিয়ে আসছে ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে। আমি ভয়ে মরি পাশে বসে মুমু এমন ভাবে কথা বলছে যেন কিছুই হয়নি!
বাসায় ঢুকেই মুমু আম্মুর পা ধরে সালাম করে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘এতদিন আন্টি ডেকেছি। কিন্তু, আজ থেকে আপনি আমার মা। আমার কোন দোষ নেই মা। অনেকবার বলেছি আমার আব্বু - আম্মু রাজী হবেনা জানি তাই বলে আন্টিকে ছাড়া বিয়ে করা মোটেই ঠিক হবে না। তোদের বাসা থেকেও যদি মেনে না নেই তখন যাব কোথায় ? এটা শুনে আমাকে কি বলেছে জানেন মা...?’ আম্মু আমার দিকে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বললেন, ‘কি বলেছে মা?’ মা ডাক শুনে আম্মুকে আরো আদুরে ভঙ্গিতে জড়িয়ে ধরে মুমু বলল, ‘বলেছে , আম্মু না মানলে বস্তিতে গিয়ে থাকব। মা, আমি লাটি এনে দিলে আপনি ওকে লাঠিপেটা করবেন? আচ্ছা মা, বাবা বাসায় আসলে আমাকে বকা দেবে? ’ আম্মু মুমুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘না , মা। তোমার শ্বশুর তোমাকে কিছু বলবে না। শোন মা , ঘরে গর্দভটাকে তুই করে বলিও কিন্তু আত্মীয়স্বজনদের সামনে তুমি করে বলবে। না হয় তোমাকে পঁচা মেয়ে বলবে। আমি না তোমার মা? মায়ের সব কথা শুনবা কেমন মামনি? আর তোমার আম্মুকে যেমন তুমি করে বল আমাকেও তুমি করে বলবা। আপনি বলা লাগবে না।’ মুমু লক্ষী মেয়ের মত বলল, ‘ওকে মা। ক্ষুধা পেয়েছে এখন খেতে দাও।’
তব্দা খেয়ে গেলাম। কি চমৎকার ভাবে ‘ মা ’ , ‘ মা ’ করে সব দোষ আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে আম্মুকে পটিয়ে ফেলল মুমু! অনেক চেষ্টার পরও গলা দিয়ে একটা শব্দও বের হলনা। বিয়ের প্রথম দিনই এই অবস্থা আগামীতে না জানি কি করবে !
সূত্র :দৈনিক ইত্তেফাক
0 comments: