আমি চিরতরে দূরে সরে যাবো/তবু আমারে দেব না ভুলিতে = সেই চিরবিদ্রোহী ও চিরপ্রেমিক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ১১৩তম জন্মজয়ন্তী
গাহি সাম্যের গান--
মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাহি, নহে কিছু মহীয়ান!
মুক্তসমাজ মুক্তসংস্কৃতি মুক্তচিন্তা নির্মাণের কবি ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি জাত-পাত, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র ও ছোট-বড় এসকল কুসংস্কার ও সংকীর্ণতাকে কখনও আমল দেননি। গোড়ামিঁ-ধর্মান্ধতা ও কথিত কাল্পনিক কোনো দেব-দেবী-ঈশ্বরে আস্থা রাখেননি। বরং এসব গোঁড়ামির মূলে নির্মমভাবে আঘাত করেছেন বারংবার। মানুষকে সব ধরনের চেতনার দৈণ্যতা ও সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত করার জন্য শক্ত হাতে লিখেছেন অবিরাম। তিনি বলেছেন
হাবিদ্রোহী রণক্লান্ত/আমি সেই দিন হব শান্ত,/ যবে উত্পীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না-/অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না’
‘আমি চিরতরে দূরে সরে যাবো/তবু আমারে দেব না ভুলিতেঃ’ এমন আস্থাপূর্ণ উচ্চারণ ছিল আমাদের প্রিয় কবি, প্রাণের কবি, জাতীয় কবি নজরুলের। বাংলা সাহিত্যের কাব্যভুবনে তার আবির্ভাব ঘটেছিল ধূমকেতুর মতো, যার দীপ্ত ছটায় উদ্ভাসিত হয়েছিল বাঙালি জাতির মন ও মনন। সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে মেতে জাতিকে অনেক দিয়েছেন তিনি। আর বিদায়বেলায় আপনার মনে গন্ধ বিধুর ধুপের মতো পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হয়েছেন একদিন। তারপরও তিনি চিরজীবী বাঙালির মানসে। ভুলতে দেননি তিনি আমাদের। তাকে ভোলার দুঃসাহস নেই বাঙালি জাতির। বাংলা সাহিত্যে সাম্য, সংগ্রাম ও বিদ্রোহের কবি, বিরহ ও প্রেমের কবি জাতীয় নবজাগরণের দিশারী, কাজী নজরুল ইসলাম। কবি নজরুলের বিদ্রোহ ছিল শোষণ-নির্যাতন, জুলুম-অত্যাচার, বিভেদ-বৈষম্য, অসত্য ও অসাম্যের বিরুদ্ধে। তাই তো তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন তার কবিতা, গান, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস, চলচ্চিত্র ও ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে। শিশু বয়স থেকেই কঠিন জীবন সংগ্রামের বাস্তব উপলব্ধি আর পরাধীনতার গ্লানি নজরুলের মনমানসিকতায় যে তীক্ষè প্রভাব ফেলেছিল, তারই ধারাবাহিকতায় বাকরুদ্ধ হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি মাথা উঁচু করেছিলেন। সেই চিরবিদ্রোহী ও চিরপ্রেমিক জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের আজ ১১৩তম জন্মজয়ন্তী। একই সঙ্গে আজ উদযাপিত হচ্ছে কবির হƒদয় নিংড়ানো প্রতিবাদ ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ৯০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানও।
0 comments: