নজরুল গীতি অকূল তুফানে   নাইয়া অকূল তুফানে নাইয়া কর পার পাপ দরিয়াতে ডুবে মরি কান্ডারী নাই কড়ি নাই তরী প্রভু পারে তরিবার ।। থির নহে চিত প...

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজি নজরুল এর কিছু গানের তালিকা

12:22:00 PM Mainuddin 1 Comments


নজরুল গীতি


অকূল তুফানে নাইয়া
অকূল তুফানে নাইয়া কর পার
পাপ দরিয়াতে ডুবে মরি কান্ডারী
নাই কড়ি নাই তরী প্রভু পারে তরিবার।।
থির নহে চিত পাপ-ভীত সদা টলমল
পুণ্যহীন শূণ্য মরু সম হৃদি-তল
নাহি ফুল নাহি ফল,
পার কর হে পার কর ডাকি কাঁদি অবিরল
পার কর হে পার কর
নাহি সঙ্গী নাহি বন্ধু নাহি পথেরই সম্বল
সাহারায় নাহি জল
শাওন বরিষা সম তব করুণার ধারা
ঝরিয়া পড়ুক পরানে আমার।।

-->
-->





অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা 

অয়ি চঞ্চল-লীলায়িত-দেহা, চির-চেনা
ফোটাও মনের বনে তুমি বকুল হেনাচির-চেনা।।
যৌবন-মদ গর্বিতা তন্বী
আননে জ্যোৎস্না, নয়নে বহ্নি,
তব চরণের পরশ বিনা
অশোক তরু মুঞ্জরে না, চির-চেনা।।
নন্দন-নন্দিনী তুমি দয়িতা চির-আনন্দিতা,
প্রথম কবির প্রথম লেখা তুমি কবিতা
নৃত্য শেষের তব নূপুরগুলি হায়
রয়েছে ছড়ানো আকাশের তারকায়
সুর-লোক-ঊর্বশী হে বসন্ত-সেনা! চির-চেনা।।



অনেক কথা বলার মাঝে

অনেক কথা বলার মাঝে
লুকিয়ে আছে একটি কথা
বলতে নারি সেই কথাটি
তাই এ মুখর ব্যাকুলতা।।
সেই কথাটি ঢাকার ছলে
অনেক কথা যাই গো বলে
ভাসি আমি নয়ন-জলে
বল্‌তে গিয়ে সেই বারতা।।
অবকাশ দেবে কবে
কবে সাহস পাব প্রাণে
লজ্জা ভুলে সেই কথাটি
বল্‌ব তোমায় কানে কানে
মনের বনে অনুরাগে
কত কথার মুকুল জাগে
সেই মুকুলে বুকে জাগাও
ফুটে উঠার ব্যাকুলতা।।
-->

অনাদি কাল হতে 

অনাদি কাল হতে অনন্ত লোক
গাহে তোমারই জয়
আকাশ-বাতাস রবি-গ্রহ তারা চাঁদ,
হে প্রেমময়।।
সমুদ্র-কল্লোল নির্ঝর-কলতান-
হে বিরাট, তোমারই উদার জয়গান;
ধ্যান গম্ভীর কত শত হিমালয়
গাহে তোমারই জয়।।
তব নামের বাজায় বীণা বনের পল্লব
জনহীন প্রান্তর স্তব করে, নীরব
সকল জাতির কোটি উপাসনালয়
গাহে তোমারই জয়।।
আলোকের উল্লাসে, আঁধারের তন্দ্রায়
তব জয়গান বাজে অপরূপ মহিমায়,
কোটি যুগ-যুগান্ত সৃষ্টি প্রলয়
গাহে তোমারই জয়।।
-->

ঝিলের জলে কে 

ঝিলের জলে কে ভাসালো
নীল শালুকের ভেলা
মেঘ্‌লা সকাল বেলা
বেণু-বনে কে খেলে রে
পাতা-ঝরার খেলা
মেঘ্‌লা সকাল বেলা।।
কাজল-বরণ পল্লী মেয়ে
বৃষ্টি ধারায় বেড়ায় নেয়ে,’
সে দীঘির ধারে মেঘের পানে
রয় চেয়ে একেলা
মেঘ্‌লা সকাল বেলা।।
দুলিয়ে কেয়া ফুলের বেণী
শাপ্‌লা মালা পরে
খেল্‌তে এলো মেঘ পরীরা
ঘুম্‌তী নদীর চরে
বিজলীতে কে দূরে বিমানে
সোনার চুড়ির ঝিলিক্‌ হানে,
বনে বনে কি বসালী
যুঁই-চামেলীর মেলা,
মেঘ্‌লা সকাল বেলা।।
-->

এই শিকল পরা ছল 

এই শিকল পরা ছল মোদের এ শিকল-পরা ছল
এই শিকল পরেই শিকল তোদের করবো রে বিকল।।
তোদের বন্ধ কারায় আসা মোদের বন্দী হতে নয়,
ওরে ক্ষয় করতে আসা মোদের সবার বাঁধন-ভয়
এই বাঁধন পরেই বাঁধন-ভয়কে করবো মোরা জয়,
এই শিকল-বাঁধা পা নয় এ শিকল ভাঙা কল।।
তোমার বন্ধ ঘরের বন্ধনীতে কর্‌ছ বিশ্ব গ্রাস,
আর ভয় দেখিয়েই কর্‌বে ভাবছো বিধির শক্তি হ্রাস
সেই ভয়-দেখানী ভূতের মোরা কর্‌বো সর্বনাশ,
এবার আন্‌বো মাভৈঃ বিজয়-মন্ত্র বল-হীনের বল।।
তোমরা ভয় দেখিয়ে কর্‌ছ শাসন জয় দেখিয়ে নয়;
সেই ভয়ের টুটি ধর্‌ব টিপে কর্‌ব তারে লয়
মোরা আপনি মরে মরার দেশে আন্‌ব বরাভয়,
রে ফাঁসি আন্‌ব হাসি মৃত্যু-জয়ের ফল।।
ওরে ক্রন্দন নয় বন্ধন এই শিকল-ঝঞ্ঝনা,
এ যে মুক্তি-পথের অগ্রদূতের চরণ-বন্দনা!
এই লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে হান্‌ছে লাঞ্ছনা,
মোদের অশ্রু দিয়েই জ্বলবে দেশে আবার বজ্রানল।।
-->

ব্রজ গোপী খেলে 

ব্রজ গোপী খেলে হরি
খেলে আনন্দ নবঘন শ্যাম সাথে
রাঙা অধরে ঝরে হাসির কুম্‌কুম্‌
অনুরাগ-আবীর নয়ন-পাতে
পিরীতি-ফাগ মাখা গৌরীর সঙ্গে
হরি খেলে হরি উন্মাদ রঙ্গে
বসন্তে এ কোন কিশোর দুরন্ত
রাধারে যে নিতে এলো পিচকারী হাতে।।
গোপীনীরা হানে অপাঙ্গ খর শর
ভ্রুকুটি ভঙ্গ অনঙ্গ আবেশে
জর জর থর থর শ্যামের অঙ্গ
শ্যামল তনুতে হরিত কুঞ্জে
অশোক ফুটেছে যেন পুঞ্জে পুঞ্জে
রঙ-পিয়াসী মন ভ্রমর গুঞ্জে
ঢালো আরো ঢালো রঙ
প্রেম-যমুনাতে।।
-->

অঞ্জলি লহ মোর

অঞ্জলি লহ মোর সংগীতে
প্রদীপ-শিখা সম কাঁপিছে প্রাণ মম
তোমায়, হে সুন্দর, বন্দিতে!
সঙ্গীতে সঙ্গীতে।।
তোমার দেবালয়ে কি সুখে কি জানি
দুলে দুলে ওঠে আমার দেহখানি
আরতি-নৃত্যের ভঙ্গীতে
সঙ্গীতে সঙ্গীতে।।
পুলকে বিকশিল প্রেমের শতদল
গন্ধে রূপে রসে টলিছে টলমল
তোমার মুখে চাহি আমার বাণী যত
লুটাইয়া পড়ে ঝরা ফুলের মতো
তোমার পদতলে রঞ্জিতে
সঙ্গীতে সঙ্গীতে।।
-->

বেল ফুল এনে দাও 

বেল ফুল এনে দাও চাই না বকুল
চাই না হেনা, আনো আমের মুকুল।।
গোলাপ বড় গরবী
এনে দাও কবরী
চাইতে যুথী আনো টগর-কি ভুল।।
কি হবে কেয়া, দেয়া নাই গগনে;
আনো সন্ধ্যামালতী গোধুলী-লগনে
গিরি-মল্লিকা কই
চামেলী পেয়েছে সই
চাঁপা এনে দাও, নয় বাঁধব না চুল।।
-->

তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী

তিমির-বিদারী অলখ-বিহারী
কৃষ্ণ মুরারী আগত ঐ
টুটিয়া আগল নিখিল পাগল
সর্বসহা আজি সর্বজয়ী।।
বহিছে উজান অশ্রু-যমুনায়
হৃদি-বৃন্দাবনে আনন্দ ডাকে, ‘আয়’,
বসুধা যশোদার স্নেহধার উথলায়
কাল্‌-রাখাল নাচে থৈ-তা-থৈ।।
বিশ্ব ভরিওঠে স্তব নমো নমঃ
অরির পুরী-মাঝে এলো অরিন্দম
ঘিরিয়া দ্বার বৃথা জাগে প্রহরী জন
বন্ধ কারায় এলো বন্ধ-বিমোচন,
ধরিঅজানা পথ আসিল অনাগত
জাগিয়া ব্যথাহত ডাকে, মাভৈঃ।।
-->

ভীরু এ মনের কলি 

ভীরু এ মনের কলি
ফোটালে না কেন ফোটালে না-
জয় করে কেন নিলে না আমারে,
কেন তুমি গেলে চলি।।
ভাঙ্গিয়া দিলে না কেন মোর ভয়,
কেন ফিরে গেলে শুনি অনুনয়;
কেন সে বেদনা বুঝিতে পার না
মুখে যাহা নাহি বলি।।
কেন চাহিলে না জল
নদী তীরে এসে,
সকরুণ অভিমানে চলে গেলে
মরু-তৃষ্ণার দেশে।।
ঝড়ো হাওয়া ঝরা পাতারে যেমন
তুলে নেয় তার বক্ষে আপন
কেন কাড়িয়া নিলে না তেমনি করিয়া
মোর ফুল অঞ্জলি।।
-->

কে বিদেশী বন উদাসী’ 

কে বিদেশী বন উদাসী
বাঁশের বাঁশী বাজাও বনে
সুর-সোহাগে তন্দ্রা লাগে
কুসুম-বাগের গুল-বদনে।।
ঝিমিয়ে আসে ভোমরা-পাখা
যুঁথীর চোখে আবেশ মাখা
কাতর ঘুমে চাঁদিমা রাকা
ভোর গগনের দর্‌-দালানে
দর্‌-দালানে ভোর গগনে।।
লজ্জাবতীর লুলিত লতায়
শিহর লাগে পুলক-ব্যথায়
মালিকা সম বঁধুরে জড়ায়
বালিকা বঁধু সুখ-স্বপনে।।
বৃথাই গাঁথি, কথার মালা
লুকাস্‌ কবি বুকের জ্বালা,
কাঁদে নিরালা বন্‌শীওয়ালা
তোরই উতালা বিরহী মনে।।
-->

যায় ঝিলমিল ঝিলমিল 

যায় ঝিলমিল ঝিলমিল ঢেউ তুলে
দেহের কূলে কে চঞ্চলা দিগঞ্চলা
মেঘ-ঘন-কুন্তলা
দেয় দোলা পূব-সমীরণে
বনে বনে দেয় দোলা।।
চলে নাগরী দোলে ঘাগরী
কাঁখে বরষা-জলের গাগরী
বাজে নূপুর-সুর-লহরী
রিমি ঝিম্‌, রিম্‌ ঝিম্‌, রিম্‌ ঝিম্‌ চল-চপলা।।
দেয়ারী তালে কেয়া কদম নাচে
ময়ূর-ময়ূরী নাচে তমাল-গাছে
এলায়ে মেঘ-বেণী কাল-ফণী
আসিল কি দেব-কুমারী
নন্দন-পথ-ভোলা।।
-->

ওরে নীল যমুনার জল

ওরে নীল যমুনার জল!
বল রে মোরে বল কোথায় ঘনশ্যাম-
আমার কৃষ্ণ ঘনশ্যাম
আমি বহু আশায় বুক বেঁধে যে এলাম-
এলাম ব্রজধাম।।
তোর কোন্‌ কূলে কোন্‌ বনের মাঝে
আমার কানুর বেণু বাজে,
আমি কোথায় গেলে শুনতে পাব
রাধা রাধানাম।।
আমি শুধাই ব্রজের ঘরে ঘরে-
কৃষ্ণ কোথায় বল্‌;
কেন কেউ কহে না কথা,
হেরি সবার চোখে জল
বল্‌ রে আমার শ্যামল কোথায়,
কোন্‌ মথুরায় কোন দ্বারকায়-
বল্‌ যমুনা বল
বাজে বৃন্দাবনের কোন্‌ পথে তাঁর
নূপুর অভিরাম।।
-->

মহাকালের কোলে এসে

মহাকালের কোলে এসে
গৌরী হল মহাকালী,
শ্মশান-চিতার ভস্ম মেখে
ম্লান হল মার রূপের ডালি।।
তবু মায়ের রূপ কি হারায়
সে যে ছড়িয়ে আছে চন্দ্র তারায়,
মায়ের রূপের আরতি হয়
নিত্য সূর্য্য-প্রদীপ জ্বালি।।
উমা হল ভৈরবী হায়
বরণ করে ভৈরবেরে,
হেরিশিবের শিরে জাহ্নবীর
শ্মশানে মশানে ফেরে
অন্ন দিয়ে ত্রি-জগতে
অন্নদা মোর বেড়ায় পথে,
ভিক্ষু শিবের অনুরাগে
ভিক্ষা মাগে রাজদুলালী।।
-->

মোমের পুতুল মমীর 

মোমের পুতুল মমীর দেশের মেয়ে নেচে যায়
বিহবল চঞ্চল পায়।।
খর্জুর-বীথির ধারে
সাহারা মরুর পারে
বাজায় ঘুমুর ঝুমুর ঝুমুর মধুsর ঝঙ্কারে
উড়িয়ে ওড়না লুহাওয়ায়
পরী-নটিনী নেচে যায়
দুলে দুলে দূরে সুদূর।।
সুর্মা-পরা আঁখি হানে আস্‌মানে,
জ্যোৎস্না আসে নীল আকাশে তার টানে
ঢেউ তুলে নীল দরিয়ায়
দিল-দরদী নেচে যায়
দুলে দুলে দূরে সুদূর।।
-->

মোরে ভালোবাসায় ভুলিও না 

মোরে ভালোবাসায় ভুলিও না
পাওয়ার আশায় ভুলিও
মোরে আদর দিয়ে তুলিও না
আঘাত দিয়ে তুলিও।।
হে প্রিয় মোর একি মোহ
এ প্রাণ শুধু চায় বিরহ
তুমি কঠিন সুরে বেঁধে আমায়
সুরের লহর দুলিও।।
প্রভু শান্তি চাহে পুরাতে সাধ
আমি চাহি পুড়িতে
সুখের ঘরে আগুন জ্বেলে
(বঁধু) পথে পথে ঝুরিতে;
নগ্ন দিনের আলোকেতে
চাহি না তোমায় বক্ষে পেতে
তুমি ঘুমের মাঝে স্বপনেতে
হৃদয়-দুয়ার খুলিও।।
-->

দাও শৌর্য, দাও ধৈর্য্য 

দাও শৌর্য, দাও ধৈর্য্য,
হে উদার নাথ, দাও প্রাণ
দাও অমৃত মৃত জনে,
দাও ভীত-চিত জনে,
শক্তি অপরিমাণ
হে সর্বশক্তিমান।।
দাও স্বাস্থ্য, দাও আয়ু,
স্বচ্ছ আলো, মুক্ত বায়ু,
দাও চিত্ত অনিরুদ্ধ,
দাও শুদ্ধ জ্ঞান
হে সর্বশক্তিমান।।
দাও দেহে দিব্য কান্তি,
দাও গেহে নিত্য শান্তি,
দাও পুণ্য প্রেম ভক্তি, মঙ্গল কল্যাণ
ভীতি নিষেধের ঊর্ধে স্থির,
রহি যেন চির-উন্নত শির
যাহা চাই যেন জয় করে পাই
গ্রহণ না করি দান
হে সর্বশক্তিমান।।
-->

লাইলী তোমার এসেছে 

লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া
মজনু গো আঁখি খোলো
প্রিয়তম! এতদিনে বিরহের
নিশি বুঝি ভোর হলো।।
মজনু! তোমার কাঁদন শুনিয়া মরু-নদী পর্বতে
বন্দিনী আজ ভেঙেছে পিঞ্জর বাহির হয়েছে পথে
আজি দখিনা বাতাস বহে অনুকূল,
ফুটেছে গোলাপ নার্গিস ফুল,
ওগো বুলবুল, ফুটন্ত সেই
গুলবাগিচায় দোলো।।
বনের হরণ-হরিণী কাঁদিনী পথ দেখায়েছে মোরে,
হুরী ও পরীরা ঝুরিয়া ঝুরিয়া চাঁদের প্রদীপ ধরে
পথ দেখায়েছে মোরে
আমার নয়নে নয়ন রাখিয়া
কি বলিতে চাও, হে পরান-পিয়া!
নাম ধরে ডাকো ডাকো মোরে স্বামী
ভোলো অভিমান ভোলো।।
-->

তুমি সুন্দর তাই 

তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়
সেকি মোর অপরাধ?
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী
বলে না তো কিছু চাঁদ।।
চেয়েচেয়েদেখি ফোটে যবে ফুল
ফুল বলে না তো সে আমার ভুল
মেঘ হেরিঝুরেচাতকিনী
মেঘ করে না তো প্রতিবাদ।।
জানে সূর্যেরে পাবে না
তবু অবুঝ সূর্যমুখী
চেয়েচেয়েদেখে তার দেবতারে
দেখিয়াই সে যে সুখী।।
হেরিতে তোমার রূপ-মনোহর
পেয়েছি এ আঁখি, ওগো সুন্দর
মিটিতে দাও হে প্রিয়তম মোর
নয়নের সেই সাধ।।
-->

নূরজাহান! নূরজাহান! 

নূরজাহান! নূরজাহান!
সিন্ধু নদীতে ভেসে,
এলে মেঘলামতীর দেশে
ইরানী গুলিস্তান।।
নার্গিস লালা গোলাপ আঙ্গুর-লতা
শিরিঁ ফরহাঁদ সিরাজের উপকথা
এনেছিলে তুমি তনুর পেয়ালা ভরি
বুলবুলি দিলরুবা রবাবের গান।।
তব প্রেমে উন্মাদ ভুলিল সেলিম,
সে যে রাজাধিরাজ-
চন্দন সম মাখিল অঙ্গে
কলঙ্ক লোক-লাজ
যে কলঙ্ক লয়ে হাসে চাঁদ
নীল আকাশে,
যাহা লেখা থাকে শুধু
প্রেমিকের ইতিহাসে,
দিবে চিরদিন নন্দন-লোক-চারী
তব সেই কলঙ্ক
সে প্রেমের সম্মান।।
-->

ও মন রমজানের 

ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশীর ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন্‌ আসমানী তাগিদ।।
তোর সোনা-দানা বালাখানা সব রাহেলিল্লাহ্‌
দে জাকাত মুর্দ্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিদ্‌।।
আজ পড়বি ঈদের নামাজ রে মন সেই সে ঈদ গাহে
যে ময়দানে সব গাজী মুসলিম হয়েছে শহীদ।।
আজ ভুলে যা তোর দোস্ত ও দুশমন হাত মিলাও হাতে
তোর প্রেম দিয়ে কর বিশ্ব নিখিল ইসলামে মুরীদ।।
ঢাল হৃদয়ের তোর তশতরীতে শির্‌নী তৌহিদের
তোর দাওয়াতে কবুল করবে হজরত হয় মনে উম্মীদ।।
-->

হে পার্থসারথী! বাজাও

হে পার্থসারথী! বাজাও বাজাও পাঞ্চজন্য শঙ্খ
চিত্তের অবসাদ দূর কর কর দূর
ভয়-ভীত জনে কর হে নিঃশঙ্ক।।
ধনুকে টংকার হানো হানো,
গীতার মন্ত্রে জীবন দানো;
ভোলাও ভোলাও মৃত্যু-আতংক।।
মৃত্যু জীবনের শেষ নহে নহে-
শোনাও শোনাও-অনন্ত কাল ধরি
অনন্ত জীবন প্রবাহ বহে
দুর্দম দুরন্ত যৌবন-চঞ্চল
ছাড়িয়া আসুক মার স্নেহ-অঞ্চল;
বীর সন্তানদল করুক সুশোভিত মাতৃ-অঙ্ক।।
-->

মনে পড়ে আজ সে

মনে পড়ে আজ সে কোন্‌ জনমে
বিদায় সন্ধ্যাবেলা-
আমি দাঁড়ায়ে রহিনু এপারে
তুমি ওপারে ভাসালে ভেলা।।
সেই সে বিদায় ক্ষণে
শপথ করিলে বন্ধু আমার
রাখিবে আমারে মনে,
ফিরিয়া আসিবে খেলিবে আবার
সেই পুরাতন খেলা।।
আজো আসিলে না হায়,
মোর অশ্রুর লিপি বনের বিহগী
দিকে দিকে লয়ে যায়,
তোমায়ে খুঁজে না পায়
মোর গানের পাপিয়া ঝুরে
গহন কাননে তব নাম লয়ে
আজো পিয়া পিয়া সুরে;
গান থেমে যায়, হায় ফিরে আসে পাখী
বুকে বিঁধে অবহেলা।।
-->

সোনার হিন্দোলে কিশোর-কিশোরী 

সোনার হিন্দোলে কিশোর-কিশোরী
দোলে ঝুলনের উৎসব রঙ্গে
বিন্দু বিন্দু বারি অবিরত পড়ে ঝরি
বাজে তাল জলদ মৃদঙ্গে।।
জড়াইয়া শ্যামে দোলে ভীরু রাধা
থির বিজুরি ডোরে মেঘ যেন বাঁধা
পল্লব কোলে ফুলদলে দোলে
(যেন) গোপীদল গোপীবল্লভ সঙ্গে।।
উল্লাসে থরথর খরতর বহে বায়
পুলকে ডালে ডালে কদম্ব শিহরায়
দৃষ্টিতে গোপীদের বৃষ্টির লাবনী
আনন্দ উতরোল গাহে বৃন্দাবনী
নূপুর মধুর বাজে যমুনা তরঙ্গে
ঝুলনের উৎসব রঙ্গে।।
-->

শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির

শুভ্র সমুজ্জ্বল, হে চির-নির্মল
শান্ত অচঞ্চল ধ্রুব-জ্যোতি
অশান্ত এ চিত কর হে সমাহিত
সদা আনন্দিত রাখো মতি।।
দুঃখ-শোক সহি অসীম সাহসে
অটল রহি যেন সম্মানে যশে
তোমার ধ্যানের আনন্দ-রসে
নিমগ্ন রহি হে বিশ্বগতি।।
বহে তব ত্রিলোক ব্যাপিয়া, হে গুণী,
ওঙ্কার-সংগীত-সুর-সুরধুনী,
হে মহামৌনী, যেন সদা শুনি
সে সুরে তোমার নীরব আরতি।।
-->

দুর্গম গিরি কান্তার মরু 

দুর্গম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে!
লঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে, যাত্রীরা হুঁশিয়ার।।
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, ভুলিতেছে মাঝি পথ-
ছিঁড়িয়াছে পাল কে ধরিবে হাল, কার আছে হিম্মত
কে আছো জোয়ান, হও আগুয়ান, হাঁকিছে ভবিষ্যত,
এ তুফান ভারী, দিতে হবে পাড়ি, নিতে হবে তরী পার।।
তিমির রাত্রি, মাতৃ-মন্ত্রী সান্ত্রীরা সাবধান-
যুগ-যুগান্ত সঞ্চিত ব্যথা ঘোষিয়াছে অভিযান
ফেনাইয়া ওঠে বঞ্চিত বুকে পুঞ্জিত অভিমান,
ইহাদেরে পথে নিতে হবে সাথে, দিতে হবে অধিকার।।
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া, জানে না সন্তরণ-
কান্ডারী, আজি দেখিব তোমার মাতৃ-মুক্তি-পণ
হিন্দু না ওরা মুসলিম-ওই জিজ্ঞাসে কোন্‌ জন,
কান্ডারী, বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা।।
গিরি-সংকট, ভীরু যাত্রীরা, গরজায় গুরু বাজ-
পশ্চাৎ পথ যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ
কান্ডারী, তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যজিবে কি পথ মাঝ?
করে হানাহানি, তবু চল টানি’-নিয়েছ যে মহাভার।।
ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান-
আসিঅলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা দিবে কোন বলিদান!
আজি পরীক্ষা জাতির অথবা জাতেরে করিবে ত্রাণ,
দুলিতেছে তরী, ফুলিতেছে জল, কান্ডারী হুঁশিয়ার।।
-->

শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের 

শ্যামলা বরণ বাংলা মায়ের রূপ দেখে যা আয় রে আয়
গিরি-দরী, বনে-মাঠে, প্রান্তরে রূপ ছাপিয়ে যায়।।
ধানের ক্ষেতে, বনের ফাঁকে, দেখে যা মোর কালো মাকে
ধূলি-রাঙা পথের বাঁকে বৈরাগিনী বীণ বাজায়।।
ভীরু মেয়ে পালিয়ে বেড়ায় পল্লীগ্রামে একলাটি
বিজনমাঠে গ্রাম সে বসায় নিয়ে কাদা, খড়, মাটি
কালো মেঘের ঝারি নিয়ে করুণা-বারি ছিটায়।।
কাজলা-দীঘির পদ্মফুলে যায় দেখা তার পদ্ম-মুখ
খেলে বেড়ায় ডাকাত-মেয়ে বনে লয়ে বাঘ-ভালুক
ঝড়ের সাথে নৃত্যে মাতে বেদের সাথে সাপ নাচায়।।
নদীর স্রোতে পাথর নুড়ির কাঁকন চুড়ি বাজে তার
সাঁঝের বারান্দাতে দাঁড়ায় টীপ পরে সন্ধ্যা-তারার
ধূসর গাঙে ঘট ভরিতে যায় সে মেয়ে ভোর বেলায়।।
হরিত শস্যে লুটায় আঁচল ঝিল্লীতে নূপুর বাজে
ভাটিয়ালী গায় ভাটির স্রোতে গায় বাউল মাঠের মাঝে
গঙ্গা তীরে শ্মশান ঘাটে কেঁদে কভু বুক ভাসায়।।
-->

মোরা আর জনমে

মোরা আর জনমে হংস-মিথুন ছিলাম নদীর চরে
যুগলরূপে এসেছি গো আবার মাটির ঘরে।।
তমাল তরু চাঁপা-লতার মত
জড়িয়ে কত জনম হল গত,
সেই বাঁধনের চিহ্ন আজো জাগে
জাগে হিয়ার থরে থরে।।
বাহুর ডোরে বেঁধে আজো ঘুমের ঘোরে যেন
ঝড়ের বন-লতার মত লুটিয়ে কাঁদ কেন
বনের কপোত কপোতাক্ষীর তীরে
পাখায় পাখায় বাঁধা ছিলাম নীড়ে
চিরতরে হল ছাড়াছাড়ি
নিঠুর ব্যাধের শরে।।
-->

আজি মনে মনে লাগে

আজি মনে মনে লাগে হরি
আজি বনে বনে জাগে হরি।।
ঝাঁঝর করতাল খরতালে বাজে
বাজে কংকন চুড়ি মৃদুল আওয়াজে
লচকিয়া আসে মুচকিয়া হাসে
প্রেম-উল্লাসে শ্যামল গৌরী।।
কদম্ব তমাল রঙ্গে লালে লাল
লাল হলো কৃষ্ণ ভ্রমর ভ্রমরী
রঙ্গের উজান চলে কালো যমুনার জলে
আবীর রাঙ্গা হলো ময়ূর-ময়ূরী।।
মোর হৃদি বৃন্দাবন যেন রাঙে
রাধা শ্যাম যুগল চরণ রাগে
ও চরণ ধূলি যেন ফাগ হয়ে মেশে রে
অন্তরে পড়ে মোর ঝরি।।
-->

কানন গিরি সিন্ধু

কানন গিরি সিন্ধু পার ফিরনু পথিক দেশ-বিদেশ
ভ্রমিনু কতই রূপে এই সৃজন ভুবন অশেষ।।
তীর্থ পথিক এই পথের ফিরিয়া এল না কেউ,
আজ এ পথে যাত্রা কর, কাল নাহি তার চিহ্ন লেশ।।
রাত্রি-দিবার রঙমহল চিত্রিত চন্দ্রতাপ,
দুদিনের এ পান্থবাস এই ভুবন-এ সুখ-আবেশ।।
ভোগ-বিলাসী জমশেদেরজলসা ছিল এই যে দেশ,
আজ শ্মশান, ছিল যেথায় বাহরামেরআবাশ আয়েশ।।
-->

বউ কথা কও

বউ কথা কও, বউ কথা কও
কও কথা অভিমানী
সেধে সেধে কেঁদে কেঁদে
যাবে কত যামিনী।।
সে কাঁদন শুনি হের নামিল নভে বাদল
এলো পাতার বাতায়নে যুঁই চামেলী কামিনী।।
আমার প্রাণের ভাষা শিখে
ডাকে পাখি পিউ কাঁহা,’
খোঁজে তোমায় মেঘে মেঘে
আঁখি মোর সৌদামিনী।।
-->

নয়ন ভরা জল গো

নয়ন ভরা জল গো তোমার আঁচল ভরা ফুল
ফুল নেব না অশ্রু নেব ভেবে হই আকুল।।
ফুল যদি নিই তোমার হাতে
জল রবে গো নয়ন পাতে
অশ্রু নিলে ফুটবে না আর প্রেমের মুকুল।।
মালা যখন গাঁথ তখন পাওয়ার সাধ যে জাগে
মোর বিরহে কাঁদ যখন আরও ভালো লাগে
পেয়ে তোমায় যদি হারাই
দূরে দূরে থাকি গো তাই
ফুল ফোটায়ে যায় গো চলে চঞ্চল বুলবুল।।
-->

ঘুমিয়ে গেছে শ্রন্ত

ঘুমিয়ে গেছে শ্রন্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি
করুণ চোখে চেয়ে আছে সাঝের ঝরা ফুলগুলি।।
ফুল ফুটিয়ে ভোর বেলা কে গান গেয়ে,
নীরব হল কোন বিষাদের বান খেয়ে,
বনের কোলে বিলাপ করে সন্ধ্যারাণী চুল খুলি।।
কাল হতে আর ফুটবে না হায়, লতার বুকে মঞ্জরী
উঠছে পাতায় পাতায় কাহার করুণ নিশাস মর্মরী
গানের পাখি গেছে উড়ে শূণ্য নীড়,
কন্ঠে আমার নাই সে আগের কথার ভিড়,
আলেয়ার এ আলোতে আর আসবে না কেউ কুল ভুলি।।
-->

যাবার বেলা ফেলে

যাবার বেলা ফেলে যেয়ো একটি খোঁপার ফুল
আমার চোখে চেয়ে চেয়ো একটু চোখের ভুল।।
অধর কোণের ঈয়ৎ হাসির ক্ষণিক আলোকে
রাঙ্গিয়ে যেয়ো আমার নব গ্রহণ কালোকে,
যেতে যেতে মুখ ফিরিয়া দুলিয়ে যেও দুল।।
একটি কথায়ে যেয়ো একটি নমস্কার,
সেই কথাটি গানের সুরে গাইব বারে বার,
হাত ধরে মোর বন্ধু ভুলো একটু মনের ভুল।।
-->

বাগিচায় বুলবুলি তুই 

বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে আজই দোল
আজো তার ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি, তন্দ্রাতে বিলোল
আজো হায় রিক্ত শাখায় উত্তরী বায় ঝুরছে নিশিদিন,
আসেনি, যখনহাওয়া গজল গাওয়া, মৌমাছি বিভোল।।
কবে সে ফুল কুমারী ঘোমটা চিরিআসবে বাহিরে,
গিশিরের স্পর্শমুখে ভাঙ্গবে, রে ঘুম রাঙবে, রে কপোল।।
ফাগুনের মুকুল জাগা দুকুল ভাঙ্গা আসবে ফুলের বান,
কুঁড়িদের ওষ্ঠপুটে লুটবে হাসি, ফুটবে গালে টোল।।
কবি তুই গন্ধে ভুলে ডুবলি জলে কূল পেলিনে আর,
ফুলে তোর বুক ভরেছিল, আজকে জলে ভরবে আঁখির কোল।।
-->

যারে হাত দিয়ে 

যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই
কেন মনে রাখো তারে
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে।।
আমি গান গাহি আপনার সুখে
তুমি কেন এসে দাঁড়াও সম্মুখে
আলেয়ার মতো ডাকিও না আর
নিশীথ অন্ধকারে।।
দয়া করো
দয়া করো আর আমারে লইয়া
খেলো না নিঠুর খেলা
শত কাঁদিলেও ফিরিবে না সেই
শুভ লগনের বেলা
প্রিয় শুভ লগনের বেলা
আমি ফিরি পথে তাহে কার ক্ষতি
তব চোখে কেন সজল মিনতী
আমি কি ভুলেও কোন দিনও
এসে দাঁড়ায়েছি তব দ্বারে।।
-->

মোদের এই শিকল 

মোদের এই শিকল পরা ছল
এই শিকল পরেই
শিকল তোদের করব রে বিকল।।
তোদের বন্ধ কারায় আসা
মোদের বন্দী হতে নয়
ওরে ক্ষয় করতে আসা
মোদের সবার বাঁধন ভয়
এই বাঁধন পরেই বাঁধন ভয়কে
করব মোরা জয়
এই শিকল বাঁধা পা নয়
এ শিকল ভাঙ্গা কল।।
ওরে ক্রন্দন নয় বন্ধন
এই শিকল ঝনঝনা
এ যে মুক্তিপথের অগ্রদূতের
চরণ বন্দনা
এই লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে
হানছে লাঞ্ছনা
ওদের অস্থি দিয়েই জ্বলবে দেশে
আবার বজ্রানল।।
-->

ভরিয়া প্রাণ শুনিতেছি

ভরিয়া প্রাণ শুনিতেছি গান
আসিবে আজ বন্ধু মোর
স্বপন মাখিয়া সোনার পাখায়
আকাশে উধাও চিত-চকোর
আসিবে আজই বন্ধু মোর।।
হিজল বিছানো বন পথ দিয়া
রাঙায়ে চরণ আসিবে গো প্রিয়া
নদীর পারে বন কিনারে
ইঙ্গিত হানে শ্যাম কিশোর
আসিবে আজই বন্ধু মোর।।
চন্দ্রচূড় মেঘের গায়
মরাল-মিথুন উড়িয়া যায়,
নেশা ধরে চোখে আলো-ছায়ায়
বহিছে পবন গন্ধ চোর
আসিবে আজই বন্ধু মোর।।
-->


ফুলের জলসায় নীরব

ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি
ভোরের হাওয়ায় কান্না পাওয়ায় তব ম্লান ছবি
নীরব কেন কবি।।
যে বীণা তোমার পায়ের কাছে
বুক ভরা সুর লয়ে জাগিয়া আছে
তোমার পরশে ছড়াক হরষে
আকাশে বাতাসে তার সুরের সুরভি
নীরব কেন কবি।।
তোমার যে প্রিয়া
গেল বিদায় নিয়া
অভিমানে রাতে
গোলাপ হয়ে ফুটুক তাহারই কামনা
উদাস প্রাতে
ফিরে যে আসবে না ভুলো তাহারে
চাহ তাহার পানে দাঁড়ায় যে দ্বারে
অস্ত চাঁদের বাসনা ভুলাতে
অরুণ অনুরাগে উদলি রবি
নীরব কেন কবি।।
-->

গানগুলি মোর আহত

গানগুলি মোর আহত পাখির সম
লুটাইয়া পড়ে তব পায় প্রিয়তম।।
বাণ বেধা মোর গানের পাখিরে
তুলে নিও প্রিয় তব বুকে ধীরে,
লভিবে মরণ চরণে তোমার
সুন্দর অনুপম।।
তারা সুখের পাখায় উড়িতেছিল গো নভে,
তব নয়ন শায়কে বিঁধিলে তাহাদের কবে
মৃত্যু আহত কন্ঠে তাহার
একি এ গানের জাগিল জোয়ান,
মরণ বিষাদে অমৃতের স্বাদ
আনিলে বিষাদ মম।।
-->

খোদার প্রেমের শরাব

খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ এল যে এই পথ ধরে।।
দুনিয়াদারীর শেষে আমার নামাজ বদলাতে
চাই না বেহেশত খোদার কাছে নিত্য মোনাজার করে।।
কায়েস যেমন লায়লী লাগিলভিল মজনু খেতাব,
যেমন ফরহাদ শিরীর প্রেমে হল দিওয়ানা বেতাব,
বে-খুদীতে মশগুল আমি তেম্‌ খোদার তরে।।
পুড়ে মরার ভয় না রাখে, পতঙ্গ আগুনে ধায়,
সিন্ধুতে মেটে না তৃষ্ণা চাতক বারি বিন্দু চায়,
চকোর চাহে চাঁদের সুধা, চাঁদ সে আসমানে কোথায়
সুরুয থাকে কোন্‌ সুদূরে সূর্যমুখী তারেই চায়,
তেমনি আমি চাহি খোদায়, চাহিনা হিসাব করে।।



কারার ওই লৌহকপাট

কারার ওই লৌহকপাট
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট
রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী
ওরে ও তরুণ ঈশান
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।।
গাজনের বাজনা বাজা
কে মালিক, কে সে রাজা,
কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান পড়বে ফাঁসি
সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে।।
ওরে ও পাগলা ভোলা,
দে রে দে প্রলয় দোলা
গারদগুলা জোরসে ধরে হেচকা টানে
মার হাঁক হায়দারী হাঁক, কাধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে।।
নাচে ওই কালবোশেখী,
কাটাবি কাল বসে কি?
দে রে দেখি ভীম কারার ওই ভিত্তি নাড়ি
লাথি মার ভাঙরে তালা,
যত সব বন্দীশালায় আগুন জ্বালা, আগুন জ্বালা,
ফেল উপাড়ি।।
-->

শুকনো পাতার নুপূর

শুকনো পাতার নুপূর পায়ে
নাচিছে ঘূর্ণি বায়
জল তরঙ্গে ঝিলমিল-ঝিলমিল
ঢেউ তুলে সে যায়।।
দীঘির বুকে শতদল দলি,
ঝরায়ে বকুল চাঁপার কলি,
চঞ্চল ঝরণার জল ছলছলি,
মাঠের পথে সে ধায়।।
বনফুল-আভরণ খুলিয়া ফেলিয়া,
আলুথালু এলোকেশ গগনে মেলিয়া
পাগলিনী নেচে যায় হেলিয়া দুলিয়া
ধূলি-ধূসর কায়।।
ইরানী বালিকা যেন মরু-চারিণী
পল্লীর প্রান্তর-বন মনোহারিণী
ছুটে আসে সহসা গৈরি-বরণী
বালুকার উড়নী গায়।।


মোর প্রিয়া হবে 

মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী,
দেব খোঁপায় তারার ফুল
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া তিথির,
চৈতী চাঁদের দুল।।
কন্ঠে তোমার পরাবো বালিকা,
হংস-সারির দুলানো মালিকা
বিজলী জরীণ ফিতায় বাঁধিব,
মেঘ রঙ এলো চুল।।
জ্যোছনার সাথে চন্দন দিয়ে
মাখাব তোমার গায়,
রামধনু হতে লাল রঙ ছানি
আলতা পরাবো পায়
আমার গানের সাত সুর দিয়া,
তোমার বাসর রচিব প্রিয়া
তোমারে ঘেরিয়া গাহিবে আমার,
কবিতার বুলবুল।।
-->

খেলিছ এ বিশ্বলয়ে 

খেলিছ এ বিশ্বলয়ে
বিরাট শিশুর আনমনে
প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা
নিরজনে প্রভু নিরজনে।।
শূণ্যে মহা আকাশে
তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে
ভাঙ্গিছ গড়িছ নীতি ক্ষণে ক্ষণে
নিরজনে প্রভু নিরজনে।।
তারকা রবি শশী
খেলনা তব হে উদাসী
পড়িয়া আছে রাঙা
পায়ের কাছে রাশি রাশি
নিত্য তুমি হে উদার
সুখে-দুখে অবিকার
হাসিছ খেলিছ তুমি আপন সনে
নিরজনে প্রভু নিরজনে।।
-->

আমার গানের মালা

আমার গানের মালা
আমি করব কারে দান
মালার ফুলে জড়িয়ে আছে
করুণ অভিমান
মালা করব কারে দান।।
চোখে মলিন কাজল রেখা
কন্ঠে কাঁদে কুহু কেকা
কপোলে যার অশ্রু রেখা
একা যাহার প্রাণ।।
শাঁখায় ছিল কাঁটার বেদন
মালায় শুচির জ্বালা
কন্ঠে দিতে সাহস না পাই
অভিশাপের মালা
বিরহে যার প্রেমারতি
আঁধার লোকের অরুণধুতি
নাম না জানা সেই তপোতী
তার তরে এই গান।।
-->


শূণ্য এ বুকে

শূণ্য এ বুকে পাখি মোর আয়
ফিরে আয় ফিরে আয়
তোরে না হেরিয়া সকালের ফুল
অকালে ঝরিয়া যায়।।
তুই নাই বলে ওরে উন্মাদ
পান্ডুর হলো আকাশের চাঁদ
কেঁদে নদী হলো করুণ বিষাদ
ডাকে আয় তীরে আয়।।
আকাশে মেলিয়া শত শতকর
খোঁজে তোরে তবু ওরে সুন্দর
তোর তরে বনে উঠিয়াছে ঝড়
লুটায় লতা ধূলায়।।
তুই ফিরে এলে ওরে চঞ্চল
আবার ফুটিবে বন ফুল দল
ধূসর আকাশ হইবে সুনীল
তোর চোখের চাওয়ায়।।
-->

মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম 

মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দ্যম
মোরা ঝর্ণার মত চঞ্চল,
মোরা বিধাতার মত নির্ভয়
মোরা প্রকৃতির মত স্বচ্ছল।।
মোরা আকাশের মত বাঁধাহীন
মোরা মরু সঞ্চার বেদুঈন,
বন্ধনহীন জন্ম স্বাধীন
চিত্তমুক্ত শতদল।।
মোরা সিন্ধু জোঁয়ার কলকল
মোরা পাগলা জোঁয়ার ঝরঝর
কল-কল-কল, ছল-ছল-ছল
মোরা দিল খোলা খোলা প্রান্তর,
মোরা শক্তি অটল মহীধর
হাসি গান শ্যাম উচ্ছল
বৃষ্টির জল বনফল খাই-
শয্যা শ্যামল বনতল।।
-->

প্রজাপতি প্রজাপতি

প্রজাপতি প্রজাপতি
কোথায় পেলে ভাই এমন রঙ্গীন পাখা
টুকটুকে লাল নীল ঝিলিমিলি আঁকাবাঁকা।।
   তুমি টুলটুলে বন-ফুলে মধু খাও
   মোর বন্ধু হয়ে সেই মধু দাও,
ওই পাখা দাও সোনালী-রূপালী পরাগ মাখা।।
   মোর মন যেতে চায় না পাঠশালাতে
প্রজাপতি, তুমি নিয়ে যাও সাথী করে তোমার সাথে
   তুমি হাইয়ায় নেচে নেচে যাও
   আর তোমার মত মোরে আনন্দ দাও,
এই জামা ভাল লাগে না দাও জামা ছবি-আঁকা।।
-->

খেলিছে জলদেবী

খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগর জলে
তরঙ্গ লহর তোলে লীলায়িত কুন্তলে।।
জল ছল ঊর্মী নূপুর শ্রোতনীরে বাজে সুমধুর
জল চঞ্চল ছল কাঁকন কেউর
    ঝিনুকের মেখলা কটিতে দোলে।।
আনমনে খেলে চলে বালিকা
খুলে পড়ে মুকুতা মালিকা
হরষিত পারাবারে ঊর্মী জাগে
    লাজে চাঁদ লুকালো গগন তলে।।
-->

চল চল চল

চল চল চল
ঊর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল
নিম্নে উতলা ধরণী তল
অরুণ প্রাতের তরুণ দল
    চলরে চলরে চল।।
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা টুটিব তিমির রাত
বাঁধার বিন্ধ্যা চল।।
নব নবীনের গাহিয়া গান
সজীব করিব মহাশশ্মান
আমরা দানিব নতুন প্রাণ
    বাহুতে নবীন বল।।
চলরে নওজোয়ান, শোনরে পাতিয়া কান
মৃত্যু তোরণ দুয়ারে দুয়ারে জীবনের আহ্বান
ভাঙ্গরে ভাঙ্গ আগল
    চলরে চলরে চল।।



-->






1 comment:

  1. খুবই খুবই খুবি...ভালো লাগছে! :)

    ReplyDelete