রং আল্লাহতায়ালার এক অপার সৃষ্টি। এই মহাবিশ্বের যেদিকেই তাকান না কেন, চারদিকে দেখবেন শুধু রঙের খেলা। চন্দ্র-সূর্য, আকাশ-মাটি, গ্রহ-নক্ষত্র...

(রঙের ভাষা)

7:32:00 PM Mainuddin 0 Comments

রং আল্লাহতায়ালার এক অপার সৃষ্টি। এই মহাবিশ্বের যেদিকেই তাকান না কেন, চারদিকে দেখবেন শুধু রঙের খেলা। চন্দ্র-সূর্য, আকাশ-মাটি, গ্রহ-নক্ষত্র, ফুল-ফল, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত যেদিকেই তাকান রঙের অকল্পনীয় শৈল্পিক ব্যবহার বারবার আপনার চোখে ধরা দিতে থাকবে। রঙের জগত হচ্ছে এক অবাক করা মায়াবী জগত। গ্রাফিক্স ডিজাইনারের যতগুলো অপর নাম আছে তার একটি হলো কালার স্পেশালিস্ট। অর্থাৎ গ্রাফিক্স ডিজাইনারের আরেক নাম রং বিশেষজ্ঞ। রঙের মাত্রাজ্ঞান, তার যত মহিমা-বৈশিষ্ট্য, এর প্রয়োগ কলাকৌশল, রঙের
ভাষা, রঙের ক্ষমতা ইত্যাদি সম্পর্কে যিনি যত বেশি জানেন অর্থাৎ যিনি যত বেশি অভিজ্ঞ, তিনি তত বড় ডিজাইনার।

প্রতিটি মৌলিক রঙেরই এক একটি বৈশিষ্ট্য আছে। রং ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নিজেদের অজান্তেই আমাদের রুচি, অনুভূতি, দৃষ্টিভঙ্গি, সরলতা ইত্যাদি প্রকাশ করে থাকি। তাই যেকোনো ডিজাইনেই রঙের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। রঙের ভাষা কি? কেমন? কিভাবে প্রকাশ করা হয়? আসুন এ ব্যপার গুলো নিয়ে আলোচনা করা যাক...
রঙের বিভিন্ন রকম পরিচিতি আছে, লাল রং আপনাকে থেমে যাওয়ার নির্দেশ দেয় আর সবুজ রং আপনাকে এগিয়ে যেতে বলে। ঠিক তেমনি হলুদ রং আপনাকে অপেক্ষা করার আবেদন জানায়। কালো রং শোক প্রকাশ করে আবার সাদা রং সরলতার প্রতীক। একটি রং যখন আরেকটি রঙের সাথে মিলিত হয় তখন একটি অপরটির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। ছবিতে দেখুন একই রং অন্যান্য রঙের সংস্পর্শে এসে কিরকম প্রভাবিত হয়েছে...

ছবি

রঙের যথাযথ ব্যবহার আপনার পণ্যের বিক্রি বাড়িয়ে দেবে বহুগুন, ঠিক তেমনি ভুল রঙের ব্যবহার আপনার পণ্যকে নিমিষেই ফ্লপ করিয়ে দিতে পারে। আপনি রঙের মানানসই প্রয়োগ দেখতে বিশ্বের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট গুলোতে ঢুঁ মারতে পারেন। সেখানে দেখতে পাবেন কিভাবে রঙের সামঞ্জস্য করা হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এক রঙের ব্যবহার দেখা যায়, কারন একটি ডিজাইনে একই রঙের বিভিন্ন মাত্রা ব্যবহার করে দেখা গেছে যে খুব সহজেই ফাটিয়ে দেয়া যায়।

জমকালো রং মানেই উৎকৃষ্ট ডিজাইন নয়। বরং এর বিপরীত টাই উৎকৃষ্ট ডিজাইন। হ্যাঁ, অনেক সময় দেখা গেছে যে ডিজাইনের প্রয়োজনেই (যেমন রঙের ডিব্বা কোম্পানির বিজ্ঞাপন, রঙে রঙে রাঙিয়ে দিলাম টাইপের বিজ্ঞাপন) জমকালো রং ব্যবহার করতে হয়। সেক্ষেত্রে রং সম্বন্ধে, রঙের ব্যবহার সম্বন্ধে আপনার যথেষ্ট জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা না থাকলে ডিজাইনের শ্রেষ্ঠত্ব বিনষ্ট হতে বাধ্য।

ব্যাকগ্রাউন্ডে এক কালার রং ব্যবহার করার যুগ এখন প্রায় অতীত। দুই রং বা তিন রঙের গ্রেডিয়েন্ট (একটি রং হালকা হতে হতে এক সময় মিশে যায় এবং ঠিক একই ভাবে আরো এক বা একাধিক রং হালকা থেকে গাঢ়তর হয়ে ফুটে ওঠে) ব্যবহারের মাধ্যমে আকর্ষনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করা সম্ভব। তবে হ্যা, ব্যাকগ্রাউন্ডে যদি এক রঙের প্রয়োগ ঘটান তাহলে, যে রং টি ব্যবহার করছেন ঐ একই রঙের বিভিন্ন মাত্রাসহ ব্যবহার আপনার ডিজাইন কিংবা ব্যাকগ্রাউন্ডের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে বহুগুন। রঙের মাত্রা সম্পর্কে এবার একটু আলোচনা করা যাক...
সাদা, কালো এবং ধূসর রং দিয়ে আমি ব্যাপারটা সহজ করে বুঝিয়ে দিচ্ছি।

ছবি

এখানে পিউর হোয়াইট এবং পিউর ব্ল্যাক এর মধ্যে যতগুলো রং দেখছেন সবগুলো হচ্ছে ধূসর বা গ্রে কালারের বিভিন্ন মাত্রা। আবার পিউর হোয়াইট থেকে ৪০% গ্রে পর্যন্ত যতগুলো রং বিদ্যমান সেগুলোকে আপনি সাদা রঙের বিভিন্ন মাত্রাও বলতে পারেন। কালো রঙের মাত্রাও তেমনি ৬০% গ্রে থেকে পিউর ব্ল্যাক পর্যন্ত। আর ৫০% গ্রে কালারটিকে পিউর গ্রে কালারও বলতে পারেন। এভাবে লাল, নীল, সবুজ, হলুদ সব রকম রঙেরই বিভিন্ন মাত্রা আছে।

হ্যাঁ, রঙের ক্ষমতা সম্পর্কে আরো কিছু বলা যাক...
রং আপনার চোখে ও অন্তরে প্রশান্তি এনে দিতে পারে, আবার আপনার চোখে জ্বালা ধরিয়ে দিতেও রঙের জুড়ি নেই। রং আপনার মানসিকতা পরিবর্তন করতে পারে। আপনার মনে উত্তেজনার ঝড় বইয়ে দিতে রঙের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিছু কিছু রং আছে একজন আরেকজনকে সহ্য করতে পারেনা। মানে এদের সহাবস্হান ততটা সুখকর নয়।

অনেক হয়েছে, এবার প্রচলিত কয়েকটি রং সম্বন্ধে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে এই লেখার ইতি টানা যাক।

নীলঃ নীল একটি ঠান্ডা রং। সাধারনত শান্তি, স্নিগ্ধতা, আবেগ-অনুভূতি, সম্প্রীতি, কোমলতা ইত্যাদি বুঝাতে নীল রং ব্যবহার করা হয়। খুব সিম্পল টাইপের ডিজাইনে নীল রঙের ব্যবহার বেশি হলেও অ্যাবস্ট্রাক্ট টাইপের ডিজাইনে স্পিড আনতে নীল রঙের জুড়ি নেই। নীলের সাথে সাদা, কালো বা গ্রে ভালো মানায়। ঠিক তেমনি গোধূলির মত কমলা বা গোলাপী রং নীলের সাথে ব্যবহার করলে ফলাফল তেমন একটা ভালো হয়না।

লালঃ লাল একটি চোখ ধাঁধানো তীব্র রং। সাধারনত ডিজাইনে বিষয়বস্তুর তীব্রতা বোঝাতে এর ব্যবহার দেখা যায়। স্পিড, এডভেঞ্চার, ভায়োলেন্স, এক্সাইটিং ইত্যাদি ভাব প্রকাশার্থে লাল রং আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে পারে। তবে ডিজাইনে লালের ব্যবহার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো। আর সেই সাথে লাল-সবুজ, লাল-হলুদ, লাল-বেগুনি ইত্যাদি ডিজাইনে ব্যবহার করা অনুচিত। কারন এদের সহাবস্হান ভালো ফলাফল দেয়না।

বেগুনিঃ আধ্যাত্মিকতা, আভিজাত্য বিশেষ করে রাজকীয় ডিজাইনে বেগুনির ব্যবহার ভালো ফল দেয়। ধর্মীয় ডিজাইনে এর ব্যবহার বেশি। ব্যাকগ্রাউন্ড কালার হিসেবেও বেগুনি দারুন কাজ করে।

সবুজঃ প্রানচাঞ্চল্য, সজীবতা, নিসর্গ, আন্তরিকতা ইত্যাদি বুঝাতে সবুজ রং ব্যবহার করা হয়। সবুজের সাথে বাংলাদেশের প্রকৃতির যথেষ্ট সখ্যতা আছে। সবুজের সাথে একমাত্র লালের ব্যবহারেই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

হলুদঃ হলুদ রং সাধারনত প্রফুল্লতা, সাহস ইত্যাদি বুঝাতে ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই টেক্সটকে হাইলাইট করতে ডার্ক ব্যাকগ্রাউন্ডে হলুদ রঙের টেক্সট ব্যবহার করা হয়।

গোলাপিঃ গোলাপি রং রমণীয়, কমনীয় আর রূপ লাবণ্যের প্রতীক। ডিজাইনে সৌন্দর্য বাড়াতে কিংবা আনকমন একটা ভাব আনতে এর ব্যবহার দেখা যায়। তবে এর বাড়াবাড়ি রকমের ব্যবহার আপনার ডিজাইনকে নষ্ট করে দেবে।

কমলাঃ ন্যাচারাল ডিজাইন ছাড়া কমলার ব্যবহার তেমন একটা দেখা যায় না। অথচ হালকা পরিমানে কমলার ব্যবহার আপনার ডিজাইনকে আনকমন ও গুডলুকিং করে তোলে।

ধূসরঃ সাদাকালো ডিজাইনের ক্ষেত্রে গ্রে কালারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। অবশ্য গ্রে নিজেই সাদাকালো রঙের মধ্যে পড়ে। রঙিন ফটোগ্রাফ থেকে সমস্ত রং শুষে নেওয়ার মাধ্যমে খুব সহজেই সাদাকালো ইফেক্ট দেওয়া যায়, সেক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় যে সাদাকালো ইফেক্ট তেমন মানানসই হয়নি। এমতাবস্হায় গ্রে কালার ব্যবহারের মাধ্যমে সাদাকালো ইফেক্টকে আকর্ষনীয় করে তোলা যায়।

সাদাঃ এটি একটি নিরীহ টাইপের রং। সাধারনত সরলতা, শক্তি আর তারুন্যের প্রতীক এই সাদা রং। আপনার ডিজাইনে ঝকঝকে, তকতকে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভাব আনতে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

কালোঃ এটি সর্বাধিক রঙের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত একটি রং। কালো রং সাধারনত শোক প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি এর ভেতর রহস্যময়তা ও খান্দানি ভাব আছে। কালোর সাথে যেকোনো রং মানায়। আপনার ডিজাইনে গাম্ভীর্য টাইপের ভাব প্রকাশেও এটি অনন্য। ব্যাকগ্রাউন্ডের ক্ষেত্রে এক কালার কালো ব্যবহার না করে কালোর বিভিন্ন মাত্রাসহ ব্যবহার কিংবা কালোর সাথে অন্য কোনো রঙের গ্রেডিয়েন্ট ব্যবহার করলে অত্যন্ত ভালো ফল পাওয়া যায়।

বিঃ দ্রঃ এত বড় টিউটোরিয়াল কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এখানে অসংখ্য ভুল থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে দয়া করে এই অধমকে গালাগালি না করে নিজ গুনে ক্ষমা করে দেবেন। লিখতে লিখতে তো জান কয়লা হয়ে গেছে। কিবোর্ডের কী ও দুয়েকটা নষ্ট হয়ে গেছে (মনে হয়)

0 comments: