১৯২৭ সালের মাঝামাঝি। আর্কিওলজিস্ট মিচেল হজেস পালিত কন্যা অ্যানাকে নিয়ে হন্ডুরাসের জঙ্গলে খোঁড়াখুঁড়ি করছেন। জায়গাটার নাম ছিল 'লুব্বাতু...

লুব্বাতুনের ধ্বংসস্তূপ পাওয়া "খুলির রহস্য"

12:10:00 PM Mainuddin 1 Comments

১৯২৭ সালের মাঝামাঝি। আর্কিওলজিস্ট মিচেল হজেস পালিত কন্যা অ্যানাকে নিয়ে হন্ডুরাসের জঙ্গলে খোঁড়াখুঁড়ি করছেন। জায়গাটার নাম ছিল 'লুব্বাতুনের ধ্বংসস্তূপ'। এর আরেক নাম হচ্ছে পতিত পাথরের শহর। এটি ছিল প্রাচীন মায়া সভ্যতার লীলাভূমি। ধারণা করা হয় কোনো দূর অতীতে আকাশ থেকে এখানে রহস্যময় পাথর পড়েছিল। এখানে ৩ বছর একটানা খোঁড়াখুঁড়ি চালিয়েছেন মিচেল। অবশেষে তিন বছর পর একদিন প্রমাণ সাইজের একটা ক্রিস্টাল পাথরের খুলি আবিষ্কার করে মিচেলের অষ্টাদশী কন্যা অ্যানা। আর এর ঠিক তিনমাস পর একই স্থানে খুলির সঙ্গে মানানসই একটা চোয়ালের
হাড়ও খুঁড়ে বের করা হয়ে। আগ্রহী হয়ে উঠলেন মিচেল।

আবিষ্কারের নেশায় উন্মত্ত হয়ে উঠল মিচেল হজের বাহিনী। অনুসন্ধান করতে গিয়ে গোটা জায়গাটা রীতিমতো চষে ফেলল। এতে ফলও পেল মিচল ও তার বাহিনী। এই অনুসন্ধানে প্রি-কলম্বিয়ান সভ্যতার অনেক নিদর্শন তার হাতে চলে আসে। পেশা ও নেশায় আর্কিওলজিস্ট হলেও মিচেল হজেস ছিলেন অদ্ভুত স্বভাবের। বাচ্চাদের মতোই তিনি রূপকথায় বিশ্বাস করতেন। মনে করতেন সাগরতলে হারিয়ে যাওয়া কিংবদন্তির মহাদেশ ও অ্যাটলান্টিসের অস্তি্বত্ব সবই সত্যি। এই গবেষণার আগে থেকেই তার ধারণা ছিল, নিশ্চয়ই দূর অতীতে মায়াসভ্যতা ও আটলান্টিসের মধ্যে কোন না কোন যোগসূত্র ছিল।

এই গবেষণায় রক ক্রিস্টালের আবিষ্কারের পর তার সেই ধারনা নতুন মোড় নিল। কিন্তু সমস্যা দাঁড়ালো অন্যখানে। রক ক্রিস্টাল পাথরের বয়স জানার কোন উপায় খুঁজে পাওয়া গেল না। কারণ প্রচলিত পদ্ধতিতে এর বয়স জানার ক্ষেত্রে কোনো কাজে আসে না। তবুও শেষ পর্যন্ত গবেষণার দায়িত্ব নেয় হিউলেট প্যাকার্ড ল্যাবরেটরি। দীর্ঘ বিশ্লেষণ শেষে তারা জানায়, এ জিনিস তৈরি করতে অত্যন্ত দক্ষ কারিগরের কমপক্ষে শ'তিনেক বছর সময় লেগেছিল। এত নিখুঁত কাজ পৃথিবীতে সত্যিই বিরল। যেহেতু দৃঢ়তার ভিত্তিতে ডায়মন্ডের ঠিক পরেই ক্রিস্টাল পাথরের অবস্থান। কিন্তু এ পাথর এতোটা মূল্যবান ছিল না যে একে ঘষে-মেজে নিখুঁত বানাতে কয়েক শতাব্দী খাটুনির কোনো দরকার ছিল। আর রহস্যটা এখানেই।'

সেই রহস্য আরো ঘনীভূত হলো যখন খুঁজে পাওয়া চোয়ালের হাড় খুলিটার সঙ্গে যুক্ত করা হলো। জিগ'স পাজলের মতোই চমৎকারভাবে মিলে গেল ক্রিস্টাল পাথরের দুই টুকরো। যে দেখবে সেই এখন বলবে এটা একটা আস্ত মড়ার খুলি। যারা দেখেছে তাদের অনেকেই আবার বলে খুলির সামনের অংশটায় নাকি মাঝেমধ্যে হালকা মেঘের মতো দেখা যায়।

ব্যাপারটা কারো মনের কল্পনা হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে যে, সত্যি সত্যিই খুলিটার প্রভাবে এরকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। তবে যারা দীর্ঘদিন খুলি নিয়ে মেতেছেন তাদের অনেকেই বলেন, খুলিটার আধ্যাত্দিক ক্ষমতা আছে। এটা পৃথিবীর কারো তৈরি নয়, দূর অন্তরীক্ষের কোনো উন্নত ভিনগ্রহবাসীর হাতের কাজ।

কারো কারো মতে মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের ওপর নিয়ন্ত্রণ চালাতে পারে এই খুলি। এর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলে পরাবাস্তব শব্দ, গন্ধ এমনকি ভৌতিক মূর্তি দেখা দিতে পারে। আবার বিরুদ্ধবাদীদের দাবি বড়জোর পাথরটার সন্মোহনী ক্ষমতা পর্যন্ত। তবে রহস্যের আরেক প্রান্তে রয়েছে কী এক অভিশাপ। বাস্তব অনেক ঘটনা প্রমাণ করে ক্রিস্টাল খুলির সঙ্গে অভিশাপের বিষয়টি ওতপ্রোতভাব জড়িত। মিচেল হজেস বেঁচে থাকতে তিনবার ছুরির আঘাত এবং আটবার গুলি লেগে জখম হয়েছিলেন। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন। কিন্তু এসব সত্ত্বেও টানা ত্রিশ বছর ধরে খুলি নিয়ে মত্ত ছিলেন তিনি। বাইরের কাউকে খুলিটা সহজে দেখাতে চাইতেন না। অবশেষে ১৯৪৯ সালের ১২ জুন মারা গেলেন তিনি। যেদিন মারা গেলেন সেদিনই একটা উইলের মাধ্যমে জানা যায় খুলিটা নিজের পালিতা মেয়েকে দিয়ে গেছেন তিনি। এ মেয়েটিই সেই অ্যানা যে কিনা হন্ডুরাসের জঙ্গলে একটা পরিত্যক্ত মন্দিরের বেদিতে খুলিটাকে প্রথম দেখতে পেয়েছিল।

ইন্ডিয়ানা জোন্সের বিখ্যাত ছবিতে ক্রিস্টালের খুলির ঘটনা দেখার পর থেকে এ সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। প্রত্নতত্ত্ব নিয়ে আগ্রহ আছে কিংবা প্রাচীন বিষয় আশয় যাদেরকে কৌতূহলী করে তুলে তাদের কাছে ক্রিস্টালের খুলি বরাবরই এক অপার রহস্যের আধার। আধ্যাত্দিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে এমন বিশ্বাস থেকে অনেকেই ক্রিস্টালের খুলি অথবা কোয়ার্টজ পাথরকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে করে। এ নিয়ে আগ্রহের কমতি নেই সাধারণ মানুষেরও।

সত্যিকার অর্থে কী এই রহস্যময় ক্রিস্টালের খুলি? ক্রিস্টালের খুলি প্রাচীন বিশ্ব সভ্যতার অন্যতম এক রহস্য ঘেরা নিদর্শন। প্রাচীন গ্রিকরা ক্রিস্টাল খুলিকে ক্রিস্তালোস বলত। যার বাংলা করলে দাঁড়ায় 'চকচকে বরফ'। অদ্ভুত এক বিশ্বাস থেকে মিসয়রীরা মৃতের কপালে ক্রিস্টাল কোয়ার্টজ গুঁজে দিত। তাদের বিশ্বাস ছিল এ চমৎকার পাথর মৃতের আত্দাকে অনন্তকাল পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। ছয় হাজার বছর আগেকার মিসরীয়দের সেই বিশ্বাস এখনো মানুষকে সমানভাবে প্রভাবান্বিত করছে।

আধুনিক যুগের অনেক জ্যোতিষী এখনো ক্রিস্টালের বল ব্যবহার করে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ উন্নতমানের রক কোয়ার্টজ। তবে সবচাইতে আলোচিত কোয়ার্টজটির নাম মিচেল হজেসের ক্রিস্টাল স্কাল বা ক্রিস্টালের খুলি। কিস্তু এই খুলির উৎপত্তি ও সময় সম্পর্কে নিশ্চিত কোন তথ্য আজও পাওয়া যায়নি। কারো কারো মতে এটি প্রাচীন অ্যাজটেকদের তৈরি, আবার কেউ কেউ মনে করেন, এটি মায়া সভ্যতার নিদর্শন। তবে এই মতের পেছনে গ্রহণযোগ্য কোনো যুক্তি প্রদর্শন করতে পারে না কেউই।

1 comment: