পৃথিবীতে ভূত কি আছে? ভূত কী? ভূত কত প্রকার ও কি কি?
পৃথিবীর একটি বহুল প্রচলিত প্রশ্ন হচ্ছে- ভূত কি আছে?
এই লেখাটি না পড়েই আপনি উত্তর দিতে পারেন, ভূত নেই।
আপনার সাথে আমিও বলবো ভূত নেই। তবে ভূতের ভয় আছে।
এটি একটি রহস্যময় প্রশ্ন এবং রহস্যময় উত্তর। যে জিনিস নেই তাকে আবার ভয় কি? কিন্তু ভূতের বেলায় এসব মানায় না। ভূত নেই কিন্তু ভূতের ভয় আছে। তাহলে একটা গল্প বলি। সত্যি গল্প।
১৯৫৯ সাল। ম্যাবল চিনারি নামে এক ভদ্রমহিলার মা মারা গিয়েছেন কদিন আগে। মায়ের কবর দেখে আবার গাড়িতে উঠবেন। গাড়িতে অপেক্ষা করছেন তার স্বামী। গাড়িতে ওঠার ঠিক আগে স্বামীর ছবি তুললেন। কিন্তু ছবি তোলার পর দেখা গেল গাড়ির পেছনের সিটে বসে আছে তার মা। ক’দিন আগে যে মা মারা গিয়েছেন, একটু আগেই এই মায়ের কবর দেখে এসেছেন। তাহলে গাড়ির পিছনের আসনে কে বসা? মরা মা নিশ্চয়ই কবর থেকে উঠে এসে গাড়িতে বসেননি? এবং এটা সম্ভব নয়। তাহলে কে সে? এই প্রশ্নের উত্তর আজো পাওয়া যায়নি। এবং কখনো পাওয়া যাবে না। যদি আপনি ভূতের বিশ্বাস করেন তাহলে এর জবাব একটাই-গাড়ির পিছনের আসনে একটি ভূত বসা। আর যদি ভূতে বিশ্বাস না করেন তাহলে এর কোনো জবাব নেই। এবং এর জবাব কোনোদিনই মিলবে না।
এবার আরেকটি গল্প বলা যাক।
এস এস ওয়াটারটাউন নামে একটি তেলবাহী জাহাজে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা ঘটল। দুজন শ্রমিক ওই খালি কার্গো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ করছিল। এমন খালি তেলবাহী কার্গোতে গ্যাস জমে যায়। এবং ঘটনা সেটাই ঘটেছিল। ওই বিষাক্ত গ্যাসেই মারা যায় দুই শ্রমিক। জাহাজটি তখন ছিল পানামা খালে। জাহাজের লোকজন ওই দুই শ্রমিককে সাগরে ফেলে দেয়। এটা ১৯২৪ সালের ৪ ডিসেম্বরের ঘটনা। কিন্তু পরদিন সকালে সমুদ্রে ওই দুই শ্রমিকের মুখ ভেসে ওঠে সাগরে। জাহাজের অনেকেই তাদের ওই ভেসে ওঠা চেহারা দেখেছিল। জাহাজ নিউ অরলিন্সে পৌঁছানোর পর জাহাজের ক্যাপ্টেন এই দুর্ঘটনার কথা জাহাজ কোম্পানিকে জানান। কিন্তু এরপর যখন জাহাজটি তার পরবর্তী যাত্রা শুরু করল, তখনও সাগরের বুকে ওই দুই শ্রমিকের মুখ ভেসে উঠল। জাহাজের ক্যাপ্টেন ট্র্যাসি ওই ছবি তুলে রাখলেন। একটা দুটো নয়, ছয়টা ছবি তুলে রেখেছিলেন। তারপর ক্যামেরাটা জাহাজের একটা নিরাপদ জায়গায় তালা মেরে রেখে দিলেন। ওই ফটোগ্রাফ থেকেই জানা গিয়েছিল দুই শ্রমিকের নাম। তারা হলেন জেমস কার্টনি এবং মাইকেল মিহান। জাহাজ কোম্পানিও কিন' ভড়কে গিয়েছিল এমন ফটোগ্রাফ দেখে। তারা কোনোভাবেই ভেবে পেল না দুজন মৃত মানুষ কেমন করে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে জাহাজের সাথে সাথে আসে।
পরবর্তী যাত্রায় জাহাজের পুরো নাবিকদের বদলে ফেলা হলো। তারপর থেকে আর তাদের দেখা যায়নি। তাহলে কি জাহাজের আগের নাবিকরা ভুল কিছু দেখেছিলেন? যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তাহলে জাহাজের ক্যাপ্টেন তাদের ছবি তুলেছিলেন কীভাবে? এর কিন্তু কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। কেবল একটি উত্তরই হতে পারে, মৃত দুই শ্রমিকের ভূতই বার বার ফিরে এসেছিল জাহাজের কাছে। তাদের কি কোনো আকুতি ছিল? হতে পারে। কারণ ভূত বিশেষজ্ঞরা এমনই মনে করে থাকেন। অতৃপ্ত কোনো আত্মাই নাকি বার বার ফিরে আসে। এবং এই আত্মাকেই আমরা জানি ভূত বলে।
এই বেরিয়ে আসা ছোট প্রাণী বা ছোট মানুষটাই যখন আবার শরীরি রূপ ফিরে পেতে চায়, তখন তো সে কোনো অবলম্বন পায় না। মানে তাকে তো কোনো না কোনো বড় প্রাণীর শরীরে ভর করেই আসতে হবে। কিন্তু সেটা সে পাবে কোথায়? কাজেই তার সামনে একটাই পথ খোলা থাকে- অস্পষ্ট কোনো রূপ ধরা। আর এই অস্পষ্ট রূপটাকেই আমরা ভূত বলে জানি।
কেবল চীন নয়, ভূতের দেখা পাওয়া গিয়েছিল প্রাচীন এথেন্সেও। সেটাও খৃস্টপূর্ব ৬৩ থেকে খৃস্ট পরবর্তী ১১৩ সালের মধ্যকার ঘটনা। এথেনডোরেস নামে একজন স্টয়িক দার্শনিক একটি বাড়ি ভাড়া করেছিলেন এথেন্সে। সেই বাড়িতে ওঠার পর প্রায়ই তিনি গোঙানির শব্দ পেতেন। কখনো কারো পায়ের শব্দও নাকি পাওয়া যেত। এমনকি কখনো কখনো তার অস্পষ্ট অবয়বও দেখেছিলেন। এথেনডোরেস একদিন সেই ভূতের পিছন পিছন চললেন। এবং তিনি দেখলেন একটা জায়গায় এসে ভূতটা উধাও হয়ে গিয়েছে। পরদিন লোকজন দিয়ে সেই জায়গাটা খনন করালেন। এবং সেখান থেকে একজন মানুষের কঙ্কাল বেরুল। তিন বছর আগে লোকটি মারা গিয়েছিল। ওই কঙ্কালটাকে কবর দেয়ার পর আর সেই ভূত দেখা যায়নি।
প্রাচ্যের অনেক ধর্মে ভূতের কথা উল্লেখ আছে। যেমন হিন্দুদের পবিত্রগ্রন্থ বেদ-এ ভূতের কথা উল্লেখ আছে। হিব্রু তাওরাত ও বাইবেলেও ভূতের উল্লেখ আছে। যীশুখৃস্ট যখন পানির উপর দিয়ে হেঁটে আসছিলেন তখন তার অনুসারিরা তো তাকে প্রথমে ভূতই ভেবেছিল।
উনিস শতকে ‘ক্রিসমাস ক্যারল’ বইতে লেখক চার্লস ডিকেন্স ভূত এনেছিলেন। ভূতদের নিয়ে নানান লৌকিক কাহিনী ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত। ভূত এসেছে শেক্সপিয়রের বিখ্যাত নাটক ‘হ্যামলেট’-এ। হ্যামলেট তখন ডেনমার্কের রাজকুমার। রাজা ক্লডিয়াসকে তার চাচা গোপনে খুন করে ডেনমার্কের রাজা হওয়ার লোভে। কিন্তু রাজার অতৃপ্ত আত্মা বারবার ফিরে আসে। হ্যামলেটকে দেখা দিয়ে যায়। হ্যামলেটও কৌশলে দেশবাসীকে সেটা জানিয়ে দেন।
অস্কার ওয়াইল্ডের লেখা গল্পে আছে দৈত্যের কথা। প্রথমে দৈত্যটা অহঙ্কারী থাকে। শিশুদের সে তার বাগানে ঢুকতে দিতে চায় না। পরে শিশুদের বন্ধু হয়ে যায়। আর ভূত নিয়ে পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন ভাষায় হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্র। এসব চলচ্চিত্রের কোনোটা ভয়ানক, কোনোটা হাসির, কোনোটা দুঃখের। ভূতদের কাল্পনিক জীবন নিয়ে তৈরি এসব চলচ্চিত্র দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছে। তবে ভূতপ্রিয়তা পেয়েছে কি না কে জানে? শিশুদের জন্য তৈরি কার্টুন সিরিজ ‘স্কুবি ডু’, ‘ড্যানি ফ্যান্টম’, ‘ঘোস্ট ট্র্যাকার্স’, ‘ট্রুথ অর স্কেয়ার’, ‘মিস্ট্রি হান্টার্স’-এর কাহিনী গড়ে উঠেছে ভূতকে কেন্দ্র করে। হালের কার্টুন সিরিজ ‘বেন টেন’-ও ভূতকে ঘিরেই। দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পাওয়া গ্রন্থ ও চলচ্চিত্র হ্যারিপটারের কাহিনীও ভূত বিষয়ক।
২০০৫ সালে আমেরিকার গ্যালপ অর্গানাইজেশন আমেরিকানদের উপর একটা জরিপ চালায়। জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৩২ ভাগ আমেরিকান ভূতে বিশ্বাস করে। ছোটরা তো করেই, বড়রাও ভূতে বিশ্বাস করে বসে আছে।
১. ঠাণ্ডা জায়গা। আশপাশের জায়গা থেকে যদি কোনো জায়গা ঠাণ্ডা হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এখানে ভূত আছে বা খানিক আগে ছিল। ভূতদের শক্তির প্রয়োজন। তারা কোনো গরম জায়গায় এসে সে জায়গা থেকে শক্তি আহরন করে নিয়ে যায়। ফলে সে জায়গা ঠাণ্ডা হয়ে থাকে।
২. বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের অদ্ভুত আচরন। ভূতদের উপস্থিতিতে বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র নানান রকম অদ্ভুত আচরন করে। যেমন বাতি জ্বলে-নেভে, রেডিও অন অফ হয়, টিভি ঝির ঝির করে।
৩. কোনো কিছুর অকারণ নড়চড়া। এমনকি কোনো জড়বস্তুও অকারণে নড়া চড়া শুরু করে দেয়। যেমন দরজা জানালা খোলে আবার বন্ধ হয়।
৪. চোখের সামনে থেকে কোনো কিছু হারিয়ে যায় বা নড়া চড়া শুরু করে দেয়।
৫. পানি ক্রমাগত উপরে উঠে আবার নিচে নামে।
৬. শীতল কোনো কিছুর স্পর্শ অনুভব করা।
৭. নানান ধরনের ভৌতিক শব্দ শোনা। যেমন কারো হাঁটার শব্দ, গান, কথা বলার শব্দ, ফিসফিসানি, খটখট শব্দ, বিকট শব্দ, কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ, টেলিফোন রিং।
৮. কোনো জায়গায় হঠাৎ কোনো আলোর ঝলকানি।
৯. কোনো ছায়া বা কোনো কিছু নড়াচড়া করছে দেখতে পাওয়া
১০. কোনো প্রাণীর অদ্ভুত আচরন করা। কারণ ভূতদের অস্তিত্ব প্রাণীরাই প্রথমে টের পায়।
১১. হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই কোনো অদ্ভুত বা পরিচিত গন্ধ পাওয়া ১২. হঠাৎ কোনো কুয়াশা বা অপচ্ছায়া উদয় হওয়া
১৩. হঠাৎ কোনো কিছু ভাসতে থাকা।
ভূত নিজেকে যে কোনো জায়গায় প্রকাশ করতে পারে। যত উজ্জল আলো হোক কিংবা যত ঘন অন্ধকারই হোক, আবার কোনো নির্জন জায়গা হোক বা হাজার হাজার মানুষের সামনেও সে নিজেকে হাজির করতে পারে। একটা কথা প্রচলিত আছে, অনেক মানুষের মাঝে এসে নাকি ভূতেরা শক্তি সঞ্চয় করে নেয়। রাতে বা দিনে যে কোনো সময়ই তারা চলাফেরা করতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করে যখন খুব কম মানুষ জেগে থাকে, তখনই নাকি ভূতদের উদয় হওয়ার মোক্ষম সময়। সে হিসাবে রাতই হচ্ছে ভূতদের বের হওয়ার আসল সময়। আবার কিছু ভূত বিশেষজ্ঞ মনে করেন বুদ্ধিমান ভূতেরা নির্জন এলাকার চেয়ে জনাকীর্ণ এলাকাই পছন্দ করে বেশি। এতে তাদের ধরা পড়ার সম্ভবনা কম।
আর দানো হিসেবে যাদের পরিচিতি এরা ঠিক ভূত নয়, তবে ভূত গোত্রীয়। দানোরাই হচ্ছে দানব বা দৈত্য। আরবি সাহিত্যের জিনই হচ্ছে দানো। একানড়ে নামে যে ভূত, তার পা আবার একটা। এক পায়েই সে সকল কাজকর্ম করে। মানে ভূত সমাজে প্রতিবন্ধী ভূত। আরেকজাতের প্রতিবন্ধী ভূত আছে। এদের নাম কন্ধকাটা ভূত। এরা কবন্ধ নামেও পরিচিত। এদের মাথা নেই। আছে কেবল ধড়। গলাকাটা এই ভূতের মাথা সে নিজের হাতে নিয়ে ঘোরে। কাটা মুণ্ডটি কথাও বলতে পারে। এবং খামোখাই বক বক করে।
আছে পেঁচো ভূত। পেঁচোরা টার্গেট করে শিশুদের। মানে ওরা শিশুদের ভয় দেখিয়েই তবে মজা পায়। আছে যক্ষভূত। যক্ষভূত হল পাহারাদার ভূত। আগের দিনের ধনী কৃপণরা তাদের ধনসম্পত্তি নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল। মাটির নিচে ঘর বানিয়ে সেই ঘরে তাদের ধন-রত্ন লুকিয়ে রাখত। তবু তাদের ভয় হতো, যদি কেউ চুরি বা ডাকাতি করে সেই ধন নিয়ে যায়? এই ধন-রত্ন পাহারা দেয়ার জন্য কোনো এক বালককে ধরে এনে পুজো করে সেই ঘরে বন্দি করে রাখত। একসময় সেই ঘরে বন্দি থেকে না খেয়ে মারা যেত সেই বালক। মরে গিয়ে সে হতো যক্ষভূত। যক্ষভূতের কাজই হচ্ছে অপরের ধন রক্ষা করা। উপযুক্ত উত্তরাধিকে সেই ধন ফেরৎ দিতে পারলেই তার মুক্তি ঘটত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সম্পত্তি-সমর্পণ’ এমনই একটি গল্প।
বাংলাসাহিত্যে কিন্তু পুকুরেও ভূত থাকে। পুকুরের ভূতের নাম হাঁড়া-ভূত। মানুষ পুকুরে সাঁতার কাটতে নামলে এরা মাঝে মাঝে পা ধরে টেনে নিয়ে ডুবিয়ে মারে। তারপর রক্তপান করে। কালবৈশাখির ঝড়ে গোল হয়ে যে ঝড় ঘোরে-তার নাম বাঁড়ুল ভূত। এই ভূত দেখা দিলে নাকি মাঝউঠানে একটা পিঁড়ি উল্টো করে বলতে হয়- বাঁড়ুল বাঁড়ুল-মাছ পোড়া দিয়ে ভাত খেয়েছি-ছুঁয়ো না।
বাঁশ-ঝাড়ে থাকে ঝেরুভূত। ঝেরুভূতের কারণেই নাকি বাঁশঝাড়ের বাঁশেরা এমন শুয়ে থাকে। রাতে ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে নিয়ে যায় যে ভূত, তার নাম দিশাভূত নিশাভূত। এই ভূতেরা আবার হাঁড়াভূতের মতো অতোটা ভয়ঙ্কর নয়। এরা কারো রক্ত পান করে না। কাউকে মারেও না। কেবল সারারাত ঘুরিয়ে মারে। আর খুব ভয়ঙ্কর হলে ঘাড় মটতে দেয়। তবে একবারের বেশি এরা ডাকে না।
মানুষভূতের পাশাপাশি ঘোড়াভূত, গোভূতও আছে বাংলা সাহিত্যে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি ঘোড়াভূত দেখেছিলেন। এছাড়া আছে বাস্তুভূত। এরাও মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।
আমাদের বাংলাসাহিত্যে ভূতের রমরমা কারবার। বিচিত্র নামে, বিচিত্ররকমে এরা আমাদের সামনে আসে। বাংলা সাহিত্যে ভূত নিয়ে কে লিখেননি? প্রায় সকল সাহিত্যিকই ভূতের গল্প লিখেছেন। তবে বাংলাসাহিত্যে ভূতগল্প লেখকদের মধ্যে সেরা হচ্ছেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৮৯৩ সালে তিনি লিখলেন স্কল স্কেলিটন এন্ড কোং। ত্রৈলোক্যনাথ ভূতদের জন্মরহস্যও উদঘাটন করেছেন। তিনি লিখেছেন- যেমন জল জমিয়া বরফ হয়, অন্ধকার জমিয়া তেমন ভূত হয়।
সত্যিই কি তাই? হয়ত। নয় তো আমরা অনেকেই ভূত বিশ্বাস করি না ঠিকই, কিন্তু অন্ধকারে ভূতের ভয় পাই কেন? আমাদের চিন্তা ও চেতনার অগোচরেই অন্ধকারে ভূত থাকে বলে আমরা মনে করি। এই মনে করি দেখেই আমরা ভূতে ভয় পাই।
কথায় আছে- আহার নিদ্রা ভয়, যত করবে তত হয়। ভয় না পেলেই হয়। যতই ভয় পাবো, ততই আরো ভয় আমাদের জড়িয়ে ধরবে। আর ভয় না পেলেই কোনো ভয়ই আমাদের ভয় পাওয়াতে পারবে না। ভূতের ভয় তো তখন তুচ্ছ, যেখানে ভূত বলতে কিছু আছে এমন প্রমাণ কেউ কোনোদিন দিতে পারেননি। দিতে পারবেন বলেও মনে হয় না। যদি সত্যিই ভূত বলে কিছু থাকতো, তাহলে এতদিনেই আমরা সে ভূত আবিস্কার করে ফেলতে পারতাম। মঙ্গলে পানির সন্ধানে মানুষের তৈরি নভোযান যাচ্ছে, আর আমাদের ক্ষুদ্র এই পৃথিবীতে আমরা এখনও ভূতের সন্ধান করতে পারিনি- এটা কি বিশ্বাস যোগ্য?
সূত্রঃ ও বিভিন্ন তথ্য: ইন্টারনেট থেকে সগ্রহ করা
এই লেখাটি না পড়েই আপনি উত্তর দিতে পারেন, ভূত নেই।
আপনার সাথে আমিও বলবো ভূত নেই। তবে ভূতের ভয় আছে।
এটি একটি রহস্যময় প্রশ্ন এবং রহস্যময় উত্তর। যে জিনিস নেই তাকে আবার ভয় কি? কিন্তু ভূতের বেলায় এসব মানায় না। ভূত নেই কিন্তু ভূতের ভয় আছে। তাহলে একটা গল্প বলি। সত্যি গল্প।
১৯৫৯ সাল। ম্যাবল চিনারি নামে এক ভদ্রমহিলার মা মারা গিয়েছেন কদিন আগে। মায়ের কবর দেখে আবার গাড়িতে উঠবেন। গাড়িতে অপেক্ষা করছেন তার স্বামী। গাড়িতে ওঠার ঠিক আগে স্বামীর ছবি তুললেন। কিন্তু ছবি তোলার পর দেখা গেল গাড়ির পেছনের সিটে বসে আছে তার মা। ক’দিন আগে যে মা মারা গিয়েছেন, একটু আগেই এই মায়ের কবর দেখে এসেছেন। তাহলে গাড়ির পিছনের আসনে কে বসা? মরা মা নিশ্চয়ই কবর থেকে উঠে এসে গাড়িতে বসেননি? এবং এটা সম্ভব নয়। তাহলে কে সে? এই প্রশ্নের উত্তর আজো পাওয়া যায়নি। এবং কখনো পাওয়া যাবে না। যদি আপনি ভূতের বিশ্বাস করেন তাহলে এর জবাব একটাই-গাড়ির পিছনের আসনে একটি ভূত বসা। আর যদি ভূতে বিশ্বাস না করেন তাহলে এর কোনো জবাব নেই। এবং এর জবাব কোনোদিনই মিলবে না।
এবার আরেকটি গল্প বলা যাক।
এস এস ওয়াটারটাউন নামে একটি তেলবাহী জাহাজে ভয়াবহ এক দুর্ঘটনা ঘটল। দুজন শ্রমিক ওই খালি কার্গো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করার কাজ করছিল। এমন খালি তেলবাহী কার্গোতে গ্যাস জমে যায়। এবং ঘটনা সেটাই ঘটেছিল। ওই বিষাক্ত গ্যাসেই মারা যায় দুই শ্রমিক। জাহাজটি তখন ছিল পানামা খালে। জাহাজের লোকজন ওই দুই শ্রমিককে সাগরে ফেলে দেয়। এটা ১৯২৪ সালের ৪ ডিসেম্বরের ঘটনা। কিন্তু পরদিন সকালে সমুদ্রে ওই দুই শ্রমিকের মুখ ভেসে ওঠে সাগরে। জাহাজের অনেকেই তাদের ওই ভেসে ওঠা চেহারা দেখেছিল। জাহাজ নিউ অরলিন্সে পৌঁছানোর পর জাহাজের ক্যাপ্টেন এই দুর্ঘটনার কথা জাহাজ কোম্পানিকে জানান। কিন্তু এরপর যখন জাহাজটি তার পরবর্তী যাত্রা শুরু করল, তখনও সাগরের বুকে ওই দুই শ্রমিকের মুখ ভেসে উঠল। জাহাজের ক্যাপ্টেন ট্র্যাসি ওই ছবি তুলে রাখলেন। একটা দুটো নয়, ছয়টা ছবি তুলে রেখেছিলেন। তারপর ক্যামেরাটা জাহাজের একটা নিরাপদ জায়গায় তালা মেরে রেখে দিলেন। ওই ফটোগ্রাফ থেকেই জানা গিয়েছিল দুই শ্রমিকের নাম। তারা হলেন জেমস কার্টনি এবং মাইকেল মিহান। জাহাজ কোম্পানিও কিন' ভড়কে গিয়েছিল এমন ফটোগ্রাফ দেখে। তারা কোনোভাবেই ভেবে পেল না দুজন মৃত মানুষ কেমন করে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে জাহাজের সাথে সাথে আসে।
পরবর্তী যাত্রায় জাহাজের পুরো নাবিকদের বদলে ফেলা হলো। তারপর থেকে আর তাদের দেখা যায়নি। তাহলে কি জাহাজের আগের নাবিকরা ভুল কিছু দেখেছিলেন? যদি উত্তর হয় হ্যাঁ, তাহলে জাহাজের ক্যাপ্টেন তাদের ছবি তুলেছিলেন কীভাবে? এর কিন্তু কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। কেবল একটি উত্তরই হতে পারে, মৃত দুই শ্রমিকের ভূতই বার বার ফিরে এসেছিল জাহাজের কাছে। তাদের কি কোনো আকুতি ছিল? হতে পারে। কারণ ভূত বিশেষজ্ঞরা এমনই মনে করে থাকেন। অতৃপ্ত কোনো আত্মাই নাকি বার বার ফিরে আসে। এবং এই আত্মাকেই আমরা জানি ভূত বলে।
ভূত কী?
ভূত মানে সোজা কথায় কোনো মৃত আত্মা বা অপচ্ছায়া। ভূতে বিশ্বাস সেই প্রাচীন কাল থেকেই। পৃথিবীর প্রাচীন লোককাহিনীতে ভূতের কথা উল্লেখ আছে। এবং পৃথিবীর অনেক জাতিই ভূতে বিশ্বাস করে। তাদের মতে প্রাণীর শরীর থেকে আত্মা চলে গেলেই সে প্রাণহীন হয়ে যায়। কোনো কোনো আত্মা প্রাণীর শরীর থেকে বের হওয়ার পরও ফিরে আসে। আর এই ফিরে আসা আত্মাই হচ্ছে ভূত। কোনো শরীরী রূপ তার থাকে না। সে থাকে অস্পষ্ট। কিন্তু তার চালচলন স্বাভাবিক জীবিত শরীরের মতো। তাকে স্পষ্ট দেখা যায় না। কিন্তু উপলব্ধি করা যায়। কিন্তু কেন সে ফিরে আসে?ভূতেরা কেন আসে?
প্রাণীর শরীরে থাকার সময় যদি আত্মার কোনো অতৃপ্তি থাকে, তাহলেই নাকি আত্মা ফিরে আসে। তার অতৃপ্তি নানা কারণে থাকতে পারে। তাকে হয়ত ঠিত মতো কবর দেয়া হয়নি। কিংবা সে এই পৃথিবীর রূপ-সৌন্দর্য থেকে নিজেকে দূরে রাখতে পারে না। তাই ফিরে আসে চেনা পরিচিত জগতে। অচেনা কোথাও সে যায় না। উনিশ শতকের বিখ্যাত নৃবিজ্ঞানী জেমস ফ্রেজার বিষয়টার ব্যাখ্যা দিয়েছেন এভাবে- যে কোনো প্রাণীর শরীরের ভিতর থাকে আরেকটি ছোট প্রাণী। মানুষের শরীরের ভিতর থাকে আরেকটি ছোট মানুষ। এই ছোট মানুষ আর ছোট প্রাণীটাই চালিত করে বড় মানুষ বা প্রাণীকে। এটাই হচ্ছে আত্মা। মানুষ বা প্রাণী ঘুমায়, ওই আত্মা কিন্তু কখনো ঘুমায় না। কেবল সাময়িকভাবে মানুষ বা প্রাণীর শরীর ছেড়ে সে বাইরে বেরিয়ে আসে। কিংবা মানুষ বা প্রাণী যখন মারা যায়, ওই আত্মা কখনো মারা যায় না। কেবল স্থায়ীভাবে সেই প্রাণী বা মানুষের শরীর ছেড়ে বেরিয়ে আসে।এই বেরিয়ে আসা ছোট প্রাণী বা ছোট মানুষটাই যখন আবার শরীরি রূপ ফিরে পেতে চায়, তখন তো সে কোনো অবলম্বন পায় না। মানে তাকে তো কোনো না কোনো বড় প্রাণীর শরীরে ভর করেই আসতে হবে। কিন্তু সেটা সে পাবে কোথায়? কাজেই তার সামনে একটাই পথ খোলা থাকে- অস্পষ্ট কোনো রূপ ধরা। আর এই অস্পষ্ট রূপটাকেই আমরা ভূত বলে জানি।
ভূত কি কেবল মানুষের আত্মাই হয়?
না। যে কোনো প্রাণীর আত্মাই ভূত হতে পারে। এমনকি কোনো জড়বস'ও ভূত হতে পারে। কুকুর, বিড়াল, নেকড়ের পাশাপাশি কোনো পাথরও নাকি ভূত হতে পারে। এমনকি গাছপালাও ভূত হতে পারে। সোজা কথা আমরা আমাদের চোখে যা দেখি, প্রকৃতির সবকিছুই ভূত হওয়ার যোগ্যতা রাখে।ভূতরা কি খারাপ?
বেশিরভাগ ভূতের গল্পেই ভূতকে দেখানো হয়েছে খারাপ কোনো জিনিস হিসেবে। সে যেনো মানুষের কোনো কল্যান করতে পারে না। তবে ভূতরা কিন্তু ডাইনী বা দানবের চেয়ে খারাপ নয়। ভূতদের খারাপ হিসেবেও দেখা হয় না সব জায়গায়। ওরা কেবল আসে, কেউ কেউ দেখা দেয় তারপর চলে যায়।যুগে যুগে ভূত
পৃথিবীর প্রত্যেক সাহিত্যেই ভূতের উপদ্রব আছে। খৃস্টপূর্ব ৪৭০ থেকে ৩৯১ পর্যন্তু একজন বিখ্যাত চীনা দার্শনিক ছিলেন। তার নাম মো ঝু। মো ঝু’র লেখাতেও ভূতের সন্ধান পাওয়া গেছে। তিনি নাকি ভূত দেখেছেন। রাজা সুয়ান ছিলেন চীনের রাজা। রাজা জীবনকাল ছিল খৃস্টপূর্ব ৮২৭ থেকে ৭৮৩ সাল পর্যন্তু। রাজা তার এক মন্ত্রী তু পোকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিলেন। মন্ত্রী তু পোয়ের অতৃপ্ত আত্মা মানে ভূত রাজা সুয়ানকে তীরবিদ্ধ করে হত্যার প্রতিশোধ নিয়েছিল। ভূতুড়ে এই দৃশ্যটাই দেখেছিলেন দার্শনিক মো ঝু।কেবল চীন নয়, ভূতের দেখা পাওয়া গিয়েছিল প্রাচীন এথেন্সেও। সেটাও খৃস্টপূর্ব ৬৩ থেকে খৃস্ট পরবর্তী ১১৩ সালের মধ্যকার ঘটনা। এথেনডোরেস নামে একজন স্টয়িক দার্শনিক একটি বাড়ি ভাড়া করেছিলেন এথেন্সে। সেই বাড়িতে ওঠার পর প্রায়ই তিনি গোঙানির শব্দ পেতেন। কখনো কারো পায়ের শব্দও নাকি পাওয়া যেত। এমনকি কখনো কখনো তার অস্পষ্ট অবয়বও দেখেছিলেন। এথেনডোরেস একদিন সেই ভূতের পিছন পিছন চললেন। এবং তিনি দেখলেন একটা জায়গায় এসে ভূতটা উধাও হয়ে গিয়েছে। পরদিন লোকজন দিয়ে সেই জায়গাটা খনন করালেন। এবং সেখান থেকে একজন মানুষের কঙ্কাল বেরুল। তিন বছর আগে লোকটি মারা গিয়েছিল। ওই কঙ্কালটাকে কবর দেয়ার পর আর সেই ভূত দেখা যায়নি।
প্রাচ্যের অনেক ধর্মে ভূতের কথা উল্লেখ আছে। যেমন হিন্দুদের পবিত্রগ্রন্থ বেদ-এ ভূতের কথা উল্লেখ আছে। হিব্রু তাওরাত ও বাইবেলেও ভূতের উল্লেখ আছে। যীশুখৃস্ট যখন পানির উপর দিয়ে হেঁটে আসছিলেন তখন তার অনুসারিরা তো তাকে প্রথমে ভূতই ভেবেছিল।
উনিস শতকে ‘ক্রিসমাস ক্যারল’ বইতে লেখক চার্লস ডিকেন্স ভূত এনেছিলেন। ভূতদের নিয়ে নানান লৌকিক কাহিনী ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর এ মাথা থেকে ও মাথা পর্যন্ত। ভূত এসেছে শেক্সপিয়রের বিখ্যাত নাটক ‘হ্যামলেট’-এ। হ্যামলেট তখন ডেনমার্কের রাজকুমার। রাজা ক্লডিয়াসকে তার চাচা গোপনে খুন করে ডেনমার্কের রাজা হওয়ার লোভে। কিন্তু রাজার অতৃপ্ত আত্মা বারবার ফিরে আসে। হ্যামলেটকে দেখা দিয়ে যায়। হ্যামলেটও কৌশলে দেশবাসীকে সেটা জানিয়ে দেন।
অস্কার ওয়াইল্ডের লেখা গল্পে আছে দৈত্যের কথা। প্রথমে দৈত্যটা অহঙ্কারী থাকে। শিশুদের সে তার বাগানে ঢুকতে দিতে চায় না। পরে শিশুদের বন্ধু হয়ে যায়। আর ভূত নিয়ে পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন ভাষায় হয়েছে অসংখ্য চলচ্চিত্র। এসব চলচ্চিত্রের কোনোটা ভয়ানক, কোনোটা হাসির, কোনোটা দুঃখের। ভূতদের কাল্পনিক জীবন নিয়ে তৈরি এসব চলচ্চিত্র দর্শকপ্রিয়তাও পেয়েছে। তবে ভূতপ্রিয়তা পেয়েছে কি না কে জানে? শিশুদের জন্য তৈরি কার্টুন সিরিজ ‘স্কুবি ডু’, ‘ড্যানি ফ্যান্টম’, ‘ঘোস্ট ট্র্যাকার্স’, ‘ট্রুথ অর স্কেয়ার’, ‘মিস্ট্রি হান্টার্স’-এর কাহিনী গড়ে উঠেছে ভূতকে কেন্দ্র করে। হালের কার্টুন সিরিজ ‘বেন টেন’-ও ভূতকে ঘিরেই। দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পাওয়া গ্রন্থ ও চলচ্চিত্র হ্যারিপটারের কাহিনীও ভূত বিষয়ক।
ভূতে বিশ্বাস
তুমি কি ভূত বিশ্বাস করো? এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে পৃথিবীর অনেক মানুষকে অনেকবার। পৃথিবীর অনেক দেশেই জরিপ করা হয়েছে সে দেশের মানুষ বা শিশুরা ভূতে বিশ্বাস করে কী না? এবং দেখা গেছে উন্নত দেশের মানুষ ও শিশুদের আজগুবি সব বিষয়ে বিশ্বাস তুলনামূলকভাবে অনুন্নত দেশের মানুষের চেয়ে বেশি। এবং শিক্ষিত মানুষের মধ্যে এই বিশ্বাস অশিক্ষিত মানুষের চেয়েও বেশি। সে হিসাব করতে গেলে শিক্ষিত ও উন্নত দেশের বেশিরভাগ মানুষ ও শিশু ভূত বা এধরনের অলৌকিক প্রাণী বিশ্বাস করে।২০০৫ সালে আমেরিকার গ্যালপ অর্গানাইজেশন আমেরিকানদের উপর একটা জরিপ চালায়। জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৩২ ভাগ আমেরিকান ভূতে বিশ্বাস করে। ছোটরা তো করেই, বড়রাও ভূতে বিশ্বাস করে বসে আছে।
ভূতের অস্তিত্ব
পশ্চিমা দেশের অনেকের বিশ্বাস ভূত আছে। আর আছে বলেই ভূতের অস্তিত্ব সম্পর্কে তারা কিছু ধারণাও দিয়েছে। তাদের অনেক ভূত গবেষক গবেষণা করে বেরও করেছেন কোথায় কোথায় ভূতের অস্তিত্ব থাকতে পারে। এবং কীভাবে বোঝা যাবে ভূতের অস্তিত্ব। তেমনি কিছু এখানে জানানো হল-১. ঠাণ্ডা জায়গা। আশপাশের জায়গা থেকে যদি কোনো জায়গা ঠাণ্ডা হয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে এখানে ভূত আছে বা খানিক আগে ছিল। ভূতদের শক্তির প্রয়োজন। তারা কোনো গরম জায়গায় এসে সে জায়গা থেকে শক্তি আহরন করে নিয়ে যায়। ফলে সে জায়গা ঠাণ্ডা হয়ে থাকে।
২. বৈদ্যুতিক জিনিসপত্রের অদ্ভুত আচরন। ভূতদের উপস্থিতিতে বৈদ্যুতিক জিনিসপত্র নানান রকম অদ্ভুত আচরন করে। যেমন বাতি জ্বলে-নেভে, রেডিও অন অফ হয়, টিভি ঝির ঝির করে।
৩. কোনো কিছুর অকারণ নড়চড়া। এমনকি কোনো জড়বস্তুও অকারণে নড়া চড়া শুরু করে দেয়। যেমন দরজা জানালা খোলে আবার বন্ধ হয়।
৪. চোখের সামনে থেকে কোনো কিছু হারিয়ে যায় বা নড়া চড়া শুরু করে দেয়।
৫. পানি ক্রমাগত উপরে উঠে আবার নিচে নামে।
৬. শীতল কোনো কিছুর স্পর্শ অনুভব করা।
৭. নানান ধরনের ভৌতিক শব্দ শোনা। যেমন কারো হাঁটার শব্দ, গান, কথা বলার শব্দ, ফিসফিসানি, খটখট শব্দ, বিকট শব্দ, কোনো কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ, টেলিফোন রিং।
৮. কোনো জায়গায় হঠাৎ কোনো আলোর ঝলকানি।
৯. কোনো ছায়া বা কোনো কিছু নড়াচড়া করছে দেখতে পাওয়া
১০. কোনো প্রাণীর অদ্ভুত আচরন করা। কারণ ভূতদের অস্তিত্ব প্রাণীরাই প্রথমে টের পায়।
১১. হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই কোনো অদ্ভুত বা পরিচিত গন্ধ পাওয়া ১২. হঠাৎ কোনো কুয়াশা বা অপচ্ছায়া উদয় হওয়া
১৩. হঠাৎ কোনো কিছু ভাসতে থাকা।
ভূত দেখতে কেমন
যারা ভূতে বিশ্বাস করে ও ভূত গবেষণা করে, ভূতেরা দেখতে কেমন সেটারও একটা বর্ণনা তারা দিয়েছেন। ভূত গোলাকার হতে পারে। আলোর মতো এই গোলাকার ভূতের আলো অনেক দূর যেতে পারে আবার খুব দ্রুত নড়তেও পারে। অনেকেই বিশ্বাস করে এটাই হচ্ছে ভূত বা কোনো অতৃপ্ত আত্মার উপস্থিতি বোঝার প্রথম পর্যায়। ভূতের আকার হতে পারে কুয়াশা, বাষ্প বা পানির মতো। এবং এই আকার তৈরি হয় ধোঁয়া বা কুয়াশা থেকে। মানুষের ছায়ার মতো হতে পারে ভূত। দেখা গেল কোনো মানুষ নেই কিন্তু একটা ছায়া ঘোরাঘুরি করছে। তাহলে নিশ্চিত হতে হবে ওটা ভূত। ভূত আবার একটি অদ্ভুত চেহারার আর অদ্ভুত শরীরের মানুষের আকৃতিও নিতে পারে। তবে এরকম ভূত দেখা যায় না বললেই চলে। দেখা গেলেও খুবই কম।ভূত নিজেকে যে কোনো জায়গায় প্রকাশ করতে পারে। যত উজ্জল আলো হোক কিংবা যত ঘন অন্ধকারই হোক, আবার কোনো নির্জন জায়গা হোক বা হাজার হাজার মানুষের সামনেও সে নিজেকে হাজির করতে পারে। একটা কথা প্রচলিত আছে, অনেক মানুষের মাঝে এসে নাকি ভূতেরা শক্তি সঞ্চয় করে নেয়। রাতে বা দিনে যে কোনো সময়ই তারা চলাফেরা করতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করে যখন খুব কম মানুষ জেগে থাকে, তখনই নাকি ভূতদের উদয় হওয়ার মোক্ষম সময়। সে হিসাবে রাতই হচ্ছে ভূতদের বের হওয়ার আসল সময়। আবার কিছু ভূত বিশেষজ্ঞ মনে করেন বুদ্ধিমান ভূতেরা নির্জন এলাকার চেয়ে জনাকীর্ণ এলাকাই পছন্দ করে বেশি। এতে তাদের ধরা পড়ার সম্ভবনা কম।
ভূত যদি এসেই পড়ে
ভূত যদি এসেই পড়ে তাহলে কী করতে হবে? বেশিরভাগ ভূতই হচ্ছে অতৃপ্ত আত্মা। অপূর্ণ কোনো চাহিদার জন্যই তারা ভূত হয়ে ফিরে আসে বারবার। আবার কোনো কোনো ভূত পথ হারিয়ে চলে আসে। কোথায় যেতে হবে বুঝতে পারে না। এমন ভূত হলে ভয়ের কিছু নেই। ভূতের সাথে সৌহার্দপূর্ণ আচরণ করতে হবে। তাকে বোঝাতে হবে তুমি তার শত্রু নও। তাকে সাহায্য করতে চাও। এবং একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, মানুষ যতই ভূতে ভয় পাক বা না পাক, ভূত কিন্তু মানুষকে ঠিকই ভয় পায়। ভূতের সাথে দেখা হয়ে গেলে প্রথমেই তার ভয় ভাঙাতে হবে। নিজে তো ভয় পাওয়া চলবেই না। ভূতের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। যেহেতু তারা অস্পষ্ট স্বরে কথা বলে, তাই মনোযোগ দিয়ে না শুনলে তাদের কথা বোঝা যাবে না। কোনো মৃত মানুষকে আবার ঠিক মতো সৎকার করা না হলে তার আত্মা ভূত হয়ে আসে। ঠিক মতো মৃতের সৎকার করলে আত্মার অতৃপ্তি থাকে না।বাংলার ভূত
বাংলার ভূতরা নানান নামে পরিচিত। ভূতদের জাতিভেদও আছে। মানে পুরুষ ভূত তো আছেই, স্ত্রী ভূতও আছে। স্ত্রী ভূতকে পেত্নী হিসেবেই ডাকা হয়। যদিও কথাটি প্রেত-এর স্ত্রীলিঙ্গ প্রেতিনী জাত। এর লৌকিক উচ্চারণ পেত্নী। আছে ডাকিনী-নাগিনী। ডাকিনীরা শিব-দুর্গার অনুচরী। পেত্নীর পরেই দাপুটে স্ত্রীভূত হচ্ছে শাকচুন্নি। এদের আরেক নাম শাখিনী। পুরুষভূতদের মধ্যে সবার প্রথমেই আছে ব্রহ্মদৈত্য। এরা সাধারনত খড়মপায়ে ঘুরে বেড়ায়। মধ্যরাতে খড়মপায়ে কাউকে হাঁটতে শুনলেই বোঝা যাবে এরাই ব্রহ্মদৈত্য। এদের বসতি সাধারনত বেলগাছে।আর দানো হিসেবে যাদের পরিচিতি এরা ঠিক ভূত নয়, তবে ভূত গোত্রীয়। দানোরাই হচ্ছে দানব বা দৈত্য। আরবি সাহিত্যের জিনই হচ্ছে দানো। একানড়ে নামে যে ভূত, তার পা আবার একটা। এক পায়েই সে সকল কাজকর্ম করে। মানে ভূত সমাজে প্রতিবন্ধী ভূত। আরেকজাতের প্রতিবন্ধী ভূত আছে। এদের নাম কন্ধকাটা ভূত। এরা কবন্ধ নামেও পরিচিত। এদের মাথা নেই। আছে কেবল ধড়। গলাকাটা এই ভূতের মাথা সে নিজের হাতে নিয়ে ঘোরে। কাটা মুণ্ডটি কথাও বলতে পারে। এবং খামোখাই বক বক করে।
আছে পেঁচো ভূত। পেঁচোরা টার্গেট করে শিশুদের। মানে ওরা শিশুদের ভয় দেখিয়েই তবে মজা পায়। আছে যক্ষভূত। যক্ষভূত হল পাহারাদার ভূত। আগের দিনের ধনী কৃপণরা তাদের ধনসম্পত্তি নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল। মাটির নিচে ঘর বানিয়ে সেই ঘরে তাদের ধন-রত্ন লুকিয়ে রাখত। তবু তাদের ভয় হতো, যদি কেউ চুরি বা ডাকাতি করে সেই ধন নিয়ে যায়? এই ধন-রত্ন পাহারা দেয়ার জন্য কোনো এক বালককে ধরে এনে পুজো করে সেই ঘরে বন্দি করে রাখত। একসময় সেই ঘরে বন্দি থেকে না খেয়ে মারা যেত সেই বালক। মরে গিয়ে সে হতো যক্ষভূত। যক্ষভূতের কাজই হচ্ছে অপরের ধন রক্ষা করা। উপযুক্ত উত্তরাধিকে সেই ধন ফেরৎ দিতে পারলেই তার মুক্তি ঘটত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সম্পত্তি-সমর্পণ’ এমনই একটি গল্প।
বাংলাসাহিত্যে কিন্তু পুকুরেও ভূত থাকে। পুকুরের ভূতের নাম হাঁড়া-ভূত। মানুষ পুকুরে সাঁতার কাটতে নামলে এরা মাঝে মাঝে পা ধরে টেনে নিয়ে ডুবিয়ে মারে। তারপর রক্তপান করে। কালবৈশাখির ঝড়ে গোল হয়ে যে ঝড় ঘোরে-তার নাম বাঁড়ুল ভূত। এই ভূত দেখা দিলে নাকি মাঝউঠানে একটা পিঁড়ি উল্টো করে বলতে হয়- বাঁড়ুল বাঁড়ুল-মাছ পোড়া দিয়ে ভাত খেয়েছি-ছুঁয়ো না।
বাঁশ-ঝাড়ে থাকে ঝেরুভূত। ঝেরুভূতের কারণেই নাকি বাঁশঝাড়ের বাঁশেরা এমন শুয়ে থাকে। রাতে ঘুমন্ত মানুষকে ডেকে নিয়ে যায় যে ভূত, তার নাম দিশাভূত নিশাভূত। এই ভূতেরা আবার হাঁড়াভূতের মতো অতোটা ভয়ঙ্কর নয়। এরা কারো রক্ত পান করে না। কাউকে মারেও না। কেবল সারারাত ঘুরিয়ে মারে। আর খুব ভয়ঙ্কর হলে ঘাড় মটতে দেয়। তবে একবারের বেশি এরা ডাকে না।
মানুষভূতের পাশাপাশি ঘোড়াভূত, গোভূতও আছে বাংলা সাহিত্যে। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর নাকি ঘোড়াভূত দেখেছিলেন। এছাড়া আছে বাস্তুভূত। এরাও মানুষের কোনো ক্ষতি করে না।
আমাদের ভূতেরা কোথায় থাকে?
আমাদের ভূতেরা কোন জায়গায় থাকে না? পানি, মাটি, বাতাস-সবজায়গাতেই এদের অবাধ বিচরণ। ব্রহ্মদত্যির পছন্দ বেলগাছ, শিমুলগাছ। শাকচুন্নির প্রিয় জায়গা হচ্ছে ঘন শ্যাওড়া ঝোপ। শ্যাওড়া ঝোপ অবশ্য অন্যভূতদেরও প্রিয় আবাসস্থান। একানড়ে ভূতদের থাকার জায়গা হচ্ছে নির্জন বিস্তীর্ণ প্রান্তরের তালগাছ। আর ভূতুড়ে বাড়ি পেলে কোনো ভূতই সেখানে থাকতে আপত্তি করে না। পুকুর প্রিয় হচ্ছে হাঁড়াভূতদের। এবং এরা শুধু পুকুরেই থাকে।আমাদের ভূতরা কী খায়?
ভূতদের সবচেয়ে প্রিয় খাবার হচ্ছে মাছ। তবে পোড়া মাছ। ভাতের হাঁড়ি ভেঙে রান্না মাছও খায় কোনো কোনো ভূত। মেছোভূতরা তো মাছ ছাড়া আর কিছুই খায় না। হাঁড়াভূতরা রক্তপান করে। আসলে একসময় আমরা মাছে-ভাতে বাঙালি আমরা ছিলাম বলেই, আমাদের ভূতদের প্রধান খাবারও হচ্ছে মাছ। মাছের যে কোনো পদই তারা পছন্দ করে। ইলিশ মাছ ভূতদের বেশি পছন্দ।আমাদের ভূতেরা দেখতে কেমন?
আমাদের ভূতেরা নানান ধরনের। কেউ দুটো তালগাছের সমান লম্বা। কারো কারো হাতপা এত লম্বা যে, যত দূরেই থাকুক যে কোনো কিছু এরা ধরতে পারে। এবং যে কোনো জায়গায় এরা নিমেষে যেতে পারে। আবার ইচ্ছে মতো হাত বা পা লম্বাও করতে পারে। কারো কারো শরীর আবার কেবল হাড় দিয়েই গড়া। এদের চোখদুটো কোটরে ঢোকানো। তবে দাঁত বত্রিশটিই বর্তমান। কারো কারো আবার ফোকলা দাঁতও আছে। ফোকলা দাঁতে শিরশিরিয়ে হাসে। বেশিরভাগ ভূতেরই গায়ের রঙ কালো। মেয়ে ভূতদের নাক সবসময়ই থ্যাবড়ানো। কারো কারো আবার একটা পা। কারো আবার পায়ের পাতা থাকে পিছনের দিকে। কোনো কোনো ভূতের লেজও থাকে।আমাদের ভূতরা কি নেংটো থাকে?
না। আমাদের ভূতরা নেংটো থাকে না। কেউ কেউ মসলিন জাতীয় কাপড় পরে। তবে বেশিরভাগই সাদা থান কাপড় পরে থাকে। আর শাকচুন্নিরা পরে লালপেড়ে সাদা শাড়ি। কোনো কোনো ভূত গামছাও পরে। কিছু কিছু ভূত আবার ছায়াময়। তাদের পরণে যে কী থাকে বলা যায় না।আমাদের বাংলাসাহিত্যে ভূতের রমরমা কারবার। বিচিত্র নামে, বিচিত্ররকমে এরা আমাদের সামনে আসে। বাংলা সাহিত্যে ভূত নিয়ে কে লিখেননি? প্রায় সকল সাহিত্যিকই ভূতের গল্প লিখেছেন। তবে বাংলাসাহিত্যে ভূতগল্প লেখকদের মধ্যে সেরা হচ্ছেন ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়। ১৮৯৩ সালে তিনি লিখলেন স্কল স্কেলিটন এন্ড কোং। ত্রৈলোক্যনাথ ভূতদের জন্মরহস্যও উদঘাটন করেছেন। তিনি লিখেছেন- যেমন জল জমিয়া বরফ হয়, অন্ধকার জমিয়া তেমন ভূত হয়।
সত্যিই কি তাই? হয়ত। নয় তো আমরা অনেকেই ভূত বিশ্বাস করি না ঠিকই, কিন্তু অন্ধকারে ভূতের ভয় পাই কেন? আমাদের চিন্তা ও চেতনার অগোচরেই অন্ধকারে ভূত থাকে বলে আমরা মনে করি। এই মনে করি দেখেই আমরা ভূতে ভয় পাই।
আসল কথা
কথায় আছে- আহার নিদ্রা ভয়, যত করবে তত হয়। ভয় না পেলেই হয়। যতই ভয় পাবো, ততই আরো ভয় আমাদের জড়িয়ে ধরবে। আর ভয় না পেলেই কোনো ভয়ই আমাদের ভয় পাওয়াতে পারবে না। ভূতের ভয় তো তখন তুচ্ছ, যেখানে ভূত বলতে কিছু আছে এমন প্রমাণ কেউ কোনোদিন দিতে পারেননি। দিতে পারবেন বলেও মনে হয় না। যদি সত্যিই ভূত বলে কিছু থাকতো, তাহলে এতদিনেই আমরা সে ভূত আবিস্কার করে ফেলতে পারতাম। মঙ্গলে পানির সন্ধানে মানুষের তৈরি নভোযান যাচ্ছে, আর আমাদের ক্ষুদ্র এই পৃথিবীতে আমরা এখনও ভূতের সন্ধান করতে পারিনি- এটা কি বিশ্বাস যোগ্য?
সূত্রঃ ও বিভিন্ন তথ্য: ইন্টারনেট থেকে সগ্রহ করা
pore valo9 laglo...
ReplyDeletemoja pelam
ReplyDeleteQuestion..? No one even proved God is there... Do you deny that? Can you explain how come every civilization believes in god and spiritual existence even though they had no communication between them at beginning?
ReplyDeleteBetter to call these as unexplained. While science do not accept them, science do not deny them too.
However it is a good light article.
not bad...........
ReplyDeleteভূত বিশ্বাস করার চেয়ে সৃষ্টিকর্তাকে বিশ্বাস করা সহজ, আজও সেটা পেরে উঠলাম না ।
ReplyDeleteভূত বলতে কিছু নেই আমি ১00% সিউর
ReplyDelete