পৃথিবীব্যাপী সর্বাধিক মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক, একে নীরব ঘাতক বা সাইলেন্ট কিলার বলা হয়। কর্মক্ষম মানুষের জীবনের অধিকাংশ সময় তার কর্মস্থলে ...

দীর্ঘ জীবনের জন্য সুস্থ হার্ট প্রয়োজন

12:49:00 PM Mainuddin 5 Comments

পৃথিবীব্যাপী সর্বাধিক মৃত্যুর কারণ হার্ট অ্যাটাক, একে নীরব ঘাতক বা সাইলেন্ট কিলার বলা হয়। কর্মক্ষম মানুষের জীবনের অধিকাংশ সময় তার কর্মস্থলে কাটে, তাই অফিসের পরিবেশ যেন হার্টবান্ধব থাকে সেদিকে গুরুত্বারোপ করে এ বছর বিশ্ব হার্ট দিবসের স্লোগান হচ্ছে I work with Heart প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ রোববার পেশা-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে
সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত হয়।
হৃদরোগ মোকাবিলা করার জন্য আমাদের কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এজন্য কীভাবে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করা যায় সে নিয়ে আলোচনা করা হল

ধূমপান বর্জন করুন
ধূমপান শুধু নিজে না করলেই চলবে না, আপনার সহকর্মী বা পরিবারের কেউ যেন না করে সে ব্যাপারে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা তাকে করতে হবে। অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ২-৪ গুণ বেশি। ধূমপায়ী ব্যক্তিরা হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। শুধু ধূমপান নয়, তামাক জাতীয় যে কোনও দ্রব্য গ্রহণই হৃদরোগের কারণ ইনভলান্টরি স্মোকিং অর্থাৎ ধূমপায়ীদের ধোঁয়া অধূমপায়ীদের শারীরিক ক্ষতি করে বেশি।

ফ্রেশ শাক-সবজি ও ফলমূল খান
আমরা দিনে সাধারণত পাঁচবার খেয়ে থাকি। তিনবার মূল খাবার ও দুইবার নাশতা। প্রতিবেলার খাবারে পাঁচ সার্ভিংস (একবারে যতটুকু খাওয়া যায়) শাক-সবজি, তরিতরকারি ও ফলমূল খেতে হয়। বাতাবিলেবু (সাইট্রাস ফল, কলেস্টেরল কমায় ও হজমে সাহায্য করে), আমড়া, পেয়ারা, কলা, আমলকী ইত্যাদি ফল প্রতিদিন খেতে হবে। মৌসুমী যেসব শাক-সবজি ও তরিতরকারি পাওয়া যায় তাও প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখতে হবে।

হৃৎপিণ্ডের জন্য উপকারী খাবার তালিকা নিচে দেয়া হল
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন
* প্রচুর পরিমাণ ফলমূল ও শাক-সবজি।
* ননীবিহীন দুধ, পনির ও দই।
* শস্য জাতীয় দানাদার ও অধিক আঁশযুক্ত খাদ্যসামগ্রী যেমন যব, ভুট্টা, গম ইত্যাদি।
* চর্বিবিহীন মাংস।
* অল্প পরিমাণে অসম্পৃক্ত চর্বি যেমন- সয়াবিন, সূর্যমুখী, জলপাই তেল ইত্যাদি।
সপ্তাহে কয়েকদিন (২-৩ দিন) খান
* শুকনো মটর, সিম ও মসুরের ডাল।
* বাদাম, চর্বিবিহীন মাংস এবং চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস।
* প্রতি সপ্তাহে তৈলাক্ত মাছ অন্ততপক্ষে দুই পরিবেশন খান।
একেবারে কম খান
* সম্পৃক্ত ও ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার। যেমন- ডালডা, ঘি, মার্জারিন ইত্যাদি।
* চিনি
* লবণ অথবা সোডিয়াম।
* মদ পান পরিহার করুন।

শর্করা, আমিষ ও চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার নিয়ম
এসব খাদ্য সুস্থতার জন্য সবার কম-বেশি খাওয়া প্রয়োজন। শর্করা ও আমিষে ক্ষতিকর তেমন কোনও উপাদান নেই, চর্বি জাতীয় খাদ্যে সবচেয়ে বেশি ক্যালরি থাকে এবং এটি বেশি খেলে শরীরের অনেক ক্ষতি হবে যেমন- মেদ জমা হয়, রক্তনালীর ভেতর চর্বি জমা হয়ে রক্তনালী সরু হয়ে যায় ফলে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, উচ্চরক্তচাপের সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চরক্তচাপে ভুগতে থাকলে হৃদরোগসহ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, চোখের দৃষ্টি নষ্ট, কিডনি অকেজো, পায়ে পচনসহ বিবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। রক্তে চর্বির পরিমাণ ওষুধ দিয়ে কমানো যায়। তবে সারাজীবন দামি ওষুধ সেবন অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। এছাড়া এ ওষুধগুলো শরীরে নানাবিধ ক্ষতির কারণ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই চর্বি জাতীয় খাদ্য কম খেয়ে রক্তে চর্বির মাত্রা কমানো সবচেয়ে উত্তম।
মাছের চর্বিতে ওমেগা ৩ ও ওমেগা ৬ ফ্যাটি এসিড থাকে যা রক্তের চর্বি কমাতে সাহায্য করে, রক্তনালীতে চর্বি জমা থেকে রক্ষা করে, উচ্চরক্তচাপ কমায়, অধিক পরিমাণে চর্বি আছে এমন খাবার যেমন গরু ও খাসির মাংস, ডিমের কুসুম, ঘি, মাখন, কলিজা, মগজ পরিহার করলে রক্তে চর্বি বাড়ে না, উচ্চরক্তচাপ ও হৃদরোগগের ঝুঁকি কমে যায়।

কায়িক পরিশ্রম করুন
নিয়মিত হাঁটা, ব্যায়াম করা, বাগান করা, সিঁড়ি বেয়ে ওঠা ইত্যাদি নানাবিধ কাজের মাধ্যমে শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা সম্ভব এবং হৃদরোগগের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব। আবার বেশি পরিশ্রম করাও শরীরের জন্য খারাপ, আমাদের দেশে গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন, উপরন্তু তারা ধূমপান করেন এবং খাদ্য ও পুষ্টির ব্যাপারে সচেতন নন, তারা নানাবিধ শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হন। অফিস বা হাসপাতালে জিমের ব্যবস্থা থাকলে কর্মজীবীদের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।

মেদভুঁড়ি কমান
যাদের কোমরের বেড় ৪০ ইঞ্চি (পুরুষের ক্ষেত্রে) বা ৩৫ ইঞ্চির (মহিলাদের ক্ষেত্রে) বেশি তাদের দেহে ক্ষতিকারক কলেস্টেরল বেশি থাকে ফলে হৃদরোগরোগের ঝুঁকি থাকে। পক্ষান্তরে বডি মাস ইনডেক্স অর্থাৎ ওজন ও দৈর্ঘ্যরে অনুপাত ২৪ এর বেশি হলে তারও হৃদরোগগের সমূহসম্ভাবনা থাকে। এজন্য শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়।

দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হন
সমস্যাসংকুল জীবনে কীভাবে একে মোকাবিলা করতে হয়, তা জানতে হবে। রিলাক্সেজন থেরাপি যেমন অ্যারোবিক এক্সারসাইজ, যোগ ব্যায়াম করা যেতে পারে। ইতিবাচক চিন্তা।

কম লবণ গ্রহণ করুন
আমাদের দেশে উচ্চরক্তচাপ তথা হৃদরোগগের অন্যতম কারণ অধিকমাত্রায় লবণ গ্রহণ করা, লবণ কাঁচা বা ভাজা যে অবস্থাই হোক মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া যাবে না। টিনজাত বা প্যাকেটজাত খাবার, ফাস্টফুড, পাতে আলগা লবণ খাওয়া পরিত্যাগ করতে হবে।

উচ্চ কলেস্টেরল ও ডায়াবেটিস স্বাভাবিক মাত্রায় রাখুন
যে সব খাবারে সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্স ফ্যাট কম থাকে সেগুলো কলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং হৃদরোগগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত ব্যায়াম খারাপ কলেস্টেরলের মাত্রা কমায় ও ভালো কলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ছয় মাস অন্তর অন্তর রক্তের চর্বির পরীক্ষা করা ভালো, ডায়াবেটিস আক্রান্ত এক-তৃতীয়াংশ লোক হৃদরোগ বা রক্তনালীর সমস্যার কারণে মারা যায়। তাই সর্বদা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
হৃদরোগগের এ কারণগুলো জেনে প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিলে বা রোগ হলে সঠিক চিকিৎসা নিয়ে দীর্ঘজীবন সুস্থ থাকা যায়।


তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট

5 comments:

  1. কাজের পোষ্ট ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য

    ReplyDelete
  2. ভাল কাজের পোষ্ট দিলেণ চালিয়ে যান

    ReplyDelete
  3. কারণগুলো জেনে ভাল লাগল

    ReplyDelete
  4. দারুন একটি পোষ্ট করেছেন। এ রকম আরো ভালো ভালো পাষ্ট আপনার কাছ থেকে আশা করছি। চালিয়ে যান।

    ReplyDelete