: কেমন আছেন কম্পিউটার ভায়া? : আমি আছি ভালোই। তবে হয়েছে কি, কিবোর্ডের কয়েকটা বাটনে খুব ব্যথা। তাই নিয়ে একটু দুশ্চিন্তায় আছি । : কেনো? কিবোর্ড...

একান্ত সাক্ষাৎকারে কম্পিউটার!!!

5:46:00 PM Mainuddin 1 Comments



: কেমন আছেন কম্পিউটার ভায়া?
: আমি আছি ভালোই। তবে হয়েছে কি, কিবোর্ডের কয়েকটা বাটনে খুব ব্যথা। তাই নিয়ে একটু দুশ্চিন্তায় আছি
: কেনো? কিবোর্ডে কি হয়েছে?
: তেমন কিছু না। আমার মালিক আমাকে দিয়ে মারামারির গেম খেলছিলো তো, তখন কিবোর্ডে কয়েকটা কি’তে এমন জোরে জোরে প্রেস করেছিলো, একদম ব্যথা হয়ে গেছে।
: সে তো আসলেই বড়ো দুঃখের কথা কম্পিউটার ভায়া।
: না, সেটা বড়ো কোনো সমস্যা নয়। তো কি জন্যে যেনো আমাকে ডেকেছো তোমাদের অফিসে?বড়ো
: আপনার একটা সাক্ষাৎকার দেয়ার কথা ছিলো। সেজন্যেই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিলো।
: তাই নাকি? তাহলে আর দেরি করে কাজ কি, শুরু করে দাও। তবে মনে রেখো, আমার কিন্তু নিজস্ব চিন্তাশক্তি নেই। আমাকে যা শেখানো হয়েছে, আমি কেবল তাই বলতে পারবো। তাই সেভাবে প্রশ্ন কোরো।
: তা জানি, সেভাবেই প্রশ্ন করবো। তো আপনার আর সব কথাই তো আমরা সবাই জানি। আপনি বরং আপনার ইতিহাসের গল্পগুলো আমাদেরকে শোনান।
: আমার ইতিহাস। সে তো খুবই জটিল। তার আগে তুমি বলো তো দেখি, কম্পিউটার কাকে বলে?
: যে যন্ত্র দিয়ে গণনার কাজ করা যায়, মূলত তাকেই বলা হয় কম্পিউটার। তবে সে গণনা মামুলি গণনা থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল সাইজের গণনাও হতে পারে।
: এ কথা তুমি পাঁচজনকে বলে দেখো, সবাই তো তোমাকে পাগল ভাববে! বলবে, ও তো ক্যালকুলেটর। মানছি, তোমার কথা শতভাগ সত্য, কিন্তু এখন তো সবার ঘরে ঘরেই কম্পিউটার আছে, কয়জন তা দিয়ে গণনার কাজ করে বলো দেখি? এখন কম্পিউটার হতে হলে তাতে প্রোগ্রাম চলতে হবে, আর সেইসব প্রোগ্রাম দিয়ে নানা রকমের কাজ করা যাবে।
: গেম খেলা, গান শোনা, মুভি দেখা, ইন্টারনেট ব্রাউজ করা, ডাউনলোড করা, এ সবই তো আমরা প্রোগ্রামের সাহায্যে করছি।
: এইতো ধরতে পেরেছো। সে কথা চিন্তা করলে আবার কম্পিউটারের ইতিহাস তো মাত্রই কয়েকদিনের। আবার কম্পিউটার কিন্তু প্রথম তৈরি করা হয়েছিলো গণনা যন্ত্র হিসেবেই। আর সেজন্য প্রাচীন গণনা যন্ত্রগুলোও কিন্তু আমার পূর্বপুরুষদের মধ্যেই পড়ে।
: আপনি তো ভালো প্যাঁচ লাগালেন দেখছি! তবে আপনার ইতিহাসের শুরু কবে থেকে?
: সেটা খ্রিস্টের জন্মেরও প্রায় ৪৫০-৫০০ বছর আগের কথা। তখন মিশরে আর চীনে গণনার কাজে ব্যবহারের জন্য প্রথম একটি যন্ত্র বানানো হয়। তাতে কাঠের ফ্রেমে কয়েকটা লোহার দণ্ড লাগিয়ে তাতে কতোগুলো পুঁতি গেঁথে দেয়া হতো। সেই পুঁতিগুলোর স্থান বদল করে গণনার কাজ করা হতো। সেটার নাম ছিলো অ্যাবাকাস। আবার রাশিয়া আর জাপানেও এমন যন্ত্র ব্যবহার করা হতো। রাশিয়ায় তার নাম ছিলো স্কোটিয়া, আর জাপানে সারোবান। এখনো সেই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য চীন, রাশিয়া আর জাপানের কিছু কিছু জায়গায় অ্যাবাকাস ব্যবহার করা হয়।
: এই অ্যাবাকাসই তাহলে আপনাদের আদিপুরুষ? প্রথম কম্পিউটার?
: না, তাকে প্রথম কম্পিউটার তো আর বলা যায় না, কারণ সেটার প্রোগ্রামিং ক্ষমতা থাকার প্রশ্নই ওঠে না। তবে ওখান থেকেই আমাদের ইতিহাসের শুরু। কারণ, অ্যাবাকাসই প্রথম স্বীকৃত গণনা যন্ত্র। এরপর আস্তে আস্তে মানুষের গণনা পদ্ধতির উন্নতি হলো, মানুষ গণনার কাজে ব্যবহারের জন্য অনেক গণনা যন্ত্র বানালো। গণনা যন্ত্রের ইতিহাসে প্রথম বড়ো ধরনের সাফল্য অর্জন করেন জন নেপিয়ার। তিনি কতোগুলো কাঠির সাহায্যে একটা গণনার যন্ত্র তৈরি করেন। সেটাকে বলা হয় নেপিয়ারের হাড়।
: নেপিয়ারের হাড়? কী অদ্ভূত নাম রে বাবা!নেপিয়ারের
: হ্যাঁ, অদ্ভুত তো বটেই। এরপর ১৯৪২ সালে ব্লেইজ প্যাসকেল তৈরি করেন আরেকটি নতুন গণনা যন্ত্র। এটাতে গণনার কাজে তিনি ব্যবহার করেছিলেন গিয়ার। এটার নাম দেয়া হয় প্যাসকেলাইন। কিন্তু এগুলো দিয়ে কেবল যোগ করা যেতো।
: তবে গুণ-ভাগ এসব করতো কিভাবে?
: গুণভাগ করার জন্য আরো উন্নত একটি গণনা যন্ত্র তৈরি করেন ভন লিবনিজ, ১৬৭১ সালে। এটা তৈরি করতে তিনি প্যাসকেলের যন্ত্রের কৌশলই ব্যবহার করেন। নাম দেন রিকোনিং মেশিন। কিন্তু এই যন্ত্রের কিছু অসুবিধা ছিলো। আর সেসব অসুবিধা দূর করেন টমাস ডি কোমার। ততোদিনে অবশ্য ১৮২০ সাল হয়ে গেছে।
: যোগ হলো, গুণ-ভাগও হলো, কিন্তু তখন কি মানুষ বিয়োগ করতো না?
: করবে না কেনো? এর ৩ বছর পরেই বিয়োগ করার যন্ত্র আবিস্কার হয়। ১৮২৩ সালে চার্লস ব্যাবেজ তৈরি করেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন। সেটা দিয়ে বিয়োগও করা যেতো। এই চার্লস ব্যাবেজই কিন্তু আমাদের জনক। অবশ্য তিনি তার পরিকল্পিত কম্পিউটারটির কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। শেষ পর্যায়ে সরকার তাকে টাকা দেয়া বন্ধ করে দিলে তার কম্পিউটারটি তৈরিও বন্ধ হয়ে যায়। সে যন্ত্রটির নাম তিনি ভেবে রেখেছিলেন অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন।
: তবে আজকের কম্পিউটার তৈরি শুরু হলো কবে থেকে?
: ব্যাবেজের এই ইঞ্জিনের চিন্তার পর ১৮৮০ সালে হারমান হলোরিথ তথ্য আদান-প্রদানের জন্য পাঞ্চকার্ডের ব্যবহার করে দেখালেন। আর ১৯৩৬ সালে অ্যালান টিউরিং অ্যালগরিদম ও গণনার জন্য একটা ডিজিটাল যন্ত্রের খসড়া প্রস্তাব করলেন। এই তিন ঘটনা মিলে আধুনিক কম্পিউটার তৈরির পথ অনেকটা তৈরি হয়ে গেলো। আর ১৯৪১ সালে তৈরি হলো প্রথম স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার জুস জেড থ্রি।
: তাহলে আপনাদের আদিপুরুষ হচ্ছেন এই জুস জেড থ্রি?
: তা বলতে পারো। তবে প্রথম সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক কম্পিউটার হিসেবে ধরা হয় যে কম্পিউটারকে, তার নাম এনিয়াক। তাই অনেকেই এনিয়াককেও আমাদের আদিপুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে। তবে এর একটা সমস্যা ছিলো। তা হলো, প্রতিবার নতুন করে প্রোগ্রাম করার জন্য এর তারগুলোও নতুন করে লাগাতে হতো।
: সে তো এক বিশাল হ্যাপা। তবে প্রথম কম্পিউটার যখন তৈরি হলো, তারপর তো আর আপনাদের থামতে হয়নি, একে একে সব সমস্যাই তো পেরিয়ে গেছেন?
: সে তো দেখতেই পাচ্ছ। এখন কম্পিউটার কতো ছোট হয়ে গেছে একবার চিন্তা করে দেখো, হাতের ছোট ছোট ডিজিটাল ঘড়িগুলোর মধ্যেও ক্ষুদ্রাকৃতির কম্পিউটার থাকে। আর এখন সুপার কম্পিউটারগুলোর ক্ষমতা তো ভাবাই যায় না। যেসব ঘটনা আমরা কল্পনাও করতে পারি না, ওগুলো সে সব কাজই করছে।
: কম্পিউটার ভায়া, অনেক তো গল্প হলো। আজকের মতো আপনার সাক্ষাৎকারটা এখানেই শেষ করি, কি বলেন?
:
তা ভুল বলোনি। কথা বলতে বলতে আমার স্পিকারগুলো একদম ব্যথা হয়ে গেছে। তুমি বরং এখনই সাক্ষাৎকারটা শেষ করে দাও। বিদায়। তোমরাও কিন্তু তোমাদের কম্পিউটারটা ব্যবহার করার সময় একটু সাবধানে ব্যবহার করো, যাতে ওর আমার মতো কিবোর্ড ব্যথা না হয়ে যায়। তোমরা ভালো থেকো, বিদায়। 

1 comment: