কম্পিউটার যখন প্রথম আবিষ্কৃত হয় তখন এর উচ্চতা ছিল প্রায় দু’তলা একটি ভবনের সমান। কালের বিবর্তনে প্রযুক্তির উৎকর্ষে সেটি স্থান করে নিয়েছে ছোট্...

কম্পিউটার বনাম মোবাইল!!!

12:51:00 PM Mainuddin 1 Comments


কম্পিউটার যখন প্রথম আবিষ্কৃত হয় তখন এর উচ্চতা ছিল প্রায় দু’তলা একটি ভবনের সমান। কালের বিবর্তনে প্রযুক্তির উৎকর্ষে সেটি স্থান করে নিয়েছে ছোট্ট একটা টেবিলে। হাতের তালুবন্দি হয়ে ক্ষুদ্র একটি মাউস দ্বারা পরিচালিত হয়েছে সেই কম্পিউটার। বছরের পর বছর সেই কম্পিউটার প্রযুক্তিপ্রেমীদের সেবা দিয়ে আসছে। মানুষ পরিচিত হয়েছে ইন্টারনেট, ই-মেইল তথা বিভিন্ন সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটের সঙ্গে। তখন পর্যন্ত কম্পিউটারের ধারে কাছে কোনও প্রতিযোগী ছিল না
সময় বদলে গেছে। বদলে গেছে কম্পিউটারের আকার-আকৃতি। কম্পিউটারের প্রতিদ্বন্দ্বী তৈরি হয়েছে আরেক ধরনের কম্পিউটার। যার নাম ল্যাপটপ কম্পিউটার। কম্পিউটারের বাজারে যখন ল্যাপটপ হানা দিয়েছে তখন মূল্যহীন হয়ে গেছে মাউস, কি-বোর্ড, এবং মনিটরের বাজার। ল্যাপটপ আকারে ছোট। অফিসে যাওয়ার পথে রাস্তায়, গাড়িতে বসে কিংবা পার্কে গল্পে গল্পে এর ব্যবহারিক সুবিধা দিন দিন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছতে শুরু করেছে। আমরা ধরেই 
নিয়েছি ল্যাপটপের আধিপত্যকে রুখার মতো আর কোনও যন্ত্র বোধ হয় আসবে না। কিন্তু আমাদের সেই ধারণাকে বদলে দিতে শুরু করেছে মোবাইল ফোন। ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং ল্যাপটপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে মোবাইল ফোন। কম্পিউটারের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধাগুলো ক্রমান্বয়ে মোবাইল হ্যান্ডসেটগুলো আয়ত্তে আনতে শুরু করেছে। মোবাইল ফোনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এই লড়াইয়ে জয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মোবাইল কোম্পানিগুলো ভালো করেই জানে পৃথিবীজুড়ে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা এবং এর চাহিদা সম্পর্কে। তাই তো শক্ত প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছে নকিয়া, স্যামসাং এবং এলজি মোবাইল ফোন কোম্পানি। শুধু কি তাই। সদ্য মোবাইল বাজারে পা রাখা মাইক্রোম্যাক্সও বেশ জোর দিয়েই নেমে গেছে এ প্রতিযোগিতায়। ভারতে বর্তমানে দশ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করেছে। তাই পুরো বাজারটি যেহেতু এখনও পড়ে আছে, সে কারণেই তারা  আঁটসাঁট বেঁধে মাঠে নামতে শুরু করেছে। শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের অন্যতম মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নোকিয়া তাদের শীর্ষ স্থানটি ধরে রাখতে দিন দিন তাদের হ্যান্ডসেটগুলোতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। যেহেতু ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের অনেকাংশই সোস্যাল নেটওয়াকিরকিং সাইটের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই নোকিয়াও এখন তাদের হ্যান্ডসেটগুলো শুধু কথা বলা আর ম্যাসেজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখছে না। মোবাইলে ইন্টারনেট সেবায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে স্মার্টফোন। তাই তো স্মার্টফোনের বাজারে হানা দিতে নোকিয়াও ভিন্ন ভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নোকিয়ার সব মোবাইল ব্যবহারকারীর কাছে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দিতে অন্তত ৩০টি নতুন মডেলের হ্যান্ডসেট বাজারে আনার উদ্যোগ নিয়েছে নোকিয়া। ইন্টারনেট সেবা পেতে দাম যাতে কোনও অন্তরায় না হয়ে দাঁড়ায় সে লক্ষ্যে পাঁচ হাজার টাকার কম দামের মোবাইলগুলোতে এই ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। বাজারে অনেক পেছনে থাকলেও প্রতিযোগিতায় থেমে নেই স্যামসাং এবং এলজি মোবাইল ফোন নির্মাতা। স্যামসাং এতদিন ধরে তাদের হ্যান্ডসেটগুলোতে বিনোদনের বিষয়টাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল কিন্তু সময়ের আবহে তারা বুঝতে পেরেছে মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আগামী প্রজন্ম যে ইন্টারনেটের দিকেই বেশি ঝুঁকবে সেই হিসাব করে এখন বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। এ দিকে নোকিয়া,  স্যামসাংয়ের মাঝে দখল নিতে চায় আরেক মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এলজি। সে লক্ষ্যে তারা কুকি ফ্রেশ এবং কুকি প্লাস নামে দুটি হ্যান্ডসেট বাজারে ছাড়ছে। এতে মাল্টিমিডিয়া সার্ভিসের পাশাপাশি সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুক, টুইটার ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা থাকছে।
তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের বাজারে কার জায়গা কে দখল করবে সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু প্রযুক্তিপ্রেমীরা চায় সর্বদা উন্নত সেবা পেতে। তবুও শুধু উন্নত সেবা প্রদানই মানুষকে আর ধরে রাখতে পারছে না। উন্নত সেবার পাশাপাশি সহজলভ্যতা এখন আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কেননা, সহজে বহনযোগ্যতার কারণেই ডেস্কটপ কম্পিউটারের পরিবর্তে মানুষ এখন ল্যপটপের দিকে ঝুঁকছে। আবার মানুষ যখন দেখবে এসব প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধাগুলো পাঁচ আঙুলে আবদ্ধ করা একটা যন্ত্রের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে তখন মানুষ ঠিকই সেই যন্ত্রের পেছনে ঝুঁকে যাবে।

1 comment: