পাকিস্তানি সমরনায়করা বুঝে গেছে, পূর্ব পাকিস্তান তাদের হাতছাড়া হতে চলেছে। রণাঙ্গনের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও বিপর্যয় নেমে এসেছে পাকিস্তানের।...

৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১/ বাঙালির বিজয় আসন্ন

2:02:00 PM Mainuddin 0 Comments

পাকিস্তানি সমরনায়করা বুঝে গেছে, পূর্ব পাকিস্তান তাদের হাতছাড়া হতে চলেছে। রণাঙ্গনের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও বিপর্যয় নেমে এসেছে পাকিস্তানের। এ অবস্থায় একাত্তরের আজকের দিনে বাংলাদেশের নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির জন্য গণতান্ত্রিক বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে ভারতীয় পার্লামেন্ট। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পার্লামেন্টে দেয়া ভাষণে বলেন, পাকিস্তানের জেলখানায় বন্দি শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝোলানোর চেষ্টা করছে সে দেশের সামরিক সরকার। তিনি বলেন, এ সময় একমাত্র বিশ্ব বিবেকই বাংলাদেশের নেতার প্রাণরক্ষা করতে পারে। তিনি বলেন, দখলদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ থেকে বাংলাদেশের অসহায় জনসাধারণকে যে কোন মূল্যে বাঁচাতে হবে।
মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর সমন্বয়ে যৌথ বাহিনী যশোর, সুনামগঞ্জ, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর বিজয়ের পর এদিনে মুক্ত করে চাঁদপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা ও শেরপুর জেলার বেশিরভাগ এলাকা। সন্ধ্যায় যৌথ বাহিনীর দুটি দল মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জে অবস্থান নেয়। মুক্তিবাহিনীর হাতে মার খেয়ে পাকিস্তানি সেনারা দলে দলে মিত্র বাহিনীর কাছে আÍসমর্পণ করতে শুরু করে।
দিনের আলোয় রাতের আঁধারে ঢাকার আকাশে বিনা প্রতিরোধে উড়ে বেড়ায় যৌথ বাহিনীর জঙ্গি বিমান। প্রতিপক্ষের বিমান হানা দেয়ার সময় ঢাকার তাঁবেদার কর্তৃপক্ষ জনসাধারণকে সতর্ক করার জন্য সাইরেন বাজানোরও ফুসরত পায় নাÑ এমনই বেহাল অবস্থা হয় তাদের। ভারতীয় জঙ্গি বিমানের লক্ষ্যবস্তু কেবল সামরিক স্থাপনা হওয়ায় ঢাকাবাসী বিমান হামলার সময় নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পরিবর্তে রাস্তায় নেমে এসে দু’হাত নেড়ে উল্লাস করতে থাকে।
ভারতীয় জঙ্গি বিমান থেকে লিফলেট ফেলে পাকিস্তানি সেনাদের আÍসমর্পণের জন্য আহ্বান জানানো হয়। একই সঙ্গে ভারতীয় বেতার থেকে বারবার ঘোষণা দেয়া হয়, পাকিস্তান যদি তাদের পূর্বাঞ্চলের (বাংলাদেশে) যুদ্ধে পরাজয় মেনে নেয় তাহলে ভারত উভয় অঞ্চলে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে প্রস্তুত। ভারতের বেতার ঘোষণা শুনে বিভিন্ন স্থানে অবরুদ্ধ পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অফিসাররা প্রাণ নিয়ে দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেয়ার তাগিদ দিয়ে ঢাকায় হেডকোয়ার্টারে বার্তা পাঠাতে থাকে। কিন্তু তখনও ঢাকায় বসে পাকিস্তানের জেনারেলরা হুংকার দিয়ে চলেছে, পাকিস্তানের অখণ্ডতা নষ্ট করে এমন শক্তি নেই।

0 comments: