৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১
ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পাকিস্তানের কূটনৈতিক বিপর্যয়। ভারতের পথ ধরে প্রতিবেশী ভুটান আজ স্বীকৃতি দেয় বাংলাদেশকে। নয়াদিল্লিতে স্বাক্ষর করা হয় ভারত-বাংলাদেশ যৌথ সহযোগিতা চুক্তি। চুক্তি অনুযায়ী মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর যৌথ কমান্ডের অধিনায়ক নিযুক্ত হন ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। এদিন তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়ন ঘোষণা দেয়, বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণের স্বার্থের বিপক্ষে যায় এমন কোন প্রস্তাব যদি জাতিসংঘ গ্রহণ করে তাহলে ক্রেমলিন মেনে নেবে না।এদিকে, যৌথ বাহিনীর যুদ্ধবিমান বাংলাদেশের আকাশ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনার পর আজ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছত্রীসেনা নামানো শুরু করে। পলায়নপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঢাকায় আশ্রয় নেয়ার সব পথ বন্ধ করতে রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোত মিত্রবাহিনীর ছত্রীসেনারা অবস্থান নেয়। বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কাদেরিয়া বাহিনী টাঙ্গাইল মুক্ত করে। সন্ধ্যায় কাদেরিয়া বাহিনী ও মিত্রবাহিনী ঢাকা অভিমুখে রওনা হয়। সারাদিন সম্মুখযুদ্ধের পর নড়াইল, কুড়িগ্রাম, ছাতক ও সুনামগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায় দখলদার পাকিস্তানি সেনারা।
মুক্তিবাহিনীর গেরিলা হামলায় নাস্তানাবুদ পাকিস্তান বাহিনীকে রক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব করে, ভারত যেন পূর্ব পাকিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে। প্রস্তাবে বলা হয়, পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশে) যা ঘটেছে তা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেটো বা আপত্তি দিলে এ প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। এদিকে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা যোদ্ধারা দলে দলে এসে রাজধানীর আশপাশের গ্রামে অবস্থান নিতে শুরু করেন। কারফিউর রাতে তারা দু’-চারজন করে নদী পেরিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করে অপারেশন চালাচ্ছেন। গেরিলাদের চোরাগোপ্তা হামলায় সন্ত্রস্ত পাকিস্তানি সেনারা রাতে ক্যাস্প থেকে বের হয় না।
গেরিলারা যখন রাতের অন্ধকারে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বোমা হামলা ও ফাঁকা গুলিবর্ষণের মাধ্যমে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে ঢাকাবাসীকে, তখন ঢাকা সেনানিবাসে দখলদার বাহিনী তাদের দোসরদের নিয়ে বুদ্ধিজীবীদের হিটলিস্ট তৈরি করছে। এ হিটলিস্ট ধরে আÍসমর্পণের আগ মুহূর্তে ১৩ ডিসেম্বর রাতে ঘাতক আলবদর ও আলশামস বাহিনী নির্মম-নৃশংসভাবে হত্যা করে দেশমাতৃকার কৃতী সন্তান বুদ্ধিজীবীদের।
0 comments: