প্রেমের নাম দাদাপ্রেম
আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার বেশ কয়েকদিন পর মহল্লায় আগমন ঘটে সুন্দরী মুমুর। তার আগমনে কসমেটিকসের দোকানে এলাকার সব ছেলের ব্যাপক যাতায়াত শুরু হয়ে গেল। বিকাল হলেই মুখে ক্রিম, পাউডার মেখে চুল আঁচড়ে বাংলা সিনেমার নায়কের মতো শার্টের উপরের ২টা বোতাম খুলে মুমুদের বাসার সামনে দিয়ে চক্কর মারা শুরু হয়ে যেত। একদিন একসঙ্গে বেশ কয়েকজন মুমুদের বাসার সামনে চক্কর দিচ্ছি। এমন সময় সে বারান্দায় এসে মুচকি হেসে ভেতরে চলে গেল। সবার একটাই দাবি, ‘মুমু আমার দিকে তাকিয়ে হেসেছে, তাই আজ থেকে মুমুর দিকে তোরা তাকাতে পারবি না’।
কথা কাটাকাটি হাতাহাতি পর্যায়ে যাওয়ার আগে আমি প্রস্তাব দিলাম, আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করে আসছি, কার দিকে তাকিয়ে হেসেছে। সবাই রাজি হতেই মুমুদের বাসায় গিয়ে কলিংবেল চাপতেই ওর বাবা দরজা খুলে দিলেন। কি দরকার জানতে চাইতেই বললাম, মুমুর সঙ্গে কথা বলব। ওর বাবা রেগে গিয়ে বললেন, হারামজাদা এতদিন বাসার সামনে চক্কর দিতি, আজ ঘরে চলে এসেছিস? বলে লাঠি হাতে নিয়ে দিলেন দৌড়ানি। সেদিন তাড়াহুড়া করে লুঙ্গি পরেই বেরিয়েছিলাম। লুঙ্গি পরে এমনিতেই আমার হাঁটতে কষ্ট হয়, তারপর মুমুর বাবার দৌড়ানি। শেষে লুঙ্গি খুলেই দিলাম দৌড়। ভাগ্যিস লুঙ্গির নিচে শর্টপ্যান্ট ছিল। তখন ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল ছিল না। এখন হলে দৌড় খাওয়ার সে দৃশ্য বদ পোলাপাইনের কল্যাণে এসএমএস হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ত।
সেদিন ইমন-মুমুর ৪র্থ বিবাহবার্ষিকীতে মুমুদের বাসায় প্রথম গিয়ে দৌড়ানি খাওয়ার গল্প বলা শেষে ইমন থামতেই দোস্ত রাহেল বলল, তোর তো এখনও রাতে লুঙ্গি পরে ঘুমালে সকালে লুঙ্গি খাটের তলা থেকে বের করতে হয়। আচ্ছা দোস্ত, যখন ধুতি পরা শুরু করে মিটিং-জনসভায় উপস্থিত হবি তখন তোর অবস্থা কী হবে? ধুতি সামলাবি নাকি গলাবাজি করবি? ইমন বেশ গম্ভীর স্বরে বলল, কি বলতে চাচ্ছিস? রাহেল বলল, আরে ব্যাটা এই সহজ ব্যাপার বুঝিস না। এই দেখ এখন তুই ঘর থেকে বেরোলেই একটি বিশেষ কোট পরে ঘর থেকে বের হস। কারণ, এই কোট পরে যে যত বেশি নেতাপ্রেম দেখাতে পারে সে তত বড় দেশপ্রেমিক নেতা। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। আগামীতে ধুতি পরে যে দাদাদের যত বেশি গুণকীর্তন করতে পারবে সে ততবড় দেশপ্রেমিক নেতা হওয়ার দিন আসছে। ইমন লাফিয়ে উঠে রাহেলের কলার ধরে বলল, দাদাদের দয়ায় বেঁচে আছিস আর দাদাদের বিরোধিতা করিস? বের হয়ে যা আমার বাসা থেকে।
দারোয়ান ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার আগেই মান-সম্মান নিয়ে রাহেলকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। ইমনের বাসা থেকে বেরিয়ে রাহেল ‘ওতো দেখি এখন আর মানুষ নেই পুরা দাদালীগ হয়ে গেছে’ বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করল। এই তো চারবছর আগের কথা। মুমুকে নিয়ে পালিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করার পর থাকার কোনো জায়গা না থাকায় ইমনকে নিজের রুম ছেড়ে দিয়েছিল রাহেল। ইমন পাক্কা আট মাস রাহেলের খাটে বউ নিয়ে আরাম করে ঘুমিয়েছে। রাহেল রাতে ওর বড় ভাইয়ের রুমে ফ্লোরে ঘুমাত। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে নেতা হয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ইমনের বদলে যাওয়ার অনেক কাহিনী শুনেছি। কিন্তু আজ নিজ চোখে দেখলাম। এই দেশে আজ দাদাপ্রেমী ইমনদের অভাব নেই। একটা সময় ছিল এই দেশীয় দাদাপ্রেমীদের গোপন প্রেমের ব্যাপার-স্যাপার গোপনই ছিল। কিন্তু এখন আর গোপন নেই। দাদাদের সীমান্ত হায়েনারা ফেলানীকে মেরে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখার পরও এই দেশীয় দাদাপ্রেমী দিদিরা কেউ চুপ ছিলেন, কেউ আবার ফেলানীকে দাদাদের দেশের নাগরিক বানিয়ে দিয়েছিলেন।
ডিজিটাল নেত্রী দাদাদের দেশে গিয়ে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মায়াকান্না কেটে শ্রীমতি উপাধির সঙ্গে ডিলিট স্মারক নিয়ে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই হাবিবুরকে নির্যাতনের চিত্র মিডিয়ায় চলে এসেছে। জামদানি শাড়ি, ট্রাকে ট্রাকে ইলিশ নিয়ে তিস্তার পানি না দিলেও মমতা আমাদের সীমান্ত নিয়ে অন্য একটি দেশের সীমান্তের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছে নির্লজ্জের মতো! মমতার ইতিহাস জ্ঞান, হাবিবুরকে উলঙ্গ করে গোপন অঙ্গে নির্যাতনের ভিডিও বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিদিমনি ব্যস্ত আছেন সামরিক ক্যু-এর ষড়যন্ত্র নিয়ে গলাবাজি করতে। হাবিবুরকে নির্যাতনের নগ্ন ভিডিও প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের নগ্ন দাদাপ্রেমও প্রকাশ হয়েছে। দাদাদের সীমান্ত শকুনরা থাবা মেরে এই দেশের নাগরিককে ধরে নেয়ার ঘটনায় সীমান্তে পতাকা বৈঠক হয়, কিন্তু আমাদের কুমারী মন্ত্রী বলেন, সবই মিথ্যাচার, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি! কেউ আবার সীমান্ত হায়েনাদের খুনের আগাম লাইসেন্স দিয়ে বাণী ছেড়েছেন, ‘সীমান্তে আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, আগামীতেও ঘটবে, তিলকে তাল বানিয়ে প্রচারের কোনো মানে হয় না।’
বাংলাদেশীরা নাকি বীরের জাতি, প্রতিবাদী জাতি। কিন্তু ফেলানী কিংবা হাবিবুরের ঘটনাগুলো ঘটলে বোঝা যায়, এক সময়কার বীরের জাতি প্রতিবাদী জাতি এখন গলাবাজির জাতি। দাদাদের সীমান্তে শকুনের মতো আচরণ এটাই প্রথম না। বছরের পর বছর ধরে নির্যাতন করে আসা দাদাদের হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকাদের দুঃখে এই দেশের নারীরা কাইদা-কাইট্যা চোখ-মুখ ফুলিয়ে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দেয়। হিন্দি বলাটা স্টাইল, হিন্দি না বুঝলে খ্যাত পাবলিক। এইতো সেদিন ক্লাস টেন পড়ুয়া এক মেয়ে হিন্দি না বোঝায় আমাকে ভোদাই পাবলিক উপাধি দিল! দাদাদের দেশের ফেন্সি না খেলে অনেকের ভাব আসে না। দাদাদের দেশের সিনেমা, সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের হেয়ারকাট, ড্রেসআপ নকল করে ফ্যাশনবাজ হওয়া পাবলিকরা আপনাগোরে কই, কানে হেডফোন লাগিয়ে হিন্দি গান শুনতে শুনতে দাদাদের করা নির্যাতনের ভিডিও দেখে দাদাদের গালি দেয়ার আগে নিজেদের দাদা-প্রেমের ধুতিটা সামলান; দাদাপ্রেমী নেতাদের বর্জন করেন। না হয় কইলাম, যে কপাল সে মাথা। দাদারা আঁইক্কাওয়ালা বাঁশ দিয়েই যাবে, আর আপনেরা গলাবাজি কইরাই যাইবেন।
সেদিন ইমন-মুমুর ৪র্থ বিবাহবার্ষিকীতে মুমুদের বাসায় প্রথম গিয়ে দৌড়ানি খাওয়ার গল্প বলা শেষে ইমন থামতেই দোস্ত রাহেল বলল, তোর তো এখনও রাতে লুঙ্গি পরে ঘুমালে সকালে লুঙ্গি খাটের তলা থেকে বের করতে হয়। আচ্ছা দোস্ত, যখন ধুতি পরা শুরু করে মিটিং-জনসভায় উপস্থিত হবি তখন তোর অবস্থা কী হবে? ধুতি সামলাবি নাকি গলাবাজি করবি? ইমন বেশ গম্ভীর স্বরে বলল, কি বলতে চাচ্ছিস? রাহেল বলল, আরে ব্যাটা এই সহজ ব্যাপার বুঝিস না। এই দেখ এখন তুই ঘর থেকে বেরোলেই একটি বিশেষ কোট পরে ঘর থেকে বের হস। কারণ, এই কোট পরে যে যত বেশি নেতাপ্রেম দেখাতে পারে সে তত বড় দেশপ্রেমিক নেতা। কিন্তু এখন সময় পাল্টেছে। আগামীতে ধুতি পরে যে দাদাদের যত বেশি গুণকীর্তন করতে পারবে সে ততবড় দেশপ্রেমিক নেতা হওয়ার দিন আসছে। ইমন লাফিয়ে উঠে রাহেলের কলার ধরে বলল, দাদাদের দয়ায় বেঁচে আছিস আর দাদাদের বিরোধিতা করিস? বের হয়ে যা আমার বাসা থেকে।
দারোয়ান ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়ার আগেই মান-সম্মান নিয়ে রাহেলকে নিয়ে বেরিয়ে এলাম। ইমনের বাসা থেকে বেরিয়ে রাহেল ‘ওতো দেখি এখন আর মানুষ নেই পুরা দাদালীগ হয়ে গেছে’ বলে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বাসার দিকে হাঁটা শুরু করল। এই তো চারবছর আগের কথা। মুমুকে নিয়ে পালিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে করার পর থাকার কোনো জায়গা না থাকায় ইমনকে নিজের রুম ছেড়ে দিয়েছিল রাহেল। ইমন পাক্কা আট মাস রাহেলের খাটে বউ নিয়ে আরাম করে ঘুমিয়েছে। রাহেল রাতে ওর বড় ভাইয়ের রুমে ফ্লোরে ঘুমাত। রাজনীতিতে যোগ দিয়ে নেতা হয়ে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই ইমনের বদলে যাওয়ার অনেক কাহিনী শুনেছি। কিন্তু আজ নিজ চোখে দেখলাম। এই দেশে আজ দাদাপ্রেমী ইমনদের অভাব নেই। একটা সময় ছিল এই দেশীয় দাদাপ্রেমীদের গোপন প্রেমের ব্যাপার-স্যাপার গোপনই ছিল। কিন্তু এখন আর গোপন নেই। দাদাদের সীমান্ত হায়েনারা ফেলানীকে মেরে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখার পরও এই দেশীয় দাদাপ্রেমী দিদিরা কেউ চুপ ছিলেন, কেউ আবার ফেলানীকে দাদাদের দেশের নাগরিক বানিয়ে দিয়েছিলেন।
ডিজিটাল নেত্রী দাদাদের দেশে গিয়ে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মায়াকান্না কেটে শ্রীমতি উপাধির সঙ্গে ডিলিট স্মারক নিয়ে আসার কয়েকদিনের মধ্যেই হাবিবুরকে নির্যাতনের চিত্র মিডিয়ায় চলে এসেছে। জামদানি শাড়ি, ট্রাকে ট্রাকে ইলিশ নিয়ে তিস্তার পানি না দিলেও মমতা আমাদের সীমান্ত নিয়ে অন্য একটি দেশের সীমান্তের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছে নির্লজ্জের মতো! মমতার ইতিহাস জ্ঞান, হাবিবুরকে উলঙ্গ করে গোপন অঙ্গে নির্যাতনের ভিডিও বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিদিমনি ব্যস্ত আছেন সামরিক ক্যু-এর ষড়যন্ত্র নিয়ে গলাবাজি করতে। হাবিবুরকে নির্যাতনের নগ্ন ভিডিও প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের নগ্ন দাদাপ্রেমও প্রকাশ হয়েছে। দাদাদের সীমান্ত শকুনরা থাবা মেরে এই দেশের নাগরিককে ধরে নেয়ার ঘটনায় সীমান্তে পতাকা বৈঠক হয়, কিন্তু আমাদের কুমারী মন্ত্রী বলেন, সবই মিথ্যাচার, এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি! কেউ আবার সীমান্ত হায়েনাদের খুনের আগাম লাইসেন্স দিয়ে বাণী ছেড়েছেন, ‘সীমান্তে আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে, আগামীতেও ঘটবে, তিলকে তাল বানিয়ে প্রচারের কোনো মানে হয় না।’
বাংলাদেশীরা নাকি বীরের জাতি, প্রতিবাদী জাতি। কিন্তু ফেলানী কিংবা হাবিবুরের ঘটনাগুলো ঘটলে বোঝা যায়, এক সময়কার বীরের জাতি প্রতিবাদী জাতি এখন গলাবাজির জাতি। দাদাদের সীমান্তে শকুনের মতো আচরণ এটাই প্রথম না। বছরের পর বছর ধরে নির্যাতন করে আসা দাদাদের হিন্দি সিরিয়ালের নায়িকাদের দুঃখে এই দেশের নারীরা কাইদা-কাইট্যা চোখ-মুখ ফুলিয়ে নাওয়া-খাওয়া বন্ধ করে দেয়। হিন্দি বলাটা স্টাইল, হিন্দি না বুঝলে খ্যাত পাবলিক। এইতো সেদিন ক্লাস টেন পড়ুয়া এক মেয়ে হিন্দি না বোঝায় আমাকে ভোদাই পাবলিক উপাধি দিল! দাদাদের দেশের ফেন্সি না খেলে অনেকের ভাব আসে না। দাদাদের দেশের সিনেমা, সিরিয়ালের নায়ক-নায়িকাদের হেয়ারকাট, ড্রেসআপ নকল করে ফ্যাশনবাজ হওয়া পাবলিকরা আপনাগোরে কই, কানে হেডফোন লাগিয়ে হিন্দি গান শুনতে শুনতে দাদাদের করা নির্যাতনের ভিডিও দেখে দাদাদের গালি দেয়ার আগে নিজেদের দাদা-প্রেমের ধুতিটা সামলান; দাদাপ্রেমী নেতাদের বর্জন করেন। না হয় কইলাম, যে কপাল সে মাথা। দাদারা আঁইক্কাওয়ালা বাঁশ দিয়েই যাবে, আর আপনেরা গলাবাজি কইরাই যাইবেন।
লেখক আহমেদ আরিফ,
ahmedarif2011@gmail.com
0 comments: