মহাকাশে বাংলাদেশের ন্যানো স্যাটেলাইট : বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ এর আগেই মহাকাশে যাচ্ছে বাংলাদেশের ন্যানো স্যাটেলাইট
ছোট আকৃতির কম ব্যয়ে নির্মিত স্যাটেলাইট কে ন্যানোস্যাট বলে, যা কিনা বিভিন্ন গবেষণা আর একাডেমিক কাজে গুরুত্বপুর্ন অবদান রাখে। ব্যয়বহুল কনভেনশনাল স্যাটেলাইটের তুলনায় ন্যানোস্যাট বেশ ছোট, ওজন হয় ১-১০ কেজি এবং একে বিষুবরেখার ৫০০-১৫০০ কিলোমিটার এর ভিতর স্থাপন করা যায়; যেখানে জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইটগুলো (যেমন, বঙ্গবন্ধু-১) ৩৬০০০ কিলোমিটার দূরে স্থাপন করা হয় এবং এদের উৎক্ষেপণ ও উৎপাদন ব্যয় অত্যন্ত বেশি।
যারা প্রযুক্তি সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখেন, তারা প্রায় প্রত্যেকেই জানেন যে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠাতে যাচ্ছে।
কিন্তু অনেকের কাছেই এটা অজানা যে, বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ এর আগেই মহাকাশে যাচ্ছে বাংলাদেশের ন্যানো স্যাটেলাইট। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এর সহযোগিতায় বাংলাদেশের প্রথম পদচিহ্ন অঙ্কিত হতে যাচ্ছে মহাকাশে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে, লো আর্থ অরবিটে ছোট স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এবং জাপানের কাইউশু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (KIT) এর একটা দল ন্যানোস্যাট টি আগামী বছরের মে মাসে উৎক্ষেপণ করবে বলে জানা গেছে। Japan Aerospace Exploration Agency (JAXA) and the International Space Station (ISS) এর সহযোগিতায় কাইউশু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (KIT) ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি এর সাথে উৎক্ষেপণের ব্যাপারে একটা চুক্তিসই করেছে।
ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ন্যানোস্যাট টার গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে আর অন্যদিকে কাইউশু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (KIT) এর ল্যাবরেটরি অফ স্পেসক্রাফট এনভায়রনমেন্ট ইন্টারেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ বাংলাদেশী শিক্ষার্থিদের দ্বারা ন্যানোস্যাট এর নির্মানকাজ শেষের পর্যায়ে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী মার্চের মধ্যে জাক্সা (JAXA) থেকে ISS এ ন্যানোস্যাটটি পাঠানো হবে এবং সেখান থেকে কয়েকমাসের মধ্যে সেটি LEO [low earth orbit] এ স্থাপন করা হবে।
Bangladesh space research and remote sensing organization (SPARRSO) এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন উদ্যোগ কে স্বাগত জানিয়েছেন।
এই ন্যানোস্যাটের পিছনের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অবদান হচ্ছে একজন মানুষের। তার নাম আরিফুর রহমান খান। তিনি তার পোস্ট ডক্টরাল রিসার্চের পর কাইউশু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (KIT) এর ল্যাবরেটরি অফ স্পেসক্রাফট এনভায়রনমেন্ট ইন্টারেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর এসিস্টেন্ট প্রফেসর পদে নিয়োগ পান এবং ২০১৩ সালে কাইউশু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (KIT) কে তাদের ন্যানোস্যাট প্রজেক্ট এ সাহায্য করেন। তিনিই ব্র্যাক এর এই উদ্যোগের পিছে ইনফ্লুয়েনশিয়াল ভূমিকা পালন করেন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আরিফুর রহমান খান আমেরিকার এল পাসো তে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসে ছোট স্যাটেলাইট ফ্যাসিলিটি উন্নয়নের জন্য এসিস্টেন্ট প্রফেসর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন (সহজ কথায় তারা তাকে মহাসমাদরে আমন্ত্রন জানায় দ্বায়িত্ব টা নিয়ে তাদের ধন্য করার জন্য, যেমন টা তিনি কাইউশু ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি কে ধন্য করেছিলেন)। আর ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাসের এই প্রজেক্ট এ ফান্ডিং করছে স্বয়ং National Aeronautics and Space Administration (NASA).
কি যে গর্ব লাগে এরকম এক একটা খবরে, কি বলব!!
তথ্যসুত্রঃ Daily Star and BBC
0 comments: