স্টেথস্কোপের ইতিহাস
বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারের পেছনেই রয়েছে একেকটি ইতিহাস। স্টেথস্কোপ, শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ডাক্তারদের একটি অপরিহার্য যন্ত্র। এটি ছাড়া ডাক্তারদের ডাক্তারি বিদ্যা অনেকটাই ফলানো যায় না। এই স্টেথস্কোপ আবিষ্কারের পেছনেও রয়েছে একটি তিক্ত ইতিহাস। ১৮০০ শতকে স্টেথস্কোপ আবিষ্কারের আগে, ডাক্তাররা রোগীর হƒদযন্ত্র ও ফুসফুস পরীক্ষা করার জন্য রোগীর বুক ও পিঠে নিজেদের কান পেতে শব্দ শোনার চেষ্ঠা করতেন। এতে করে মাঝে মাঝে নানা বিড়ম্বনাও দেখা দিত। তারপর একদিন একটি ঘটনার সূত্র ধরেই আবিষ্কার হয় ডাক্তারদের হাতিয়ার স্টেথস্কোপ।
থিওফিল লেনেক ছিলেন একজন ফ্রান্সের চিকিৎসক। চিকিৎসক হলেও তিনি ছিলেন লাজুক স্বভাবের, কথা বলতেন একদম কম আর মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তো তার নিজেরই হার্টবিট বেড়ে যেত। এ কারণে পারতপক্ষে তিনি মহিলা রোগী দেখতেন না। ১৮১৬ সালে একদিন লেনেক হাসপাতালে কর্মরত, হঠাৎ-ই নার্স এসে খবর দিলেন এক রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। তাই তাকে পরীক্ষা করতে হবে। নিজ দায়িত্বেই লেনেক ছুটে গেলেন কিন্তু ছুটে গিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন কারণ রোগীটি একটি তরুণী তার ওপর বিশালদেহী। রোগিনীকে পরীক্ষা করতে হলে তার বুকে-পিঠে কান পাততে হবে আর এটি লাজুক স্বভাবের লেনেকের জন্য রীতিমতো একটি বিভীষিকা। লেনেক কি করবেন বুঝতে পারছেন না, এদিকে রোগীর অবস্থাও অবনতির দিকে। হঠাৎ-ই লেনেক রোগীর রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন, নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছিল তার। বাইরে বেরুতেই দেখলেন রাস্তায় দুটি ছেলে কাঠের চোঙ আর পেরেক দিয়ে খেলছে, একজন চোঙের একপ্রান্তে কান পেতে আছে আর একজন পেরেক দিয়ে চোঙের অপরপ্রান্তে আস্তে আস্তে টোকা দিচ্ছে। বাচ্চা ছেলে দুটোর খেলাটি মনযোগ দিয়ে দেখতেই লেনেকের মনে পড়ে গেল বিজ্ঞানের সেই সূত্রÑনিরেট পদার্থের ভেতর দিয়ে শব্দ অতিক্রম করলে এর ধ্বনি-প্রতিধ্বনি শক্তি আরও বেড়ে যায়। সূত্রটি মনে আসতেই একটি মোটা কাগজের চোঙ বানিয়ে লেনেক ছুটলেন সেই বিশালদেহী রোগিনীর কাছে। কাগজের চোঙটির একপ্রান্ত রোগীর বুকে রেখে অপরপ্রান্তে নিজের কানে যখন অনায়াসেই হƒদযন্ত্রের শব্দগুলো স্পস্ট শুনতে পেলেন তখন লেনেক খুশিতে আÍহারা হয়ে উঠলেন। লেনেক এ কাগজের চোঙের অসাধারণ ক্ষমতা দেখে গবেষণা করতে লাগলেন কিভাবে এটিকে আরও কার্যকরী করা যায়। তারপর তিনি তৈরি করলেন কাঠের চোঙ এবং তা দিয়ে তিনিই প্রথম রোগী দেখা শুরু করলেন এবং এর নাম দিলেন স্টেথস্কোপ। কিন্তু এ স্টেথস্কোপের কথা শোনার পর সে সময়কার বিখ্যাত নামিদামি ডাক্তাররা লেনেকের বিরুদ্ধে কঠোর হলেন, তারা স্টেথস্কোপের অপকারিতার দোহাই দিয়ে লেনেককে একঘরে করে দিলেন। সে সময় সমসাময়িক কোন ডাক্তারই লেনেকের পাশে এসে দাঁড়ায়নি।
নিন্দুকদের তোপে লেনেক তার আবিষ্কৃত স্টেথস্কোপের উপকারিতার প্রয়োগ জীবিত অবস্থায় দেখে যেতে পারেননি। বর্তমানে সব চিকিৎসকদের শ্রদ্ধার পাত্র থিওফিল লেনেক ১৮২৫ সালে একবুক কষ্ট নিয়ে এ পৃথিবী থেকে বিদায় নেন।
0 comments: