মানব সভ্যতার ইতিহাসের গোড়ার দিকে মানুষ যখন কৃষি কাজের সূত্রপাত ঘটায় তখন একে অপরের কাছে দ্রব্য বিনিময়ের চাহিদা অনুভব করে। কেননা একেক অঞ্চ...

মুদ্রার আবিস্কার এর ইতিহাস

12:21:00 PM Mainuddin 0 Comments

http://farm1.static.flickr.com/214/464697037_bef0327ff0.jpg
 http://stephansmithfx.com/wp-content/uploads/2010/11/World-Currencies.jpg
 http://www.artmarketblog.com/wp-content/uploads/2010/08/currency.jpg

মানব সভ্যতার ইতিহাসের গোড়ার দিকে মানুষ যখন কৃষি কাজের সূত্রপাত ঘটায় তখন একে অপরের কাছে দ্রব্য বিনিময়ের চাহিদা অনুভব করে। কেননা একেক অঞ্চলে একেক ধরনের শস্য অধিক মাত্রায় উৎপাদিত হতো। যেমন কোন এক অঞ্চলে অধিক মাত্রায় ভুট্টা উৎপাদিত হতো। অন্য আরেক অঞ্চলে ধান অধিক মাত্রায় উৎপাদিত হতো। যার ফলে চাহিদার অতিরিক্ত ফসল অযথাই নষ্ট হয়ে যেত । তখন মানুষ চিন্তা করল আমাদের অতিরিক্ত ফসল যদি অন্য অঞ্চলে নিয়ে গিয়ে এর বিনিময়ে তাদের অতিরিক্ত ফসল নিয়ে আসি তাহলে আর অপচয় হয় না এবং দুই অঞ্চলের চাহিদাও সমান থাকে। আর এ ধরনের চিন্তার পর থেকেই চালু হয় দ্রব্য বিনিময় প্রথা। নির্দিষ্ট একটি বাজারে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষক তাদের উৎপাদিত অতিরিক্ত পণ্য নিয়ে আসত এবং সেখানে দ্রব্যের আদান প্রদান ঘটত।
বহুকাল ধরে এ প্রথা চলতে থাকে। কিন্তু এ প্রথায় সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধাও পরিলক্ষিত হতে থাকে। একপর্যায়ে মানুষ ভাবতে থাকে এমন কিছু কি আবিষ্কার যায়, যার সাহায্যে যখন তখন পণ্য গ্রহণ বা প্রদান করা যায়? মানুষের এ ভাবনা থেকেই তাদের চিন্তা শক্তিতে তখন চলে আসে মুদ্রার কথা। মুদ্রার আবিষ্কার হওয়ার পরই শুরু হয় ক্রয়-বিক্রয় প্রথা। শুরু হয় ব্যবসা বাণিজ্যের সম্প্রসারণ।
ব্যবসা-বাণিজ্যের উৎপত্তি হওয়ার পরপরই বিভিন্ন দেশে মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। অতীতে বিভিন্ন মাধ্যমে মুদ্রা প্রচলিত ছিল। তবে কাগজের টাকায় মুদ্রা চালু হয় প্রথম সং রাজার শাসনামলে পশ্চিম চীনের জিচুয়ান প্রদেশের হেংছুতে। তখন চীনের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন মাধ্যমের টাকার বিনিময় হতো। ১২০৬ থেকে ১৩৬৭ খ্রিস্টাব্দে চীনের য়ুন রাজার শাসনামলেও একই ধরনের মুদ্রার প্রচলন ছিল। কাগজের মুদ্রা থাকার ফলে তখনও কোন ধাতব মুদ্রা তৈরি হয়নি।
http://www.forex-trader.com/Images/World-Currencies.jpg
মধ্যযুগে জার্মানি ও বোহেমিয়ায় রুপার খনি আবিষ্কার হওয়ায় সেখানে অর্থের বিনিময় মাধ্যম হিসেবে রুপার টাকার প্রচলন ঘটে। তবে আন্তঃদেশীয় মুদ্রা হিসেবে ১২৫১ সালে ফ্লোরেন্টাইনের ফ্লোরিন ও ভেনিসিয়ান ড্র-কাই (১২৮৪) হিসেবে সোনার মুদ্রা চালু ছিল। ১৫১২ সালে বোহেমিয়ায় রুপার খনি আবিষ্কারের পরপরই সেখানে রুপার মুদ্রা চালু হয়। সেটির নাম ছিল জেয়াচিম থেলারস। এরপর জেয়াচিম বাদ দিয়ে নতুন নাম রাখা হয় শুধু থেলারস। আরও বেশ পরে থেলারস রুপান্তরিত হয়ে বাজারে আসে আধুনিক মুদ্রা ডলার। মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকায় রুপা ও সোনার খনি আবিষ্কৃত হয় ১৫ ও ১৬ শতকে। তখন সেখানে সোনা ও রুপার বিভিন্ন জিনিস তৈরি হতো। আর মুদ্রা হিসেবে চালু ছিল স্প্যানিশ মুদ্রা। ১৬৩৯ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের মুদ্রা হিসেবে চালু ছিল মিল ও কয়েন। এগুলোর চারপাশ ছিল ছাঁটা। ১৬৫০ সালে সুইডেনের মুদ্রার নাম ছিল স্লেট মানি বা চাকতি মুদ্রা। এগুলোকে তৈরি করা হতো তামার পাত কেটে। অবিশ্বাস্য হলেও এদের একেকটির ওজন ছিল ৩০ পাউন্ড বা ১৪ কেজি আর আয়তন ছিল ২৮৬৫ সেন্টিমিটার। বিশ্বের প্রথম ব্যাংক নোট চালু হয় ১৬৬১ সালে স্টকহোমের বানকোতে। অন্যদিকে স্প্যানিশ ডলারের প্রচলন ছিল ম্যাসাচুসেটসের সমুদ্রের ধারের কিছু বসতি অঞ্চলে। সময় তখন ১৬৯০ সাল। ১৬৯৪ সালে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর তারা তাদের প্রথম নোট চালু করে।
https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEglVlx4KTHPtV3nlhug1qtaPJYDWAgWiTlHcVE-TvCstZCUAUI2LRsarN67pViBQKpQ6yCM584XwIWbMsSGYYn2iq8DTumDUikVnxq-3StdTO6bgFH8SAcvtpk1KZK8dn-01OBnED5YYuG4/s1600/1+taka+coins+of+bangladeshi+currencies.jpg
প্রথম ট্রাভেলারস চেক চালু হয় ১৮৯১ সালে। এটি চালু করে আমেরিকান এক্সপ্রেস। এরই পথ ধরে প্রথম ক্রেডিট কার্ড চালু হয় ১৯০০ সালে। মুদ্রা বহনের মাধ্যম হিসেবে ধীরে ধীরে আরও অনেক কিছুর উদ্ভাবন হতে থাকে। এ সময় প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এ ব্যাপারে বেশ সাহায্য করেছে। প্রথম ডাইনারস ক্লাব কার্ড চালু হয় আমেরিকার নিউইয়র্কে। রেলফ প্লাইডারের চালুকৃত কার্ডধারী মেম্বাররা ওই কার্ডটির মাধ্যমে প্রথমদিকে নিউইয়র্কের যে কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়া-দাওয়া করতে পারত। আধুনিক মানসম্পন্ন ক্রেডিট কার্ড প্রথম চালু করে ব্যাংক অব আমেরিকা ১৯৫৮ সালে। ইন্টারনেটে ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা চালু হয় ১৯৯০ সালে।

0 comments: